পরেশনাথ জৈন মন্দির কলকাতা | পশ্চিমবঙ্গের প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থান

উত্তর কলকাতায় অনেক মণি মানিক্য ছড়িয়ে আছে । পরেশনাথ জৈন মন্দির তার মধ্যে অন্যতম । এই মন্দিরটি জৈন ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান ও বলা চলে। মন্দির টির নাম পরেশনাথ মন্দির হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি শীতলানাথজির নামে উৎসর্গীকৃত। শীতলানাথ জি হলেন জৈন দের ১০ম তীর্থঙ্কর। ১৮৬৭ সালে রাউ বদ্রীদাস বাহাদুর মুকিম এই মন্দির টি নির্মাণ করেন। এই মন্দির টি কলকাতার ঐতিহাসিক স্থান গুলির মধ্যে একটি। এই এলাকায় মোট চার (৪) মন্দির আছে।

পরেশনাথ মন্দির
পরেশনাথ জৈন মন্দির

পরেশনাথ জৈন মন্দির কলকাতা – Pareshnath Jain Temple Kolkata

প্রধান মন্দিরের দক্ষিণে চন্দ্র প্রভুজী মন্দির আছে। মন্দিরের উত্তর দিকে মহাবীর মন্দির আছে। প্রধান মন্দিরের ডানদিকে যে মন্দিরটি আছে সেখানে , জৈন দাদাজী গুরু এবং কুশলজী মহারাজের পদচিহ্ন পূজা করা হয়।

Read In English:Pareshnath Temple Kolkata | Jain Mandir Timings Address Location

পরেশনাথ মন্দির এর অভ্যন্তর এ একটি সুন্দর বাগান আছে এবং পুরো মন্দির চত্বর টি গ্লাস মোজাইক, ইউরোপীয় মূর্তি ,অনেকগুলি ফোয়ারা এবং চমত্কার জলাশয় দ্বারা সাজানো। জলাশয় টি তে অনেক রঙিন মাছ দেখতে পাবেন আর গেট এর বাইরে এই মাছ খাবার ও বিক্রি হয়।পরেশনাথ মন্দির টি বহুমূল্য ধাতু, সাদা মার্বেল, হীরা, রুবি, মুক্তা, প্রবাল ইত্যাদি দিয়ে সাজানো। মন্দিরের সূক্ষ্ম কারুকার্য দেখে সত্যি অবাক হতে হয়।

প্রধান মন্দিরটিতে জৈন ১০ম অবতার শীতলানাথ জির মূর্তি স্থাপিত আছে। এই মূর্তির একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে সেটি হলো এই মূর্তির কপালে একটি হীরে খচিত আছে। আর এই মূর্তির সামনে একটি ঘি এর বাতি জ্বলে, যা ১৮৬৭ সাল থেকে ক্রমাগতভাবে জ্বলছে।

নোট–প্রধান মন্দিরের অভ্যন্তরে ফটোগ্রাফি অনুমোদিত নয়। রাশ পূর্ণিমার দিন বড়ো অনুষ্ঠান হয় , এবং বিশাল বড়ো প্রসেশন বের হয়।

পরেশনাথ জৈন মন্দির কলকাতা
পরেশনাথ জৈন মন্দির কলকাতা

পরেশনাথ মন্দির এর টাইমিং


মন্দির খোলার সময় সকাল ৬.00 টা থেকে ১১.00 টা পর্যন্ত এবং বিকেল সাড়ে ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭.00 টা পর্যন্ত। এন্ট্রি ফী নেই।

পড়ুন:- মেটকাফ টাউন হল মিউজিয়াম কলকাতা

পরেশনাথ জৈন মন্দির যাবেন কি ভাবে

আপনি পরেশনাথ মন্দির বিভিন্ন উপায়ে পৌঁছাতে পারেন,

উল্টোডাঙা / শ্যামবাজার – ৫ পয়েন্ট ক্রসিং / শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বাস এ করে গৌরীবাড়ী বা বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষদ স্টপেজ এ নামতে হবে , সেখানে থেকে ৪/৫ মিনিট এর হাঁটা পথ ।
নিকটতম মেট্রো স্টেশন শ্যামবাজার এবং শোভাবাজার। শোভা বাজার মেট্রো স্টেশন থেকে গৌরীবাড়ির জন্য অটো পাওয়া যায়।

পড়ুন:- জয়দেব কেন্দুলী মেলা বীরভূম

কলকাতার দিগম্বর জৈন মন্দির

শ্রী পার্শ্বনাথ দিগম্বর জৈন উপবন মন্দির যা শ্যামবাজার এর বেলগাছিয়ার নিকটে অবস্থিত। এখানে প্রত্যেককে দেখার অনুমতি নেই। কেবলমাত্র জৈন ধর্মের লোকেরা, যে কোনও সময় পরিদর্শন করেন। জৈন ধর্মের দুটি শাখা রয়েছে এখানে একটি এবং অন্যটি স্বেতম্বর।

কলকাতায় ১৯১৪ সালে নির্মিত দিগম্বর জৈন মন্দির। জৈন ভবন কলকাতা জৈন সম্প্রদায়ের একটি পবিত্র স্থান। দিগম্বর জৈন মন্দিরে একটি উজ্জ্বল লাল মন্দির এবং প্রবেশ প্রবেশদ্বার রয়েছে, যা মন্দির প্রাঙ্গণে তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানায়। চারটি বাগান, গাছ এবং ফুল দ্বারা পরিবেষ্টিত এই মন্দিরটির প্রাকৃতিক পরিবেশে তীর্থযাত্রীরা বিশ্রাম নিতে পারেন এবং প্রকৃতিকে অনুভব করতে পারেন। তীর্থযাত্রীরা মাছের জলাশয়ে শত শত মাছ কে খাওয়াতেও পারেন।

এই জলাশয়য়ে (অহিংসার প্রতীক) গাভী এবং বাঘ এর পান করার চিহ্ন আছে , এবং মন্দির চত্বরে কয়েকটি ঝর্ণা রয়েছে। আর একটি স্তম্ভ আছে , যা সাদা মার্বেল দিয়ে তৈরি এবং জৈন মন্দিরের পাশে স্থাপন করা হয়েছে। স্তম্ভগুলি অহিংস এবং জৈন ধর্মের অন্যান্য দিকগুলিকে প্রচার করে, স্তম্ভগুলি জুড়ে ধর্মীয় শিলালিপি পাওয়া যায়। কলকাতার এই জৈন মন্দিরে ধর্মশালাও রয়েছে, অন্যান্য বিল্ডিংগুলির মধ্যে সন্ন্যাসীর বাসস্থান, মন্দির অফিসের বিল্ডিং এবং একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এর জন্য হল ঘর ও আছে।

পরেশনাথ জৈন মন্দির এর কারুকার্য জৈন মন্দির
পরেশনাথ জৈন মন্দির এর কারুকার্য

কলকাতার শ্রী দিগম্বর জৈন পরশনাথ মন্দিরের ইতিহাস

শ্রী দিগম্বর জৈন বাগওয়ান পরেশনাথ মন্দির টি কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত ও পুরাতন মন্দির। একবার এই মন্দিরটি বিখ্যাত মিঃ ব্রাউন দ্বারা সংস্কার করা হয়েছিল, যিনি 1914 সালে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের স্থপতি ছিলেন। মন্দিরটির স্থাপত্য শৈলটি প্রাচীন জৈন মন্দির এর অনুকরণে তৈরি।
1914 সালে জৈন তীর্থঙ্কর পরস্বনাথের এই মন্দিরে মূর্তি স্থাপন করেন।

তীর্থঙ্কর পরস্বনাথ 23 তম জৈন তীর্থঙ্কর (877-777 বিসি)। স্তম্ভ গুলি খাঁটি সাদা মার্বেল দিয়ে নির্মিত উচ্চতা ৮১ ফুট । শিল্প, স্থাপত্য ও সংস্কৃতির একটি জৈন সংগ্রহশালাও শীঘ্রই খুলবে।

পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য

দিগম্বর জৈন মন্দির কলকাতায় উদযাপন

প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমার পবিত্র দিবসে তীর্থঙ্কর পরস্বনাথের স্মরণে এক পবিত্র উৎসব উদযাপিত হয় এবং সারা ভারত থেকে হাজার হাজার জৈন ভক্তগণ এই উপলক্ষটি উদযাপন করতে উপস্থিত হন। প্রতিবছর একটি ঐতিহ্যবাহী বিশাল শোভাযাত্রা বের করা হয় যা ১৯০ বছর আগে শুরু হয়েছিল এবং এখনও এটি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে চলছে।

শোভাযাত্রার অধীনে, ভগবান পার্শ্বনাথের তোলা ছবিগুলি ধরা পড়ে এবং হাজার হাজার ভক্ত ভজন গেয়ে সামনে উপস্থিত হয়। এই বিশাল মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলি দিয়ে চলে , যা বহু ভক্তকে পবিত্র ঈশ্বর কে এক ঝলক দেখতে এবং তাঁর আশীর্বাদ পেতে সক্ষম করে।

জৈনদের ভারতে সর্বোচ্চ ধর্মীয় সম্প্রদায় রয়েছে এবং তাদের পাণ্ডুলিপি পাঠাগারগুলি দেশের প্রাচীনতম। জৈন ধর্ম ভারতের ধর্মীয় সংখ্যালঘু সংখ্যা ৪২.২ মিলিয়ন।

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।