হেঁটে দার্জিলিং ভ্রমণ গাইড | কোলকাতা থেকে তিন রাত চার দিন

কোলকাতা থেকে এটি আমাদের দার্জিলিং তিন রাত চার দিনের ভ্ৰমণ এর টুর প্ল্যান ছিল (Darjeeling Tour From Kolkata)। আর কোলকাতা থেকে দার্জিলিং মোট ৫ দিনের ট্যুর ছিল আমরা টাইগার হিল যাই নি আপনারা যদি টাইগার হিল যেতে চান তাহলে আরো এক্সট্রা একটা দিন লাগবে।

দার্জিলিং হল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের একটি পাহাড়ি শহর | দার্জিলিং মেল বা পদাতিকের টিকিট যদি না থাকে তাহলে কোলকাতা থেকে কোন ট্রেনের টিকিট অ্যাভেলেবল থাকে, ও ব্রেক জার্নি করে কিভাবে শিলিগুড়ি বা নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছে যাওয়া যায়।

দার্জিলিং বেড়াতে যাওয়ার জন্য সেরা দুটি টাইম হচ্ছে মার্চ থেকে মেয পর্যন্ত অর্থাৎ বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরু এই সময়টি এবং অন্যটি হচ্ছে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ শরৎকালের সময়।

How To Reach Darjeeling From Kolkata
Top 15 Places to Visit in Darjeeling

দার্জিলিং – প্রথম দিন

আমরা রাতে কোলকাতার শিয়ালদা থেকে ট্রেন ধরে জার্নি শুরু করেছিলাম ও শিলিগুড়ি হয়ে বাতাসিয়া লুপের কাছে একটি হোটেল নিয়েছিলাম প্রথম দিনটা আমাদের এই ভাবেই কেটে গিয়েছিল।

আমরা ট্রেন থেকে শিলিগুড়ি স্টেশন এ নেমেছিলাম। শিলিগুড়ি বাস স্ট্যান্ড স্টেশন এর লাগোয়া। বাস স্ট্যান্ড থেকে শেয়ার কার নেয় ২৫০ টাকা , বাস এ যাওয়াই প্ল্যান ছিল কিন্তু ট্রেন লেট করায় বাস পাই নি। ১.৩০ টার পর দার্জিলিং যাওয়ার বাস থাকে না। এখান থেকে গ্যাংটকের বাস বা গাড়ি ও পাবেন।

দার্জিলিং – দ্বিতীয় দিন

প্রথম দিন যখন আমরা দার্জিলিং পৌঁছালাম তখন এতটাই বৃষ্টি হচ্ছিল এবং চারদিক মেঘে ঢেকে গিয়েছিল মনে হয়েছিল যে দার্জিলিং ট্যুর টা হোটেলের মধ্যে বসে বৃষ্টি দেখেই কাটিয়ে দিতে হবে কিন্তু পরের দিন সকাল এ পরিষ্কার আকাশ দেখে আমরা খুব ই খুশি হয়েছিলাম, তাই sideseen করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। আমরা বাতাসিয়া লুপ এ যে হোটেলে ছিলাম সেখান থেকে এক কিলোমিটারের মতো হেঁটে চলে এলাম ডালি মনাস্ট্রি , যেহেতু নিচের দিকে নামছি তাই হাঁটতে অসুবিধা হল না।

দার্জিলিংয়ের বেশ কিছু হোটেল যাদের লোকেশন খুবই ভালো ও গাড়ি একেবারে হোটেলে দরজার সামনে চলে আসে এবং রুম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায় সেই রকম ২৫ টা হোটেলের একটা ভিডিও আছে আমার চ্যানেল এ দেখে নিতে পারেন।

25 Best Hotels in Darjeeling Near Mall Road

ডালি মনাস্ট্রি

দার্জিলিং এ ১৯৭১ সাল নাগাদ তৈরি হয়েছিল ডালি মনাস্ট্রি, এই মঠ টি তিব্বতি শৈলীতে নির্মিত এবং বৃহত্তম মঠ গুলির মধ্যে একটি। ডালি মনাস্ট্রি, সকাল সাতটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে এন্ট্রি ফী ২০ টাকা।
এবার ডালি মনাস্ট্রি থেকে বেরিয়ে আমরা একটা লোকাল গাড়ি ধরে চলে এলাম ঘুম স্টেশনের দিকে পথে, পড়ল নতুন ঘুম মনাস্ট্রি । এবার আবার কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল ।

Dali Monastery
Dali Monastery

সামটেন চোলিং বৌদ্ধ মঠ

সামটেন চোলিং Buddhist Monastery, ঘুম মনেস্ট্রি (Ghum Monastery ) নামে পরিচিত। ঘুম স্টেশন এর একদম কাছে হওয়ায় এই মনাস্ট্রি টি সবার পরিচিত। এখানে তে বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন দুর্লভ বইয়ের খুব ভালো সংরক্ষণ আছে। এই মঠটি 1875 সালের নির্মিত হয়েছিল। মঠের ভিতরে ভগবান বুদ্ধের একটি ১৫ ফুট লম্বা মূর্তি আছে। ঘুম মনেস্ট্রি টি সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যা ৬ তা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং ঢুকতে কোন এন্ট্রি ফি লাগে না।

এর পর এখান থেকে বেরিয়ে আমরা ঘুম স্টেশনের দিকে আবার চলতে শুরু করলাম এবং কিছুটা এগুলোই আমাদের ডান দিকে পরল পুরনো ঘুম মনাস্ট্রি যাওয়ার রাস্তা।

ইগা চোয়েলিং মনেস্ট্রি বা ওল্ড ঘুম মনেস্ট্রি

ইগা চোয়েলিং মনেস্ট্রি, ওল্ড ঘুম মনেস্ট্রি নামে পরিচিত ও দার্জিলিংয়ের প্রাচীনতম বৌদ্ধ মঠ গুলোর মধ্যে একটি, এটি ১৮৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল।

এই মনেস্ট্রি র মূল আকর্ষণের জিনিসটি হল ভগবান বুদ্ধের ১৫ ফুটের একটি মূর্তি। যা দার্জিলিঙে র প্রাচীনতম বুদ্ধের মূর্তি গুলির মধ্যে একটি। এই মূর্তি টি তিব্বত থেকে আনা মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল এবং বুদ্ধের মূর্তির সামনে দুটি বিশাল তেলের প্রদীপ রয়েছে যা সারা বছর জ্বলতে থাকে।

ওল্ড ঘুম মনেস্ট্রি সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং এখানে ঢুকতে কোন এন্ট্রি ফি লাগে না। এই মনেস্ট্রি টি ঘুম রেলওয়ে স্টেশন ও নিউ ঘুম মনেস্ট্রি র মাঝে অবস্থিত।

darjeeling tour from kolkata
Darjeeling tour from Kolkata

ঘুম রেলওয়ে স্টেশন

পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ঘুম রেলওয়ে স্টেশনটি ভারতের সর্বোচ্চ রেলওয়ে স্টেশন। এটি ২২৫৮ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এবং বিশ্বে ১৪ নম্বর উচ্চতম রেলওয়ে স্টেশন । দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ের কাজ শুরু হয় ১৮৭৯ সালে এবং ১৮৮১ সাল থেকেই ঘুম রেলওয়ে স্টেশনে টয় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে টয় ট্রেনটি, ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের সম্মানও পেয়েছে।

এখন দার্জিলিং থেকে ঘুম টয় ট্রেন এ কি ভাবে আসবেন টাইমিং ভাড়া ইত্যাদি সমস্ত ইনফরমেশন জানার জন্য আমার টয় ট্রেনের উপর ভিডিওটি দেখতে পারেন।

Ghum railway station
Ghum railway station

দার্জিলিঙ স্টেশন ও টয় ট্রেন

এবার ঘুম স্টেশন থেকে বেরিয়ে আবার একটা লোকাল গাড়িতে করে চলে এলাম দার্জিলিঙে স্টেশনে, যারা দার্জিলিংয়ের টয় ট্রেন চড়তে চান তারা দার্জিলিং পৌঁছে অবশ্যই আগে টয় ট্রেনটা বুক করে নেবেন কারণ এটিতে বেশ ভিড় হয়, টিকিট পাওয়া শক্ত, চেষ্টা করবেন বৃহস্পতিবার টয় ট্রেন চড়তে , কারণ দার্জিলিং এ বৃস্পতিবার অনেক কিছু ই বন্ধ থাকে।

দার্জিলিং স্টেশনের পাশে স্কুটিও ভাড়া পাওয়া যায় ৮০০ টাকা পার ডে দু হাজার টাকা জমা, আর লাইসেন্স অবশ্যই থাকতে হবে। এরপর দার্জিলিং স্টেশন থেকে আমরা গেলাম দার্জিলিং ম্যাল।

How to Book Toy Train in Darjeeling

দার্জিলিং ম্যাল বা চৌরাস্তা

দার্জিলিং ম্যাল বা চৌরাস্তা হল দার্জিলিংয়ের প্রাণ কেন্দ্র। নেহেরু রোডের উপরে অবস্থিত দার্জিলিং ম্যাল থেকে চারপাশের পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে খুবই সুন্দর লাগে । দার্জিলিং ম্যাল থেকে চারদিকে চারটি রাস্তা চলে গেছে সেই জন্য জায়গাটির নাম চৌরাস্তা ও বটে।

দার্জিলিং ম্যাল থেকে একদিকে মহাকাল মন্দিরে যাওয়া যায় আর একটি রাস্তা দিয়ে সেন্ট এন্ড্রুজ চার্চ ও অবজার্ভেটরি হিল এর রাস্তায় যাওয়া যায়। অন্য আর একটি রাস্তা চলে গেছে জাকির হোসেন রোড এর দিকে বা আস্তাবলের দিকে।

আর একটি রাস্তা চলে গেছে কেভেন্টাস বা গ্লেনারিস যে রাস্তায় পড়ে সে দিকে এই রাস্তাটি ধরে নেমে গেলে আপনাদের চকবাজার স্ট্যান্ড এ পৌঁছে যাবে। দার্জিলিং ম্যাল এ আর কোথায় কি আছে, কি পাওয়া যাচ্ছে জানার জন্য দার্জেলিং ম্যাল এর উপরে একটি বিস্তারিত ভিডিও আছে দেখতে পারেন ।
এরপর হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম এন্ড্রুজ চার্জ ও অবজারভেটরি হিলের দিকে।

Darjeeling Mall Road | Darjeeling Markets Chowrasta

সেন্ট অ্যান্ড্রু’স চার্চ

দার্জিলিং ম্যাল থেকে হাটা পথেই খুব সহজে ই পৌঁছে যেতে পারেন সেন্ট অ্যান্ড্রু’স চার্চ। অবজারভেটরি হিল যাওয়ার রাস্তা তেই এই চার্চ টি পড়ে. ম্যাল থেকে দু-তিন মিনিটের হাঁটা পথ।

সেন্ট অ্যান্ড্রু স চার্চ টি ১৮৪৩ সালে তৈরি হয়েছিল তারপর ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হলে আবার ১৮৭৩ সালে নির্মাণ করা হয়, শুধুমাত্র রবিবার দিন সকালবেলা চার্চ টি খোলা থাকে।আরেকটু হেঁটে পেয়ে গেলাম অবজারভেটরি হিল।

অবজারভেটরি হিল ভিউ পয়েন্ট

দার্জিলিং এর অবজারভেটরি হিল ভিউ পয়েন্ট হলো দার্জিলিংয়ের মনোরম জায়গা গুলির মধ্যে একটি। এখন থেকে দার্জিলিংয়ের খুব ভালো ভিউ পাওয়া যায়। এটি পাহাড়ের গা ঘেঁষে রেলিং দিয়ে ঘেরা একটি বসার জায়গা। যেখানে বসে দূরের পাহাড় উপত্যকার সমস্ত কিছু দেখতে পাওয়া যায়।

বর্তমানে এই জায়গাটিকে ঘিরে অনেকগুলি ক্যাফে রেস্টুরেন্ট ও গড়ে উঠেছে। দার্জিলিং ম্যাল থেকে অবজারভেটারি ভিউ পয়েন্ট ১০ মিনিট মত হাঁটা পথ । সুন্দর পাহাড়ি রাস্তায় হেঁটে বেড়াতে ভালো লাগবে এবং বিভিন্ন লোকেশন থেকে খুব ভালো ছবি ও তোলা যাবে।
এরপর চলে এলাম মহাকাল টেমপেলের দিকে।

মহাকাল মন্দির

দার্জিলিং ম্যাল থেকে শপিং করতে করতে খুব সহজেই মহাকাল টেম্পল যাওয়া যায়। এই সমস্ত দোকানগুলোতে খুব ভালো গার্মেন্টস পাওয়া যাচ্ছে এবং লোকাল লোকজন এই সমস্ত জিনিস বিক্রি করছে। মহাকাল টেম্পল সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত খোলা থাকে ঢোকার জন্য কোন এন্ট্রি ফি দিতে হয় না।, দার্জিলিংয়ের পাঁচটি জায়গা থেকে আমরা শপিং করেছি কোথায়, সস্তায় পাবেন, সেইসবের হদিস এই ভিডিওটিতে আছে।

আমাদের দ্বিতীয় দিন এইভাবেই শেষ হলো. আবার একটা গাড়ি ধরলাম বাতাসিয়া লুপ যাওয়ার জন্য। ৩০ টাকা করে পার হেড নিল, কোন গাড়ি আমার বাচ্চার টাকা নেয়নি।

Darjeeling Mahakal Market
Mahakal Market

দার্জিলিং – তৃতীয় দিন

তৃতীয় দিন সকালে আমরা প্রথমে চলে এলাম বাতাসিয়া লুপ এ।

বাতাসিয়া লুপ

বাতাসিয়া লুপ দার্জিলিংয়ের হিলকার্ট রোড এর উপরে অবস্থিত। ১৯৯৫ সালে এই ওয়ার মেমোরিয়ালটি তৈরি করা হয় গোর্খা সৈন্যদের শ্রদ্ধাঞ্জলি দেবার উদ্দেশ্যে। বাতাসিয়া লুপ থেকে একদিকে দার্জিলিংয়ের শহর এর দৃশ্য এবং অন্য দিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপূর্ব রূপ দেখতে পাওয়া যায়। বলা যেতে পারে এখান থেকে দার্জিলিং এর একটা থ্রি সিক্সটি ডিগ্রী ভিউ পাওয়া যায়। জায়গাটি ফুলের বাগানের দিয়ে ঘেরা এবং পুরো এরিয়া তেই টয় ট্রেনের লাইন করা আছে । তাই বাতাসিয়া লুপের উপর থেকে যখন টয়ট্রেন যায় তখন দেখতেও খুব সুন্দর লাগে।

এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটানোর পর আমরা আবার একটা শেয়ার গাড়ি ধরলাম ধরে চলে এলাম দার্জিলিং বাস স্ট্যান্ডের কাছে।

দার্জিলিং বোটানিক্যাল গার্ডেন

আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল দার্জিলিং বোটানিক্যাল গার্ডেন, টিকিট কেটে ভিতরে প্রবেশ করলাম ভেতরটা বেশ বড় আর অনেকটা রাস্তায় হাঁটতে হবে। বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে ফেরার মুখে একটি মোমো র দোকান আবিষ্কার করলাম যেখানে ৩০ টাকা আট পিস মোমো পাওয়া যাচ্ছে।
এবার দার্জিলিং বাস স্ট্যান্ড থেকে একটা লোকাল গাড়ি ধরে আমরা চলে এলাম রোপ ওয়ে এর কাছে।

darjeeling botanical garden
Darjeeling Botanical Garden

মোমো নিয়ে আমার এই ভিডিওটি দেখতে পারেন যেখানে আমি দার্জিলিং এর অনেকগুলো জায়গা থাকে মোমো টেস্ট করেছি কোথায় কেমন দাম, কেমন টেস্ট সব ডিটেলস পাবেন ওই ভিডিওটিতে।

Best Momos in Darjeeling

দার্জিলিং রোপওয়ে

দার্জিলিং এর প্যানারমিক ভিউ উপভোগ করার জন্য আপনাকে চড়তেই হবে দার্জিলিং এর রোপওয়ে, একে দার্জিলিং রঞ্জিত ভ্যালি প্যাসেঞ্জার কেবিল কার ও বলা হয়।

রঙ্গিত নদীর চারপাশের উপত্যকার অপূর্ব দৃশ্য এই ক্যাবিল কার থেকে উপভোগ করা যায়। এটি ১৯৬৮ সালে শুরু হয়েছিল এবং এটি ভারতের প্রথম কেবিল কার , আগে চা বাগানের কাজের জন্য এই সিস্টেম টি করা হয়েছিল।

এখন ১৬ টা মত কেবিল কার আছে এবং প্রত্যেকটা প্রায় ছয় জন করে বসা যায়।
এর টোটাল রাইড টাইম হচ্ছে ৪৫ মিনিট, এই রোপওয়ে টি প্রায় সাত হাজার ফুট উচ্চতা থেকে প্রায় ৪০০ ফুট উচ্চতায় নেমে যায় আর আস্তে আস্তে যত নিচের দিকে নামতে থাকে ততই দার্জিলিংয়ের পাহাড়ের ঢালে সবুজ চা বাগান , নদী, বন, জলপ্রপাত, কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়। এরপর সামান্য কিছুটা হাঁটলেই পেয়ে গেলাম তেনজিং রক।

তেনজিং রক

এখানে মূলত পাহাড়ে চড়া শেখানো হয়। এরপর আবার একটি গাড়ি ধরে আমরা চলে এলাম এচিমাই ও জু দেখতে, লেবং থেকে ফেরতগামী সব গাড়ি এই রোড ধরে দার্জিলিং ম্যাল এর দিকে যায়।এইচএমআই

হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউ ট বা এইচএমআই বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্বতারোহন প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি।

শেরপা তেনজিং নোরগে (Tenzing Norgay )এবং স্যার এডমন্ড হিলারি এভারেস্টের প্রথম সফল আহরণের স্মৃতিকে উদ্দেশ্য করেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু ১৯৫৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বিশ্বজুড়ে প্রত্যেক বছর বহু ছাত্রছাত্রী এখানে আসেন পর্বতারোহনের প্রশিক্ষণ নিতে। এন্ট্রি ফি দিয়ে ঢোকার পরে একটি মিউজিয়াম দেখতে পাবেন সেখানে বিভিন্ন পর্বতারোহনের ছবি সমস্ত জিনিসপত্র খুব ভালো ভাবে প্রদর্শিত করা হয়েছে।

হিমালয়ান পদ্মজা নাইডু জুওলজিক্যাল পার্ক

হিমালয় এর প্রাণীদের সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে ১৯৫৮ সালে হিমালয়ান পদ্মজা নাইডু জুওলজিক্যাল পার্ক টি প্রতিষ্ঠিত হয় এই চিড়িয়াখানা টি ভারতের একমাত্র বিশেষ চিড়িয়াখানা যেখানে রেড পান্ডা, স্নো লেপার্ড , তিব্বতি নেকড়ে এবং পূর্ব হিমালয়ের অন্যান্য বিভিন্ন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সংরক্ষণ এবং ব্রিডিং করানো হয়। এই পার্ক টি এইচএমআই এর ভিতরে অবস্থিত।

হ্যাপি ভ্যালিটি টি এস্টেট

এরপর আমরা আবার একটি গাড়ি ধরে হ্যাপি ভ্যালিটি টি এস্টেট এর কাছে চলে এলাম এখানে বেশিদূর নামলাম না কারণ যেহেতু আমরা হেঁটে যাতায়াত করছি তাই খুবই কষ্ট হতো উঠতে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে এখান থেকে আমরা চলে এলাম দার্জিলিং ম্যাল এ, আজ অনেকটাই হাঁটা হয়ে গেছে। এবার খানিকটা শপিং ও এইভাবে আমাদের আজকের দিনটি শেষ হলো ।

5 Best Places To Shop In Darjeeling

দার্জিলিং – চতুর্থ দিন

এটি আমাদের শেষ দিন কিন্তু আরেকটি দিন থাকলে বোধহয় আরেকটু ভালো হতো। যেহেতু শেষ দিন, তাই আমরা প্যাকিং টা করে হোটেলের রিসেপশনেই লাগেজটি রেখে দিলাম ও বললাম ফেরার পথে একেবারে নিয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাব। তাই আবার একটি গাড়ি ধরে আমরা দার্জিলিং বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছালাম।

আমাদের উদ্দেশ্য ছিল জাপানি স্ট্যাম্পেল পিস প্যাগোডা, গঙ্গা মাইয়াপার্ক আর রক গার্ডেন দেখার। কিন্তু সময় না হওয়ায় আমরা শুধুমাত্র জাপানিস টেম্পেল ও পিস প্যাগোডা দেখে ফিরে এসেছিলাম, এই দিন কিন্তু গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। এই জাপানিজ টেম্পেল আরপিস প্যাগোডার জন্য একটি ছোট গাড়ি আমাদের ৫০০ টাকা চার্জ করেছিল।

জাপানিজ টেম্পেল ও পিস প্যাগোডা

দার্জিলিং ম্যাল থেকে দশ মিনিটের দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে খুব সুন্দর একটি জাপানি মন্দির এবং পিস পোগোডা। জাপানিজ টেম্পেলটি ১৯৭২ সালে জাপানি শৈলীতে নির্মাণ করা হয়েছিল। তারপর পিস পোগোডাটি উদ্বোধন করা হয় ১৯৯২ সালে।

এই পিস প্যাগোডা তে ভগবান বুদ্ধের চারটি অবতার প্রদর্শন করা হয়েছে। এর ওপর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রেঞ্জের এবং দার্জিলিং ল্যান্ডস্কেপের দারুন দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।

জাপানিজ টেম্পেল এবং পিস পাকোড়াটি একই জায়গায় অবস্থিত। সকাল ৭:০০ টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত খোলা থাকে এবং ঢুকতে কোন এন্ট্রি লাগে না গাড়ি নিয়ে আসলে এখানে পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও আছে। ফেরার সময় চোখে পড়লো বোস ইনস্টিটিউট।

বোস ইনস্টিটিউট দার্জিলিং

দার্জিলিঙে জাপানিজ টেম্পেল এবং পিস পোগোডা যাবার রাস্তাতেই পড়ে দার্জিলিং বোস ইনস্টিটিউট। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু ১৯২০ সালে এই ভবন টি স্থাপনা করেছিলেন এবং নোবেল জয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিখ্যাত শিল্পী ও চিত্রশিল্পী নন্দলাল বোস এর পরামর্শে এই আকর্ষণীয় ভবনটি ডিজাইন করা হয়েছিল। আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস এই বাড়িটিতে 1922 সাল থেকে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত বসবাস করেছিলেন।

এরপর ফিরে এসে আমরা দার্জিলিং বাস সিন্ডিকেট থেকে টিকিট কেটে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম পথে লাগেজগুলো হোটেল থেকে তুলে নিলাম ও ট্রেন ধরে কোলকাতা ফিরে এলাম।

দার্জিলিঙে কি কি বিখ্যাত?

ডালি মনাস্ট্রি, সামটেন চোলিং বৌদ্ধ মঠ, ইগা চোয়েলিং মনেস্ট্রি বা ওল্ড ঘুম মনেস্ট্রি, ঘুম রেলওয়ে স্টেশন, দার্জিলিঙ স্টেশন ও টয় ট্রেন, দার্জিলিং ম্যাল বা চৌরাস্তা, সেন্ট অ্যান্ড্রু’স চার্চ, অবজারভেটরি হিল ভিউ পয়েন্ট, মহাকাল মন্দির, বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং বোটানিক্যাল গার্ডেন, দার্জিলিং রোপওয়ে, তেনজিং রক, হিমালয়ান পদ্মজা নাইডু জুওলজিক্যাল পার্ক, হ্যাপি ভ্যালিটি টি এস্টেট, জাপানিজ টেম্পেল ও পিস প্যাগোডা, বোস ইনস্টিটিউট দার্জিলিং ও টাইগার হিল বিখ্যাত।

হেঁটে দার্জিলিং ট্যুর এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি

আমাদের এবার প্ল্যান ছিল দার্জিলিং এর যত সাইট সিন আছে সব হেঁটে করার তাই বেশিরভাগ সাইট সিন আমরা হেঁটে করেছি ও কিছু কিছু জায়গায় লোকাল ট্রান্সপোর্টে র সাহায্য ও নিয়েছি। তাতে আমাদের ট্যুরের খরচ অনেক টাই কম হয়ে গিয়েছিল।

হেঁটে দার্জিলিং ট্যুর এর সুবিধা গুলি হচ্ছে যে গাড়ির কস্টিং অনেকটা ই কমে যায়।আপনি নিজের ইচ্ছামত ঘুরে বেড়াতে পারেন যেহেতু গাড়ি বুক করা নেই টাই তাড়া থাকে না, নিজের ইচ্ছা ও সময় মতো ঘোরা যায়, এবং প্রয়োজন মত লোকাল ট্রান্সপোর্ট এর সুবিধা গুলি ও এভেল করা যায়।

এছাড়াও প্রকৃতিকে অনেক কাছ থেকে উপলব্ধি করতে পারবেন । অনেক ছোট ছোট জিনিস এক্সপেরিয়েন্স করবেন যা গাড়িতে বেড়ালে সম্ভব নয়।
যারা ছোট গ্রুপে যাবেন চার পাঁচ জন মিলে তারা অনায়াসেই পায়ে হেঁটে দার্জিলিং ট্যুর টা করে ফেলতে পারেন, এবং সেই অভিজ্ঞতাও চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

আর অসুবিধা গুলি হলো , যদি অনেকে মিলে গ্রুপ এ যান তাহলে এই প্ল্যানিং এ উপকার হবে না ,খরচ খুব কমবে না। সঙ্গে যদি বয়স্ক বা শিশু রা থাকে তাহলেও এই টুর টি এড়িয়ে যাওয়াই ভালো, কারণ হাঁটতে হবে অনেকটাই ।

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।