মার্বেল প্যালেস কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ | সাথে আরো ৭ টি জায়গা

আমি মার্বেল প্যালেস ঘুরতে গিয়ে আরো ও ৬ টি জায়গা দেখেছি আর শেষ এ একটি বোনাস প্লেস ও আছে । মার্বেল প্যালেস কলকাতা থেকে এই জায়গাগুলি হেঁটেই দেখা যায়। আসুন দেখা যাক আমি কোথায় কোথায় গেলাম ।

  • মার্বেল প্যালেস
  • জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি
  • মার্বেল মূর্তির মার্কেট
  • বৈকুন্ঠনাথ টেম্পল
  • জোড়াসাঁকো রাজবাড়ি
  • রামকৃষ্ণ মিশন, স্বামী বিবেকানন্দ এর বাড়ি
  • রাম মন্দির
  • পরেশনাথ জৈন টেম্পল

Read in English: – Visit 5 Places Near Marble Palace In Kolkata (North)

মার্বেল প্যালেস
মার্বেল প্যালেস

1. রাম মন্দির

আমি আমার যাত্রা শুরু করি মহাত্মা গান্ধীর রোড মেট্রো স্টেশন থেকে। এখান থেকে মহাজাতি সদন এর দিকে হাঁটলে আমরা প্রথমেই পাবো রাম মন্দির। ১৯৪১ সালে শেঠ সুরজ মল্ল জালান স্মরণে রাম মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মন্দিরের ভিতরের দেয়ালে শ্রী রাম এর জীবনী খোদাই করা আছে। মহাজাতি সদন বা মহাত্মা গান্ধী রোড মেট্রো স্টেশন থেকে রাম মন্দির ২ মিনিট হাঁটা পথ । মন্দির খোলার সময় সকাল ৫ টা থেকে বেলা 1২ টা এবং বিকাল ৫ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত। এই খানে ফটোগ্রাফির অনুমতি নেই।

2. মার্বেল প্যালেস কলকাতা – Marble Palace Kolkata

আমাদের এর পরের গন্তব্য স্থান হলো মার্বেল প্যালেস। রাম মন্দির দর্শনের পর রাস্তা পার হয়ে ২ মিনিট হাঁটলেই মার্বেল প্যালেস দেখতে পাবেন। রাজা রাজেন্দ্র মল্লিক ১৮৩৫খ্রিস্টাব্দে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছিলেন।বর্তমানে এই প্যালেস টি মিউজিয়াম এ পরিণত করা হয়েছে ।

মার্বেল প্যালেস কোলকাতা ও আরো ৬ টি জায়গা

এই জাদুঘরটি শুধুমাত্র রাজেন্দ্র মল্লিক বাহাদুরের ব্যক্তিগত সংগ্রহের সমস্ত জিনিস দিয়ে নির্মিত হয়েছে। পুরানো কলকাতায় অবস্থিত এটি একটি অত্যাশ্চর্য প্রাসাদ। সমগ্র প্রাসাদ মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং প্যালেস এর ভিতরে অসংখ মার্বেল এবং ব্রোঞ্জ এর মূর্তি দিয়ে সাজানো। তিনি ১৮০০ এর শতকের দেশি বিদেশি অনেক আসবাবপত্র, ঘড়ি, আয়না, ঝাড়বাতি, পেইন্টিংএবং আরো অনেক কিছু সংগ্রহ করেছিলেন। সেই সমস্ত জিনিস দিয়েই মার্বেল প্যালেস সাজানো আছে।

এই মার্বেল প্রাসাদ এলাকার ভিতরে রাজেন্দ্র মল্লিক ১৮৫৬ সালে একটি চিড়িয়াখানা প্রতিষ্ঠিত করেন। এই চিড়িয়াখানাটি সম্ভবত ভারতবর্ষের প্রথম চিড়িয়াখানা। বর্তমান এ এখানে কিছু পাখি এবং হরিণ বিদ্যমান। প্রাসাদের ভিতর টা ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য গাইড আছে। তার জন্য কোনো পয়সা লাগে না। প্রাসাদ ভিতরে ফটোগ্রাফি নিষিদ্ধ। মার্বেল প্যালেস এর কোন প্রবেশমূল্য নেই। তবে আপনাকে পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন বিভাগের সরকার থেকে অনুমতি নিতে হবে। তারা এই প্রাসাদ প্রবেশ জন্য একটি অনুমোদন চিঠি বানিয়ে দেন সেটি দেখলেই আপনি প্যালেস টি দেখতে পাবেন। চিঠি বানাতে গেলে আপনার জাতীয় আইডি প্রমাণ আনতে ভুলবেন না।

ঠিকানা

পর্যটন বিভাগ পশ্চিমবঙ্গ সরকার

২, ব্র্যাবর্ন রোড, চতুর্থ তলা,কলকাতা – ৭০০০০১

কাছাকাছি – টি বোর্ড

ফোন – 033-2225 4723/4724/4725; 2225 4565

মার্বেল প্যালেস সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।মার্বেল প্যালেস সোমবার এবং বৃহস্পতিবার বন্ধ।

পড়ুন :-

3. জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি

এরপর আমাদের গন্তব্যস্থল হলো জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি। জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি মার্বেল প্যালেস থেকে ২ মিনিট এর হাঁটা পথ। জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জন্য বিখ্যাত। এই বাড়ি টিকে এখন একটি যাদুঘর করে ফেলা হয়েছে। ঠাকুর বাড়ির প্রথমাংশে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা আছে। এখানে এন্ট্রি ফি ২0 টাকা এবং ক্যামেরা চার্জ 50 টাকা। কিন্তু জাদুঘর প্রাঙ্গনে ফোটোগ্রাফি অনুমতি দেওয়া হয় না।

জোড়াসাঁকো ঠাকুর

4. মার্বেল এর মূর্তি মার্কেট

এর পরে জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে গনেশ টাকিস দিকে রাস্তা পার হলেই আপনি দেখতে পাবেন থরে থরে সাজানো মার্বেল এর মূর্তি সব রকম সাইজ এর। এখানে তৈরি এবং বিক্রি দুই হয়। এখানে পাথরের মূর্তি অন্যান জায়গার তুলনায় কম দামে পাওয়া যায়। এই টি কলকাতায় পাথরের মূর্তির সবচেয়ে বড় মার্কেট।

5. বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির

ওখান থেকে আমরা এগিয়ে গেলেই পাবো বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির। বৈকুণ্ঠনাথ মন্দিরটি ১৯৬০ সালে নির্মিত হয়েছিল। সমগ্র রামায়ণ মন্দির প্রবেশদ্বার এর উপর খোদাই করা আছে। এই মন্দিরে, আপনি প্রভু বৈকুণ্ঠনাথ সঙ্গে শ্রীদেবী ও ভূদেবী কে দেখতে পাবেন । এখানে নিয়মিত প্রার্থনা হয়। ভক্তরা প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যার সময় প্রার্থনা করেন । মন্দির খোলার সময় সকাল ৫:৩০ থেকে ১১ টা এবং বিকেল ৪:১৫ থেকে ৮:৪৫টা পর্যন্ত।

বৈকুণ্ঠনাথ মন্দির

6. জোড়াসাঁকো রাজবাড়ী


আমাদের পরবর্তী দর্শনীয় স্থান হলো জোড়াসাঁকো রাজবাড়ী। জোড়াসাঁকো রাজবাড়ী আর জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ি দুটি আলাদা। জোড়াসাঁকো রাজবাড়ী রায় পরিবারের অন্তর্গত। এই বাড়ি প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো। এখানে দুর্গা পূজা বিশেষ আকর্ষণ।

7. রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন

এরপর গণেশ টাকিশ ক্রসিংয়ে এসে অটো নিতে হবে বিবেকানন্দ রোড এর জন্য। এখানে আপনি রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ মিশন পাবেন। এইখানে স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি দেখতে পাবেন এবং রামকৃষ্ণ মিশন এর ভিতরে একটি জাদুঘর আছে। যেখানে নানা রকম ছবি, মডেল ইত্যদি দিয়ে স্বামী বিবেকানন্দের শৈশব এবং জীবনী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

নোট – ফটোগ্রাফি অনুমোদিত নয়।

পড়ুন:- ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত এর নাম কি?

8. পরেশনাথ জৈন টেম্পল

আপনি আপনার সফর এখানেই শেষ করতে পারেন। আর যদি আর একটু বেশি মন চায় তবে বোনাস প্লেস টি হলো পারেশনাথ জৈন টেম্পল। বিবেকানন্দ রোড থেকে হাতিবাগান আসুন এবং ওখান থেকে অটো নিয়ে গৌরী বাড়ি স্টপেজে নামুন ওখান থেকে পরেশনাথ জৈন টেম্পলে ৫ মিনিট হাঁটা পথ।

এই মন্দিরটি জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি তীর্থ স্থান ও বলা চলে। মন্দির টির নাম পরেশনাথ মন্দির হলেও প্রকৃতপক্ষেএটি শীতলানাথজি নামে উৎসর্গীকৃত। শীতলানাথ জি হলেন জৈন দের ১০ম তীর্থঙ্কর। ১৮৬৭ সালে রাউ বদ্রীদাস বাহাদুর মুকিম এই মন্দির টি নির্মাণ করেন।

পরেশনাথ জৈন টেম্পল

এই এলাকায় মোট চার (৪) মন্দির আছে। প্রধান মন্দিরটি শীতলানাথজি কে উৎসর্গ করা হয়েছে । মন্দিরের দক্ষিণে চন্দ্র প্রভুজী মন্দির আছে।
প্রধান মন্দিরের ডানদিকে যে মন্দিরটি আছে সেখানে , জৈন দাদাজী গুরু এবং কুশলজী মহারাজের পদচিহ্ন পূজা করা হয়। মন্দিরের উত্তর দিকে মহাবীর মন্দির আছে।

পরেশনাথ মন্দির এর অভ্যন্তর এ একটি সুন্দর বাগান আছে এবং পুরো মন্দির চত্বর টি গ্লাস মোজাইক, ইউরোপীয় মূর্তি,অনেকগুলি ফোয়ারা এবং চমত্কার জলাশয় দ্বারা সাজানো। জলাশয় টি তে অনেক রঙিন মাছ দেখতে পাবেন আর গেট এর বাইরে এই মাছ খাবার ও বিক্রি হয়।পরেশনাথ মন্দির টি বহুমূল্য ধাতু, সাদা মার্বেল, হীরা, রুবি, মুক্তা, প্রবাল ইত্যাদি দিয়ে সাজানো। মন্দিরের সূক্ষ্ম কারুকার্য দেখে সত্যি অবাক হতে হয়।

প্রধান মন্দিরটিতে জৈন ১০ম অবতার শীতলানাথ জির মূর্তি স্থাপিত আছে। এই মূর্তির একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে সেটি হলো এই মূর্তির কপালে একটি হীরে খচিত আছে। আর এই মূর্তির সামনে একটি ঘি এর বাতি জ্বলে, যা ১৮৬৭ সাল থেকে ক্রমাগতভাবে জ্বলছে। রাশ পূর্ণিমার দিন এখানে বড়ো অনুষ্ঠান হয় , এবং বিশাল বড়ো প্রসেশন বেরহয়।

নোট – প্রধান মন্দিরের অভ্যন্তরে ফটোগ্রাফি অনুমোদিত নয়।

পরেশনাথ মন্দির এর টাইমিং

মন্দির খোলার সময় সকাল ৬:০০ থেকে ১১.০০ টা পর্যন্ত এবং বিকেল সাড়ে৩:০০ টা থেকে সন্ধ্যা ৭:০০টা পর্যন্ত। এন্ট্রি ফী নেই।

পরেশনাথ মন্দির কি ভাবে যাবেন

আপনি পরেশনাথ মন্দির বিভিন্ন উপায়ে পৌঁছাতে পারেন। উল্টোডাঙা / শ্যামবাজার –৫ পয়েন্ট ক্রসিং / শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বাস এ করে গৌরীবাড়ী বা বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষদ স্টপেজ এ নামতে হবে , সেখানে থেকে ৫ মিনিট এর হাঁটা পথ । নিকটতম মেট্রো স্টেশন শ্যামবাজার এবং শোভাবাজার। শোভা বাজার মেট্রো স্টেশন থেকে গৌরীবাড়ির জন্য অটো পাওয়া যায়।

পরেশনাথ মন্দির কি ভাবে যাবেন
পরেশনাথ মন্দির কি ভাবে যাবেন

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।