কলকাতা দুর্গা পূজা ২০২৩
বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবটি হল শারদীয়া কলকাতা দুর্গা পূজা (Kolkata Durga Puja)। শরতের বাতাসে শিউলি ফুলের ঘ্রাণ দুর্গা পূজার পরিবেশকে বহন করে। আশ্বিন মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠ থেকে দশম (মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী ও বিজয়াদশমী) এই পাঁচটি দিন বাঙালির কাছে দুর্গা পূজা হিসেবে পরিচিত। মহালয়ার দিন থেকে দেবী পক্ষের সূচনা হয়।
দুর্গা পূজার মন্ত্র
ওঁ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে, শিবে, সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে, ত্র্যমবকে গৌরি, নারায়নী, নমোহস্ত তে ।।
সৃষ্টিস্থিতিবিনাশানাং, শক্তিভূতে, সনাতনী। গুনাশ্রয়ে, গুণময়ে, নারায়নি, নমোহস্ত তে ।।
Read in English– Pandal of Durga Puja in Kolkata
কলকাতা দুর্গা পূজা
কলকাতার প্রথম শারদীয়া দুর্গা পূজা
১৬১০ সালে, বড়িশার রায় চৌধুরী পরিবারে কলকাতার প্রথম দুর্গা পূজা আয়োজিত হয়েছিল। কলকাতার প্রাচীনতম দুর্গা পূজাটি বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরী বাড়ির পূজা, এবং দ্বিতীয় প্রাচীনতম দুর্গাপূজাটি হল শোভাবাজার রাজবাড়ির পূজা (১৭৫৭ সালে প্রথম শুরু হয়েছিল)।
বর্তমানে কলকাতায় প্রায় ২০০০ টি রেজিস্টার্ড সার্বজনীন দুর্গাপূজা আয়োজিত হয়। মণ্ডপ সজ্জা এবং থিম দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। পূজার দিনগুলিতে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত বন্ধ থাকে। কলকাতা শহর আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। কলকাতার দুর্গাপূজা কে পূর্ব গোলার্ধের রিও কার্নিভাল বলে অভিহিত করা হয়।
পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য
দুর্গা পূজার তারিখ / সময়সূচী ২০২৩
মহালয়া | ১৪ অক্টোবর |
ষষ্ঠী | ২০ অক্টোবর |
সপ্তমী | ২১ অক্টোবর |
অষ্টমী | ২২ অক্টোবর |
নবমী | ২৩ অক্টোবর |
দশমী | ২৪ অক্টোবর |
কুমারটুলি / কুমোরটুলি
কুমারটুলি র অর্থ হলো কুমোরের বাসস্থান। প্রায় ৩০০ বছর আগে এক দল কুমোর রা এখানে আসেন জীবিকার সন্ধানে। আজ এখানে প্রায় ১৫০ র বেশি পরিবার উৎসবে প্রতিমা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। কুমোরটুলির প্রতিটি গলিতেই রয়েছে ঠাকুর তৈরির ঘর। এই ঘরগুলোতেই সারিবদ্ধভাবে রাখা থাকে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি।
এখানে প্রায় ৫৫০ টি প্রতিমা তৈরির কর্মশালা আছে। দূর্গা পূজার সময় হাজার হাজার কারিগর কাজ করে। শিল্পী রা বাঁশ , কাদামাটির এবং যে রঙ গুলি babohar করেn সেগুলি সব ই যাতে পরিবেশ বান্ধব হয় সেদিকে খেয়াল রাখেন।
শিল্পী রা প্রতিমা তৈরির জন্য প্রথমে একটি বাঁশের ফ্রেম তৈরি করেন , তারপর খড় বেঁধে মূর্তির কাঠামো তৈরি করা হয়। তার পর চূড়ান্ত আকার দেওয়ার জন্য মাটির প্রলেপ প্রয়োগ করা হয় এবং কয়েকদিন ধরে এই মূর্তিটি রোদে শুকানোর পরে রং দেওয়া হয়। বৃষ্টির জন্য ঠাকুর তৈরিতে সমস্যা হলেও, কাজ থেমে থাকে না। দরকার মত গ্যাস বার্নার জ্বালিয়ে ভেজা মাটি শুকিয়ে নেওয়া হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, দুর্গাপূজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে – মহালায়র দিন দেবীর চোখ আঁকা হয়। এই রীতি কে দেবীর চক্ষু দান বলা হয়।
কুমারটুলি কিভাবে আসবেন
কুমোরটুলি উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এবং হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত । মূল অবস্থান বনমালী সরকার স্ট্রিট। নিকটতম মেট্রো রেলওয়ে স্টেশন হলো শোভাবাজার মেট্রো। শোভাবাজার লঞ্চ ঘাট (গঙ্গা নদীর পাশাপাশি )হয়েও আসা যায়। এখানে বলে রাখি কলকাতার ফেরি নিয়ে আর দুটি ডিটেল ভিডিও আছে দেখে নিতে পারেন ।
দুর্গা পূজার ইতিহাস
হিন্দু পুরানমতে, মহিষাসুরের অত্যাচারে দেবদেবতারা স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। মহিষাসুরের বধের জন্যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরর একত্রিত শক্তিতে জাগরিত হন দেবী দুর্গা। দশভুজা দেবী তার দিব্য শক্তির সাহায্যে অসুর কুলের বিনাশ ঘটিয়ে স্বর্গ তথা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে শান্তি স্থাপন করেছিলেন।
কলকাতা দূর্গা পূজা প্যান্ডেল সমস্ত ভিডিও দেখুন।
দুর্গাপূজার প্রচলন
শ্রীরাম চন্দ্র সীতা উদ্ধারের জন্যে আশ্বিন মাসে কালিদহ সাগরের কূলে ১০৮ টি নীল পদ্ম সংগ্রহ করে দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন।এছাড়াও মার্কণ্ডেয় পুরাণে উল্ল্যেখ যে, চৈত্র বংশের রাজা সুরথ এবং বণিক সমাধি-মেধা মুনির আশ্রমে বাসন্তী পূজার আয়োজন করেছিল।
দূর্গাপূজার রীতি
দুর্গাপূজা, বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব , প্রতি বছর বেশ কয়েকটি রীতির মধ্য দিয়ে পালিত হয়।
বোধন
দূর্গাপূজা শুরুর আগে দেবী দুর্গাকে জাগ্রত করা হয়। এই অনুষ্ঠানটি বোধন বা অকাল বোধন নামে পরিচিত। মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যাবেলায় দেবী দূর্গার বোধনের অনুষ্ঠানটি সমস্ত প্যান্ডেলেই আযোজন করা হয়।
নবপত্রিকা স্নান
দুর্গাপূজার সপ্তম দিন বা মহা সপ্তমী শুরু হয় কলা বউ (ভগবান গণেশের স্ত্রী) বা নবপত্রিকা স্নানের রীতি দিয়ে। প্রচলিত আছে যে কৃষকরা ফসলের ভাল উৎপাদনের জন্য নবপত্রিকাকে পূজা করতেন। বর্তমানে নবাপত্রিকা পূজাটি দুর্গাপূজার সাথেই অনুষ্ঠিত হয়।
দুর্গাপূজার পুষ্পাঞ্জলি
মহা অষ্টমীর সকালে পুষ্পাঞ্জলির ঐতিহ্য বাঙালির মধ্যে অত্যন্ত প্রাচীন। বাঙালি ছেলেরা পাঞ্জাবি এবং মেয়েরা শাড়ি পড়ে পুষ্পাঞ্জলি দেয়। পুরোহিত পুষ্পাঞ্জলি জন্য অনুগামীদের হাতে বেল পাতা এবং তাজা ফুল দেয়। অনুগামীরা পুরোহিতের সাথে মন্ত্রটি তিনবার পাঠ করেন এবং দেবী দুর্গার পাদদেশে সেই ফুল ও বেলপাতা টি নিবেদিত করেন।
সন্ধি পূজা
দূর্গা পূজার মহা অষ্টমী এবং মহা নবমীর সন্ধিক্ষণে সন্ধি পূজা অনুস্থিত হয়। মা দূর্গা মহিষাসুরের দুই সেনাপতি- চাঁদ ও মুন্ডকে হত্যা করতে দেবী চামুন্ডার রূপ নিয়েছিলেন। দেবী চামুন্ডার আবির্ভাবের এই সময়টিকে সন্ধি পূজা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। সন্ধি পুজোর সময় ১০৮ টি প্রদীপ জ্বালানোর রেওয়াজ রয়েছে।
ধুনুচি নাচ
ধুনুচি হল এক সাধারণ মাটির পাত্র। এতে ধূপ, শুকনো নারকেল গুঁড়ো এবং সুগন্ধযুক্ত উপাদান দিয়ে জ্বালানো হয়। নারী-পুরুষ উভয় ধুনুচি হাতে নিয়ে মা দুর্গার সামনে নৃত্য করেন। ধুনুচি নাচ মহা নবমীর সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি কলকাতার বিখ্যাত দুর্গা পূজা কমিটিগুলিতে খুব সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়।
পড়ুন :- কলকাতা জাতীয় গ্রন্থাগার
কুমারী পূজা
হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অনুসারে, নারী-শক্তিকে নেতিবাচক শক্তির ধ্বংস হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
কুমারী পূজার সূচনা
হিন্দু পুরাণ মতে, রাম রাবণকে বধ করার জন্য- দেবতাদের অনুরোধে ব্রহ্মা দেবীকে জাগরণের জন্য মর্ত তেএসেছিলেন। তিনি এক নির্জন জায়গায় এক কুমারী মেয়েকে দেখতে পেয়েছিলেন। ব্রহ্মা সেই ছোট্ট মেয়েটিকে জগৎ জননী মহামায়া বলে অভিহিত করেন। ব্রহ্মার সেই স্তবে নবজাতক দেবী রূপে জেগে উঠেন এবং দেবী রূপে পূজিত হন। তিনি দেবতাদের কাছে কথা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই থেকে কুমারী মেয়েদের দেবী হিসাবে পূজা করা হয়।
কুমারী পূজার বয়সসীমা
এক থেকে ষোল বছর বয়সের সমস্ত মেয়েকে কুমারী হিসাবে পূজা করা যায়।
রামকৃষ্ণ মিশন কুমারী পূজা
১৯০৯ সালে, দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর বেলুড় মঠে, নয়টি কুমারী মেয়েকে নিয়ে কুমারী পূজার অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল। বর্তমানে বেলুড় মঠ সহ বিভিন্ন রামকৃষ্ণ মিশনে কুমারী পূজার আয়োজিত হয়।
১৮৯৮ সালে, স্বামী বিবেকানন্দ এবং ভগিনী নিবেদিতা কাশ্মীরে ছিলেন। দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীতে তারা কাশ্মীরের একটি চার বছরের মুসলিম মেয়েকে কুমারী হিসাবে পূজা করেন।
পড়ুন :- হাওড়া কলকাতা ফেরি পরিষেবা
নবরাত্রি
নবরাত্রি একটি রাতব্যাপী হিন্দু উৎসব। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, মা দুর্গা ৯ দিনের জন্য অসুর দের সাথে লড়াই করেছিলেন। অবশেষে দশম দিনে (বিজয়া দশমী) মা দুর্গা মহিষাসুরকে বধ করে যুদ্ধে জয়ী হন। প্রতি বছর শরৎকালে, প্রথমা (মহালয়ার পরের দিন) থেকে মহা নবমী পর্যন্ত নবরাত্রি পালন করা হয়।
দেবী দুর্গা যেই নয়টি রূপে পূজিত হন, যথাক্রমে
- প্রথম দিন: মাতা শৈল পুত্রী
- দ্বিতীয় দিন: মা ব্রহ্মচারিণী
- তৃতীয় দিন: মা চন্দ্রঘন্টা
- চতুর্থ দিন: মা কুশ-মণ্ডা
- পঞ্চম দিন: মা স্কন্ধমাতা
- ষষ্ঠ দিন: মা কাত্যায়নী
- সপ্তম দিন: মা কালরাত্রি
- অষ্টম দিন: মা মহা গৌরী
- নবম দিন: মা সিদ্ধিদাত্রি
মহালয়া
আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের শেষ দিন বা অমাবস্যা কে মহালয়া বলা হয়। হিন্দু পুরান অনুসারে, এই দিন পূর্বপুরুষকে জল অর্পণ করতে হয়। ৬ অক্টোবর মহালয়া পড়েছে ।
সিঁদুর খেলা
দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর দিন বিবাহিত মহিলাদের মধ্যে সিঁদুর খেলার প্রথাটি বহু প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে। হিন্দু পুরাণ মতে, বিজয়া দশমীতে মা দুর্গা তাঁর বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাসায় ফিরে যান। এই প্রস্থানকালীন সময়ে হিন্দু বিবাহিত-মহিলারা দেবী দুর্গার কপাল এবং পায়ে সিঁদুর স্পর্শ করেন এবং মিষ্টি খাওয়ান। তারপর, সমস্ত বিবাহিত মহিলারা একে অপরের গালে, শাখা, পালা, নোয়া এবং লোহার চুড়িতে সিঁদুর স্পর্শ করেন। কলকাতা দুর্গা পূজা উদ্যোক্তারা এই উৎসব খুব ই জাকজমক ভাবে পালন করে।
পড়ুন :- মার্বেল প্যালেস কলকাতা
বাসন্তী পূজা
রাজা সুরথ এবং বণিক সমাধি- মেধা মুনির আশ্রমে মৰ্তে প্রথম দুর্গা পূজার প্রচলন করেছিলেন। বসন্ত কালে আয়োজিত হয়েছিল বলে এর অপরনাম বাসন্তী পূজা। বাসন্তী পূজা চৈত্র মাসের শুক্লা পক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
বিসর্জন
অবশেষে বিজয়া দশমীর দিন দেবী দূর্গা বাপের বাড়ি ছেড়ে কৈলাশে পথে রওনা হন। দেবী দূর্গাকে গঙ্গায় ভাসান দেওয়া হয়। ভাসানের সময় বাঙালিরা নাচ-গান হৈ হুল্ল্ড় এর সাথে মা দূর্গা কে বিদায় জানিয়ে থাকেন। এই প্রথাটি বিসর্জন নামে পরিচিত।
কিছু বিশিষ্ট কলকাতা দূর্গা পূজা প্যান্ডেল
- শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব
- আহিরীতলা সার্বজনীন দুর্গোৎসব
- বাগবাজার সার্বজনীন দুর্গোৎসব
- কুমারটুলি পার্ক
- সিমলা ব্যায়াম সমিতি
- মহম্মদ আলি পার্ক
- কলেজ স্কোয়ার
- বেহালা নতুন দল
- সুরুচি সংঘ
- ত্রিকোণ পার্ক সার্বজনীন দুর্গোৎসব
- ত্রিধারা সম্মিলনী
- যোধপুর পার্ক দুর্গা পূজা
- দেশপ্রিয় পার্ক
- বালিগঞ্জ কালচারাল এসোসিয়েশন
- সিংহী পার্ক দুর্গা পূজা
- হিন্দুস্তান ক্লাব
- বালিগঞ্জ পূর্বপল্লি
- ম্যাডক্স স্কোয়ার
- চেতলা অগ্রণী ক্লাব
- সমাজ সেবী সংঘ
আমি যেভাবে দূর্গা পুজো ঘুরি
ভোর তিনটে ৩.৩০ থেকে আমার দূর্গা পূজা ঘোরা শুরু হয়।আমার লিস্ট এর মধ্যে পরে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে, মো: আলী পার্কে, চালতা বাগান , হাতিবাগান সার্বজনীন , নলিন সরকার স্ট্রিট , কুমারটুলি , টালা ইত্যাদি। আর সাউথ এ ঘুরি মুদিয়ালী , শিব মন্দির , ৬৬ পল্লী , চেতলা অগ্রণী, ত্রিধারা ,বোসপুকুর ইত্যাদি ।