ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত এর নাম কি?

ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত হলো মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত (Bhambavli Vajrai Waterfall)। এই জলপ্রপাতের উচ্চতা ১৮৪০ ফুট (৫৬০ মিটার)। আর কুঞ্চিকল হলো বৃহত্তম জলপ্রপাত।

পড়ুন:- সমস্ত ভ্রমণ গন্তব্য গুলি

ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত এর নাম কি
ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত

ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত

মহারাষ্ট্রে বহু জলপ্রপাতের আধিক্য লক্ষ্য করা যায় কিন্তু ভাজরাই জলপ্রপাত জনপ্রিয়তার দিক থেকে তাদের সবাইকে হারিয়েছে। এই জলপ্রপাতটির উচ্চতা ১৮৪০ ফুট বা ৫৬০ মিটার হওয়ায় এটি ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত হিসাবে পরিচিত।

ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত সাতারা জেলার পশ্চিম মহারাষ্ট্রে অবস্থিত। এই জলপ্রপাতটির তিনটি ধাপ রয়েছে এবং বারো মাসই জলপ্রপাত প্রবাহিত হয়, বর্ষাকালে বেশি জল প্রবাহিত হতে দেখা যায় জলপ্রপাতে। অনেক স্থানীয় মানুষ, এছাড়াও বহু পর্যটক প্রকৃতির সাথে একান্ত হতে এবং তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে এই জলপ্রপাতটি পরিদর্শন করেন।

ভাম্বাবলি জলপ্রপাত
ভাম্বাবলি জলপ্রপাত

পড়ুন:- ৫ দিনের গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড কলকাতা থেকে

কিভাবে পৌঁছাবেন ভাম্বাবলি জলপ্রপাত

ভাজরাই জলপ্রপাতে বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে সহজেই পৌঁছানো যায়।

বিমান দ্বারা: পুনে হল নিকটতম বিমানবন্দর। তারপর জলপ্রপাত পর্যন্ত একটি গাড়ি ভাড়া করে প্রায় ৪ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

ট্রেনে: সাতারা হল নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। সেখান থেকে একটি গাড়ি ভাড়া করে এবং ১ ঘন্টা ১৫ মিনিটের মধ্যে পৌঁছানো যাবে।

সড়ক পথে: সাতারা নিকটতম শহর এবং সাতরা থেকে জলপ্রপাত ৩০ কিমি দূরে অবস্থিত। এক্ষেত্রে বাসে অথবা গাড়ি ভাড়া করে ভাজরাই জলপ্রপাত পৌঁছাতে পারেন। রাস্তাগুলি ভালভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে।

পড়ুন:- ৩ দিনের বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান এর গাইড

ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত ভাম্বাবলি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

ভাম্বাবলি জলপ্রপাত পরিদর্শনের উপযুক্ত সময় হল সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস। বর্ষাকালে ভাজরাই জলপ্রপাতের বিশাল রূপ দেখা যায়। বর্ষাকালীন আবহাওয়ায় এই স্থানের সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি পায়। যদিও সারা বছর জল প্রবাহিত হয়, এবং গ্রীষ্মকলে পর্যটক কমই আসে।  সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর বেশিরভাগ ভিড় হয় কারণ মানুষ ভাজরাই থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে কাস পাথর দেখার জন্য আসেন।

পড়ুন:- মার্বেল প্যালেস কলকাতা পশ্চিমবঙ্গ | সাথে আরো ৬ টি জায়গা

নিকটবর্তী আকর্ষণ

ভাজরাই জলপ্রপাতের কাছাকাছি অসংখ্য জায়গা আছে পরিদর্শনের জন্য।

কাস লেক

ভাজরাই জলপ্রপাত থেকে ৬ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত এবং এটি সমস্ত প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য মহারাষ্ট্রের অন্যতম সেরা স্থান। কাস লেক কাস মালভূমির একটি অংশ। ২০১২ সালে কাস মালভূমিকে ইউনেস্কোর বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং তারপর থেকে এই জায়গাটি ভ্রমণের আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এই স্পটটি বিভিন্ন প্রজাতির বন্যফুল এবং বেশ কয়েকটি প্রজাপতির আবাসস্থল। এই মালভূমি দেখার সেরা সময় হল আগস্ট এবং সেপ্টেম্বর, কারণ এই মাসগুলিতে ফুল ফোটে।

মহাবালেশ্বর

মহাবালেশ্বর সাতারা জেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা একটি পাহাড়ের স্টেশন এবং পর্যটন কেন্দ্র। এটি পশ্চিম ঘাট পর্বতমালার পরিসরে অবস্থিত। ব্রিটিশ আমল থেকে শ্রেষ্ঠ হিল স্টেশন মহাবালেশ্বর আজও বিখ্যাত।

ভাম্বাবলি ফ্লাওয়ার মালভূমি

মহারাষ্ট্রের ফুলের উপত্যকা হিসাবে বিখ্যাত, ভাম্বওয়ালি ফ্লাওয়ার মালভূমি একটি চমৎকার জায়গা যা আপনাকে বিস্মিত করবে। এটি প্রাণবন্ত রঙিন ফুলে ভরা একটি মালভূমি। এই মালভূমিতে প্রায় ১৫০ প্রজাতির ফুল দেখতে পাওয়া যায়। কারভি, অর্কিড, বলসাম, সোনকি এবং স্মিটিয়া প্রভৃতি বিখ্যাত প্রজাতির ফুল দেখা যায়। 

অন্যান্য জলপ্রপাত 

মহারাষ্ট্র অনেক জলপ্রপাত দ্বারা সমৃদ্ধ, যেমন- রাঁধা জলপ্রপাত, লিঙ্গমালা জলপ্রপাত, আমব্রেলা জলপ্রপাত, সোমেশ্বর জলপ্রপাত, কুনে জলপ্রপাত প্রভৃতি। ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাতের দক্ষিণে অবস্থিত থোসঘর জলপ্রপাত, মহারাষ্ট্রের তৃতীয় বৃহত্তম জলপ্রপাত। আশেপাশে কেলাভলি জলপ্রপাত, সান্দাভলি জলপ্রপাত, কাসানী জলপ্রপাত।

জল পর্যটন

নৌকায় ভ্রমণের জন্য কয়নার শিবসাগর, কানহের লেক, কাস হ্রদ, উর্মোদি হ্রদের মতো বাঁধ বা হ্রদ রয়েছে। ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত এই সমস্ত হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত এবং জলপ্রপাতের জল প্রবাহিত হয় সেখানে পড়ে।

দুর্গ 

ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাতের আশেপাশে বেশ কয়েকটি দুর্গ রয়েছে, যেমন রায়গড়, ভাসোটা, আজিংকতারা, সাজ্জানগড়, পাণ্ডবগড়, ভৈর্তগড়, চন্দনগড়, সদাশিবগড় ইত্যাদি।

পড়ুন:- আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিচিতি ও সমস্ত তথ্য

ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে কি কি করতে পারেন 

সাপ্তাহিক ছুটি কাটানোর  জন্য একটি অপূর্ব স্থান, ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত মহারাষ্ট্রের দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। আপনি যদি ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত দেখতে গিয়ে কি করবেন তা নিয়ে ভাবছেন, তবে এখানে সেই তালিকাটি আপনার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দেবে। 

ট্রেকিং: জলপ্রপাতের চারপাশে একটি রোমাঞ্চকর ট্রেকিং করতে পারেন।  আর ভারতের সর্বোচ্চ জলপ্রপাত এর  মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য  উপভোগ  করুন।

পিকনিক: এখানেবাচ্চাদের সাথে একটি পারিবারিক পিকনিকের জন্য বেরিয়ে পড়তে পারেন এবং অবশ্যই আপনার প্রিয় স্ন্যাকস প্যাক করতে ভুলবেন না।

রোমান্টিক ভ্রমণ: আপনি যদি একটি রোমান্টিক জায়গা খুঁজছেন যেখানে প্রিয়জনের সাথে পৌঁছে যেতে চান, তাহলে ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত একটি চমৎকার পছন্দ। সবুজে ঘেরা এই জলপ্রপাত আপনার রোমান্টিক ভ্রমণকে বিশেষ করে তুলবে। হাত ধরে জলপ্রপাতের চারপাশে ঘুরে বেড়ান অথবা বসে বসে দৃশ্য উপভোগ করুন।

ফটোগ্রাফি: ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত একটি চমকপ্রদ স্থান যেখানে আপনি আপনার ফটোগ্রাফির দক্ষতা ব্যবহার করতে পারেন। জলপ্রপাতকে ঘিরে সবুজ এবং সৌন্দর্য  আপনার ছবিগুলির মর্যাদা অনেক গুন্  বাড়িয়ে দেবে।

পাখি দেখা: যারা পাখি দেখার প্রতি অনুরাগী তাদের জন্য একটি দুর্দান্ত স্থান এই জলপ্রপাতটি। বাইনোকুলার বের করুন এবং চার পাশের  প্রাণবন্ত স্পট এবং দৃশ্য গুলি দেখার জন্য প্রস্তুত হন।

পড়ুন:-পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর

ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত দেখার সময় পর্যটকদের কিছু  সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত 

  1. প্রতিদিনই   জলপ্রপাত টি দেখতে যেতে পারেন।  সকাল ৮.০০ থেকে বিকাল ৫.০০ এর মধ্যে ভিজিট করুন।
  2. প্রবল বৃষ্টি পাতের সময় এই স্থান টি এড়িয়ে চলুন।
  3. জলপ্রপাতের কাছাকাছি এক কিলোমিটার এর মধ্যে মাংসাশী খাবার খাওয়া নিষিদ্ধ।
  4. এটি প্লাস্টিক মুক্ত অঞ্চল। প্লাস্টিকের ব্যাগ, জলের বোতল ইত্যাদি ফেলবেন না।
  5. অ্যালকোহল ব্যবহার নিষিদ্ধ।
  6. এখানে সাঁতার কাটা ও নিষিদ্ধ (জলাধার গুলি বেশ গভীর)।
  7. সবসময় সতর্ক থাকুন, কারণ সাপ, পোকামাকড়ের মতো সরীসৃপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্শ্ববর্তি  জঙ্গলে বন্য প্রাণী ও দেখা যায়।

ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাত অঞ্চলে ট্রেকিং এর জন্য সতর্কতা

  1. ট্রেকিং  করার জন্য উপযুক্ত জুতো  পরুন।
  2. পাথরের উপর দিয়ে  হাঁটার সময় সাবধানে  যেতে হবে কারণ পাথর গুলি খুব পিচ্ছিল হতে পারে।
  3. জলপ্রপাতের পাশাপাশি জলাধার গুলি বেশ গভীর।
  4. এখানে জঙ্গলের পাতা, ফুল ,ফল, মাশরুম ইত্যাদি খাবেন না. যতক্ষণ  না আপনি নিশ্চিত হন যে সেগুলি নিরাপদ। এই গুলি বিষাক্ত হতে পারে।
  5. সবসময় সতর্ক থাকুন, কারণ সাপ, পোকামাকড়ের মতো সরীসৃপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জঙ্গলে বাঘ, ভাল্লুক ইত্যাদি বন্য প্রাণী ও দেখা যায়।

ভারতের উচ্চতম জলপ্রপাত কোন নদীতে অবস্থিত?

মহারাষ্ট্রের উর্মোদি নদী থেকে ভাম্বাবলি ভাজরাই জলপ্রপাতের উৎপত্তি। জলপ্রপাতটি উর্মোদি নদীর উপর অবস্থিত, এটি উল্লম্ব শিলা থেকে সোজা নিচে পড়ে।

ভারতের জলপ্রপাতের তালিকা

দুধসাগর জলপ্রপাত

দুধসাগর জলপ্রপাত হল ভারতের গোয়া রাজ্যের মান্দোভি নদীর উপর অবস্থিত একটি চার স্তর বিশিষ্ট জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত ‘দুধের সাগর’ নামেও পরিচিত। এটি তার দর্শনীয় গতিপথের জন্য সুপরিচিত। দুধসাগর হল ভারতের পঞ্চম উচ্চতম জলপ্রপাত, যা ৩১০ মিটার উচ্চতা থেকে পতিত হয়।

নোহকালিকাই জলপ্রপাত

নোহকালিকাই জলপ্রপাত হল ভারতের সবচেয়ে উঁচু নিমজ্জিত জলপ্রপাত। এর উচ্চতা ৩৪০ মিটার।  জলপ্রপাতটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জির কাছে অবস্থিত। চেরাপুঞ্জি পৃথিবীর অন্যতম আর্দ্র স্থান।

নোহকালিকাই জলপ্রপাত চেরাপুঞ্জি
নোহকালিকাই জলপ্রপাত চেরাপুঞ্জি

কুঞ্চিকল জলপ্রপাত

ভারতের বৃহত্তম জলপ্রপাত হল কেরালার কুঞ্চিকল জলপ্রপাত, কর্ণাটকের শিমোগা-উডুপি সীমান্তের মাথিকাত্তে-হুলিকালের কাছে অবস্থিত। এই জলপ্রপাত বারাহি নদী দ্বারা গঠিত। জলপ্রপাতটি ৪৫৫ মিটার উঁচু এবং উচ্চতার দিক থেকে বিশ্বে ১১৬তম স্থান অধিকারী।

যোগ জলপ্রপাত

কর্ণাটকের শিমোগা জেলার শরাবতী উপত্যকায় শরাবতী নদী দ্বারা সৃষ্ট যোগ জলপ্রপাত। এটি ২৫৩ মিটার উচ্চতা থেকে পতিত হচ্ছে। এটিকে ভারতের দশটি উচ্চতম জলপ্রপাতের মধ্যে গণনা করা হয়।

বরকানা জলপ্রপাত

কর্ণাটকের শিমোগা জেলার আগুম্বের কাছে সীতা নদী দ্বারা গঠিত বরকানা জলপ্রপাত এবং শুধুমাত্র বর্ষাকালে দেখা যায়। এর উচ্চতা হল ২৫৯ মিটার। জলপ্রপাতটি ভারতের দশটি সর্বোচ্চ জলপ্রপাতের মধ্যে একটি। 

waterfall

ভারতের উচ্চতম বাঁধ কোনটি?

ভারতের উচ্চতম বাঁধ তেহরি বাঁধ, এর উচ্চতা ২৬০.৫ মিটার। এটি ২০০৬ সালে উত্তরাখণ্ডের গোড়োয়াল জেলায় ভাগীরথী নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে।

ভারতের উচ্চতম টাওয়ার কোনটি?

ভারতের উচ্চতম টাওয়ার হল ইন্ডিয়া টাওয়ার (৭০০মিটার)।

ভারতের উচ্চতম গিরিপথ কোনটি?

খরদুং লা হল ভারতের সর্বোচ্চ গিরিপথ। এই গিরিপথটি সমুদ্রতল থেকে ৫,৬০২ মিটার (১৮,৩৭৯ ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। খরদুংলা গিরিপথটি লাদাখের লেহ জেলাতে অবস্থিত। 

ভারতের উচ্চতম স্থান কোনটি?

কাঞ্চনজঙ্ঘা ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ এবং বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ যার উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার।

যোগ জলপ্রপাতের উচ্চতা কত?

যোগ জলপ্রপাতের উচ্চতা ২৫৩ মিটার।

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।