৩ দিনের বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান এর গাইড

কোলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন ভ্রমণ একটি জনপ্রিয় টুর। প্রতি শনিবার ও রবিবার সোনাঝুরি হাটে কেনাকাটা করতে যান অসংখ ভ্রমণপ্রিয় মানুষ। আমি ও তাদের ই একজন তাই আমি আমার শান্তিনিকেতন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করছি। এখানকার বসন্ত উৎসব বা দোল উৎসব এবং পৌষ মেলা খুব ই জনপ্রিয় দুটি অনুষ্ঠান।

পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর বিখ্যাত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় বা কলাভবন এ স্নাতকোত্তর অনেক বিষয় পড়ানো হয়। তবে এখানে সুযোগ সহজে মেলে না।

Read:Bolpur Santiniketan Tour Plan Guide From Kolkata [Visit 20 Places]

শান্তিনিকেতন ভ্রমণ গাইড
শান্তিনিকেতন ভ্রমণ গাইড

বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ গাইড ও দর্শনীয় স্থান এর অভিজ্ঞতা

এবারের শীতে যারা পৌষ মেলা যাবেন ভাবছেন বা সপ্তাহের শেষ এ শনিবার এর হাটে যেতে চান ন্যূনতম খরচে এই পোস্ট টি তাদের জন্য। আমাদের মোট খরচ ৫১২০ টাকা , কেনাকাটা অতিরিক্ত।

এই পোস্টটি ঠিক ঘোরার পোস্ট নয়, বরং বলা যেতে পারে কোথায় থাকবেন, কি খাবেন, কিভাবে ঘুরবেন এবং কি কি করলে আপনার পকেট আর একটু বাঁচতে পারে এটি সেই সম্মন্ধে। প্রথমে ই বলে নেওয়া দরকার, যে মতামত গুলি একান্ত ব্যক্তিগত তাই কোনো ত্রুটি থাকলে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন ।

কিছু দিন আগেই দু দিন এর জন্য শান্তিনিকেতন থেকে ফিরেছি এবং আমার যে অভিজ্ঞাতা হয়েছে সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করছি । আমি বরাবর ই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে একটু পড়াশোনা করি।

কলকাতার হাওড়া বা শিয়ালদাহ রেল থেকে খুব সহজেই মাত্র ৩/৪ ঘন্টায় পৌঁছে যাওয়া যায় বোলপুর শান্তিনিকেতন।

Santiniketan Tour from Kolkata

কীভাবে কলকাতা থেকে বাসে করে শান্তিনিকেতনে বোলপুর পৌঁছাবেন ?

কলকাতা থেকে বোলপুর দূরত্ব ১৬৩ কিমি। এসপ্ল্যানেড বাস স্ট্যান্ড থেকে বোলপুর এর বাস পাওয়া যায়।

প্রথম বিকল্পটি হ’ল দুর্গাপুরের জন্য একটি বাস নিয়ে পানাগড় দার্জিলিং মোড়ে পৌঁছানো, সেখান থেকে আপনি বোলপুরের জন্য একটি বাস পাবেন। (দুর্গাপুর থেকে বোলপুরের সরাসরি বাসও পাওয়া যায়)।
২ য় বিকল্প হ’ল সিউড়ি ইলামবাজারে নেমে টোটো গাড়ি বা বাসে বোলপুর পৌঁছানো ।

কোলকাতা ফেরার জন্য তৃতীয় বিকল্পটি ভাল। রেলপথে বর্ধমান আসুন এবং বর্ধমান বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছান (স্টেশন থেকে ৫ কিলোমিটার) এবং এসপ্ল্যানেডের জন্য একটি বাস পান। এটি 2 ঘন্টা 15 মিনিটের যাত্রা। এছাড়াও ট্রেন এ করে ডাইরেক্ট ও ফিরতে পারেন

পড়ুন :- পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ গাইড

শান্তিনিকেতনের দর্শনীয় স্থান

১) গীতাঞ্জলি রেল মিউজিয়াম ২) কঙ্কালিতলা ৩) বিশ্ব বাংলা হাট ৪) প্রকৃতি ভবন ৫) আমার কুটির ৬) কোপাই নদী ৭) সৃজনী শিল্পগ্রাম ৮) বল্লভপুর ডিয়ার পার্ক ৯) বিশ্বভারতী ১০) কলা ভবন ১১) বিশ্বভারতী মিউজিয়াম ১২) খোয়াই বনের হাট।

যে জায়গা গুলি সচরাচর যাওয়া হয় না

১)কালীকাপুর রাজবাড়ী ২) ঘুড়িশা টেরাকোটা মন্দির ৩) উড ফসিল পার্ক ৪) রায়পুর রাজবাড়ী ৫) সুরুল রাজবাড়ি

কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন মোট পর্যটন খরচ

ট্রেন ভাড়া – ৩২০ টাকা
হোটেল ভাড়া – ১১৫০ টাকা
প্রথম দিন টোটো ভাড়া – ৩৫০ টাকা
দ্বিতীয় দিন টোটো ভাড়া – ৪৭০ টাকা
তৃতীয় দিন টোটো ভাড়া – ১০০০ টাকা
আমার হেন্সেলের খাবার খরচ (প্রথম দিন) – ৫৮০ টাকা
খাদ্য খরচ দ্বিতীয় দিন – ৬০০ টাকা
খাদ্যের দাম ৩ য় দিন – ৩৫০ টাকা
বিশ্বভারতী তে গাইড – ৩০০ টাকা
মোট (দুই ব্যক্তির ও একটি শিশুর জন্য, কেনাকাটা অতিরিক্ত) ৫১২০ টাকা

শান্তিনিকেতনে আমরা কিছু স্পট মিস করি যেমন হেতমপুর রাজবাড়ী, সবুজ বন বা প্ল্যান্ট মিউজিয়াম, জয়দেব কেন্দুলি, Etonda , ফুল্লরা মন্দির ইত্যাদি।

পড়ুন :- কোলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর মেলা ভ্রমণ গাইড

যেখানে খরচ বাঁচবে

  • যেকোনো টুরিস্ট স্পট এ ৪ জন গেলে সবচেয়ে বেশি খরচ বাঁচে গাড়ীভাড়াতে।
  • পুরো টুর এর জন্য টোটো না বুক করে এক এক দিন এর জন্য করুন বা একটা স্পট থেকে র একটা স্পট যাওয়ার জন্য করুন অনেক টাকা সেভ হবে।
  • বিশ্বভারতী তে গাইড ও কালিকাপুর রাজবাড়ি না গেলে (৩০০+১০০০) টোটাল হবে ৫১২০-১৩০০=৩৮২০ টাকা
  • এ ছাড়াও খাওয়া খরচ কিছুটা বাঁচতে পারে লোকাল দোকানগুলিতে খেলে।

পড়ুন :- কলকাতা দুর্গা পূজা

শান্তিনিকেতন হোটেল ভাড়া

আমাদের বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ

প্রথম দিন আমরা শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস দিয়ে সকাল ৬.৩৫ টায় যাত্রা শুরু করি। আমরা সকাল ৯:৩০ এর দিকে বোলপুর স্টেশন পৌঁছেছি।
আমার প্রথমে আমরা বোলপুর রেলস্টেশনের বিপরীতে গীতাঞ্জলি রেল যাদুঘরটি ঘুরে দেখি। শান্তিনিকেতনের দর্শনীয় স্থানগুলির জন্য এটি আমার প্রথম দেখার স্থান।

এরপরে, আমরা গীতঞ্জলি রেল মিউজিয়াম থেকে আমার কুটির পৌঁছানোর জন্য একটি টোটো বুক করলাম। পথে আমরা প্রথমে কঙ্কালীতলা মন্দির, তারপরে বিশ্ব বাংলা হাট, প্রকৃতি ভবন, এবং আমার কুটির পৌঁছে যাই, যেখানে আমরা বোলপুরে প্রথম দিন থাকি।

তারপরে, আমরা মধ্যাহ্নভোজ করলাম এবং আমার কুটির গেষ্ট হাউস শান্তিনিকেতনে বিশ্রাম নিলাম। সন্ধ্যায় আমরা আমার কুটির প্রাঙ্গণ, কোপাই নদী এবং সেখানে কিছু কেনাকাটা করি। শেষ অবধি, আমরা ফিরে এসে আবার আমার কুটির হেঁসেল এ ডিনার করলাম।

পরের দিন আমরা আমার কুটির ছেড়ে রওয়ানা দিলাম এবং শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস এ গেলাম, যেখানে আমরা একটি বাজেটের হোটেল বুক করলাম। এই যাত্রা চলাকালীন আমরা সৃজনি শিল্প গ্রাম, বল্লভপুর হরিণ পার্কটি ঘুরে হোটেলে পৌঁছেছি। টোটো ভাড়া নিয়েছিল ৩০০ টাকা।

আমরা আমাদের লাগেজ আমাদের নতুন হোটেলের ঘরে রেখে বিশ্বভারতী শান্তিনিকেতন আশ্রম, কলাভবন, বিশ্বভারতী জাদুঘর ইত্যাদির জন্য গেলাম।

এরপরে, আমরা হোটেল আয়োজনে আমাদের মধ্যাহ্নভোজটি শেষ করি। তারপরে আমরা খোয়াই বোনার হাটে গেলাম, যেমনটি প্রতি শনিবার অনুষ্ঠিত হয়। আমরা শাড়ি, পোশাক, মাটির অলঙ্কার, ধাতব গহনা, পোশাকের বিভিন্ন ধরণের কাঁথা সেলাইয়ের কাজ ইত্যাদি স্থানীয় হাতে তৈরি আইটেমগুলি কিনেছিলাম। শনিবারের হাট টি খুব জনপ্রিয়। সন্ধ্যায় আমরা বোলপুর শান্তিনিকেতনের ভ্রমণ প্রায় শেষ করায় আমরা হোটেলে ফিরে এলাম।

বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ গাইড - সোনাঝুরির হাট
বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ গাইড – সোনাঝুরির হাট

শেষ দিন আমরা বোলপুরে কিছু জায়গা পরিদর্শন করেছি, সাধারণত সেখানে পর্যটকরা ঘুরতে আসে না। প্রথমত, আমরা কালীকাপুর রাজবাড়ী পরিদর্শন করি যা প্রায় বোলপুর থেকে ৬০ কিলোমিটার। এর পরে, আমরা ঘুরিশা গ্রাম ঘুরে দেখি, যেখানে আপনি দুটি পোড়ামাটির মন্দির খুঁজে পেতে পারেন, যা বীরভূম জেলার প্রাচীনতম মন্দির। দয়া করে নোট করুন, আমরা ইলামবাজারে আমাদের প্রথম টোটো রাখি এবং ঘুরিশার জন্য অন্য একটি নিয়ে যাই। যেহেতু আমরা সন্দেহ করি যে আমাদের প্রথম টোটো গাড়িতে মাইলেজ সমস্যা হতে পারে।

এর পরে, আমরা উড ফসিল পার্কটি ঘুরে দেখি। এটি একটি সদ্য নির্মিত পর্যটন স্থান। ফেরার সময় আমরা রায়পুর রাজবাড়ী এবং সুলুল রাজবাড়ি ঘুরে দেখি। আজকের দিনে টোটোর খরচ ১০০০ টাকা।

সন্ধ্যায় আমরা কাঞ্চনজঙ্গা এক্সপ্রেস ধরে শিয়ালদহে ফিরে আসি।

আমরা শান্তিনিকেতনে কিছু পর্যটন স্পট মিস করি যেমন হেতামপুর রাজবাড়ি, সবুজ বন বা উদ্ভিদ যাদুঘর, জয়দেব কেন্দুলি, ইতোন্ডা, ফুল্লরা মন্দির ইত্যাদি।

শান্তিনিকেতন ট্যুর ম্যাপ
শান্তিনিকেতন ট্যুর ম্যাপ
শান্তিনিকেতন ট্যুর ম্যাপ ১
শান্তিনিকেতন ট্যুর ম্যাপ ১

পড়ুন:- ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত এর নাম কি?

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।