৫ দিনের গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড কলকাতা থেকে

কলকাতা থেকে গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্ৰমণ এই পুরো ট্রিপ টি করতে ৫ দিন সময় লেগেছিলো। আমরা মধুপুর এ ২ দিন এবং দেওঘর এ ৩ দিন ছিলাম। আমাদের টোটাল খরচ হয়েছিল ছিল ৯৪৭০ টাকা দুজনের। আমরা মধুপুর এ দুদিন ছিলাম এবং ঘুরেছিলাম রামকৃষ্ণ বিবেকান্দ মঠ যেটি বাহান্ন বিঘা তে অবস্থিত , ঘুরেছিলাম গিরিডি , উশ্রী ফলস।, পাথরল কালী বাড়ি , খান্ডলী পার্ক এবং ড্যাম। ( Read Madhupur Deoghar tour guide in English )

গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড
গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড

৫ দিনের গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড কলকাতা থেকে

কলকাতা থেকে গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড

আমার পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে মধুপুর দেওঘর ট্রিপ এর প্রথম দিন সকালবেলা মধুপুর পৌছালাম। দেওঘর থেকেও মধুপুর আসা যায়, প্রায় ৪০ কিলোমিটার রাস্তা। মধুপুর পৌঁছে আমরা দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরা রেস্ট নিয়ে বিকালে পাথরোল কালী বাড়ি র উদ্দ্যেশে রওনা দিলাম।

স্টেশন থেকে ৫ মিনিট হাঁটা পথে আমরা এলাম গান্ধী চৌক , যেখান থেকে পাথরল যাবার অটো ছাড়ে ২০ টাকা করে ভাড়া। কিন্তু আমরা যাওয়া আসার জন্য ১০০ টাকায় একটি টোটো রিজার্ভ করে নিয়েছিলাম।
স্টেশন বা গান্ধী চাওক থেকে পাথরল কালীবাড়ি পৌঁছাতে আধ ঘন্টা সময় লাগবে টোটো তে। আসুন ঘুরে দেখা যাক পাথরল কালী বাড়ি।

পড়ুন :- পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ গাইড

পাথরল কালী মন্দির

পাথরল কালী মন্দির ৩০০ বছর পুরানো। মধুপুর এ পাথরল কালীবাড়ি, ভিক্রাল কালী নামেও পরিচিতিও। মন্দির এর বাইরে থেকে পূজার সামগ্রী কিনে পুজো দেওয়া যায়। অনেক সকাল থেকেই পুজোয় দেওয়া শুরু হয়ে যায়। এখানে লোকাল মানুষ দের কাছে এই কালী বাড়ি খুব ই বিখ্যাত এবং জাগ্রত। বহু ভক্ত তাদের মনোকামনা পূরণের জন্য মানসিক করেন। এখানে এখনো প্রতিদিন বলির রীতি চালু আছে।

এই মন্দির এ মঙ্গলবার আর শনিবার খুব ভিড় হয় এবং কালী পূজার সময় প্রায় ১০ লক্ষ লোক এর সমাগম হয়। কালী পূজার আগের দিন থেকে এখানে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। কালী মা এর মূর্তি টি ছোট কষ্টি পাথর এর তৈরি ! এই মন্দির চত্বরে কালী মন্দির ছাড়া আরো অনেক দেবদেবীর মন্দির আছে।
পাথরল কালী বাড়ি থেকে স্টেশন এ ফিরলাম , চূড়া ভাজা খেতে খেতে মধুপুর এর অন্যতম আকর্ষণ যে চার্চ টি সেটিও ঘুরে নিলাম।

পাথরল কালী মন্দির

খান্ডলী ট্যুরিজম পার্ক ড্যাম

পরের দিন সকালে আমরা মধুপুর স্টেশন থেকে সকাল ৮ টায় প্যাসেঞ্জের ট্রেন ধরে গিরিডির উদ্দেশে রওনা হলাম। ট্রেন এ গিরিডি পৌঁছাতে সময় লাগে ১ ঘন্টা। গিরিডি পৌঁছে স্টেশন এর বাইরে থেকে আমরা একটা টোটো বুক করলাম ৩০০ টাকা ভাড়ায় , খান্ডলী পার্ক এবং ড্যাম এ যাবার জন্য। সময় লাগলো ৪৫ মিনিট। প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

স্টেশন থেকে কিছুটা বেরিয়ে গেলেই পারিপার্শিক দৃশ্য একদম পাল্টে যায়। রাস্তার দুধারে পাথুরে রাস্তা আর ছোট ছোট টিলা দেখতে দেখতে কখন যে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারিনি।

খান্ডলী ট্যুরিজম পার্ক ও ড্যাম

খান্ডলী ট্যুরিজম পার্ক

এখানে পৌঁছেই প্রথমে দেখতে পেলাম খান্ডলী ট্যুরিজম পার্ক। খান্ডলী পার্ক এ বাচ্চা এবং বড়োদের জন্য বিনোদন মূলক খেলার এর ব্যবস্থা করা আছে। আমরা পার্ক এ পৌঁছে অনেক লোকের সমাগম দেখতে পেলাম তার মধ্যে অধিকাংশই পিকনিক করতে এসেছে। এবং কিছুটা হেঁটে গিয়ে পেলাম খান্ডলী ড্যাম ।

পার্ক এর পশে চট জলদি খাবার জন্য কিছু ফুড ষ্টল ও রয়েছে, আর একটি ক্যান্টিন ও আছে অর্ডার দিলে খাবার পাওয়া যায়।

খান্ডলী ড্যাম হলো একটি বড় জলাধার, এক পাশে বাঁধ দেওয়া আছে। এবং জলাধারের অন্য পাশে ছোট্ট পার্ক রয়েছে। এই পার্কের পাশেই কতক গুলি উঁচু টিলা দেখতে পাবেন ।

জলাধার টি তে নামার জন্য সিঁড়ির ব্যবস্থা আছে, তবে খুব সাবধান ড্যাম খুব গভীর পা স্লিপ করলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

এখানে জলাশয়ে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা আছে । তবে জলাশয়ের মূল আকর্ষণ হল – শীত কালে পরিযায়ী পাখি দের ভিড় । প্রতি বছরই শীতের সময় হিমালয়ান বেল্ট , নর্দান এশিয়া , আফ্রিকা , অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রচুর পরিযায়ী পাখির সমাগম হয় এই ড্যাম এ।

খান্ডলী পার্ক এর মধ্যে বাচ্চাদের হরেক রকমের খেলার জিনিস আছে। পার্ক এর প্রবেশ মূল্য ১২ টাকা ! পার্ক এ ঢুকলেই প্রথমে দেখতে পাবেন। একটি খাঁচা তে কয়েকটি ময়ুর আছে।

পার্কের মধ্যে অনেক বাচ্চা খেলা করছে , এবং সারা পার্ক জুড়ে বিভিন্ন আকৃতির স্লিপ , ডিজাইনার জলের ফোয়ারা, ছোট ছোট খাঁচা তে খরগোশ , রাজ্ হাঁস ,পাখি ইত্যাদি দিয়ে পার্ক টি বেশ সুন্দর করে সাজানো।

আর খান্ডলী ড্যাম টিও আমার বিশেষ ভালো লেগেছে। বাঁধ এবং পার্ক এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বেশ ভালো।

খন্ডোলি পার্কে ১ ঘন্টা কাটানোর পর আমরা গিরিডি স্টেশনে ফিরে আসি এবং এবং উস্রি ফলস এর উদ্দেশে রওনা দিই।

পড়ুন :- কোলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর মেলা ভ্রমণ গাইড

উস্রি ফলস

আমাদের মধুপুর দেওঘর ট্রিপ এ দ্বিতীয় দিন আমরা মধুপুর থেকে গিরিধি যাবার প্ল্যান করি। গিরিডি থেকে খান্ডলী ড্যাম এবং পার্ক উস্রি ফলস ঘুরে আসা যায়। আমরা প্রথমে খান্ডলী ড্যাম এবং পার্ক যাই। তারপর ওখান থেকে গিরিডি স্টেশনে ফিরে আসি এবং একটি অটো বুক করি ৩০০ টাকা দিয়ে উশ্রী ফল্স এর উদ্দেশে।

সত্যজিৎ রায় এর অন্যতম সৃষ্টি প্রফেসর শংকুর বাড়ি ছিল এই গিরিডি তে। এছাড়াও সত্যজিৎ রায় এর অজস্র লেখনী এই ঊশ্রী ফলস এর পাশে বসেই।

গিরিধি স্টেশন থেকে উশ্রী ফলস এর দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। উশ্রী ফল্স পৌঁছাতে আধ ঘন্টা সময় লাগবে। শান্ত নদীর জল পাহাড়ি ঢালে বেয়ে তিনটি ধারায় পড়ছে যা দেখলে আবেগ এ মন ভোরে যায়। বরাকর নদীর উপনদী উশ্রী এখানে ঝরে পড়ছে ৪০ ফুট উঁচু পাহাড় থেকে। শীতকালে এখানে পিকনিক করার জন্য প্রচুর মানুষ ভিড় করেন।

উস্রি ফলস এ আধ ঘন্টা কাটানোর পর আমরা অটো তে করে ফেরে এলাম গিরিডি স্টেশন এ। ওখান থেকে মধুপুর এর ডাইরেক্ট ট্রেন ধরে ফিরে এলাম মধুপুর স্টেশন।

মধুপুর থেকে গিরিডি ট্রেন এ করে পৌঁছাতে সময় লাগে ১ ঘন্টা। আমরা সকালে মধুপুর থেকে ৮ টার সময় গিরিডি প্যাসেঞ্জার ট্রেন টি ধরেছিলাম। তারপর খান্ডলী র উস্রি ফলস দেখে ২.৩৫ এর গিরিডি মধুপুর প্যাসেঞ্জার ট্রেন টি ধরে আবার মধুপুর ফিরে এসেছিলাম ।

আমরা দেওঘর মধুপুর ৫ দিন ধরে ঘুরেছিলাম , দেখেছিলাম গিরিডি , ত্রিকূট পাহাড়ে রোপ ওয়ে চড়েছিল , বৈদ্যনাথ ধাম এবং বাসকীনাথ ধাম এ পুজো দিয়েছিলাম।

আমরা মধুপুর ঘোরা শেষে করে তৃতীয় দিন সকালবেলা মধুপুর স্টেশন থেকে লোকাল ট্রেন এ করে দেওঘরের উদ্যেশে রওনা দিলাম। এবং জসিডি স্টেশন এ নামলাম।

উস্রি ফলস

জসিডি থেকে বাসুকীনাথ ধাম

দেওঘর ঘুরতে এসে বৈদ্যনাথ ধামে পুজো দেওয়াটা যেমন জরুরি তেমন ই বাসুকীনাথ ধাম ও ঘুরে আসা উচিত।

আমাদের কাছে সময় অপর্যাপ্ত ছিল তাই মধুপুর থেকে দেওঘর এসে ক্লক রুম এ লাগেজ রেখে উঠে পড়লাম জসিডি দুমকা ট্রেন টি তে।

যেহেতু আমাদের হোটেলটি তে ২৪ ঘন্টা চেক ইন চেক এন্ড আউট ফেসিলিটি ছিল , তাই বাসুকীনাথ থেকে ফিরে বিকেল বেলা হোটেল এ চেক ইন করেছিলাম। এতে আমাদের শেষ দিনের হোটেল ভাড়াটি বেঁচে গিয়েছিলো। মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ এর তৃতীয় দিন ছিল।

বাসুকিনাথ ধাম ভ্রমণ

আমরা বাসুকিনাথ ধাম যাই দেওঘর থেকে ট্রেন এ করে। সকাল ১১.২৫ মিনিট এর ট্রেন ধরে ১ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে যাই বাসুকিনাথ ধাম স্টেশন এ।

আবার দুপুর ২.৫০ মিনিট এর ট্রেন ধরে ৪ টের সময় আমরা জসিডি স্টেশন এ ফিরে এসেছিলাম, এই ট্রেন এর জন্য রিজারভেশন টিকেট কাটতে হয় না।নরমাল প্যাসেঞ্জের ট্রেন এবং মোটামুটি ফাঁকাই থাকে। তবে শিব রাত্রি ব, শ্রাবনী মেলা বা রাম ও জানকি বিবাহ উৎসবএর সময়ে কি অবস্থা থাকে বলতে পারবো না।

বাসুকিনাথ ধাম স্টেশন থেকে বেরিয়ে অটো পাওয়া যায় উঠে পড়তে হবে। কারণ ট্রেন এর টাইম এই অটো বেশি থাকে না হলে অপেক্ষা করতে হবে।

স্টেশন থেকে অটো তে বাসুকীনাথ পৌঁছাতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় লাগে। আর ভাড়া লাগে ১৫ থেকে ২০ টাকা প্রতি জন। মন্দির এর সামনেই অটো নামিয়ে দেয়।

অন্য আর ৫ টা মন্দির এর মতো এখানেও মন্দির এর সামনে নানা ধরণের হার, চুড়ি, কানের দুল ,খেলনা, প্রসাদের দোকান ইত্যাদি পসরা সাজিয়ে বসেছে। আর এখানে দেখলাম অনেক গুলি আচারের দোকান আছে। সেখানে কি নেই আমের আচার থেকে শুরু করে বাঁশ ,কঞ্চি ,আমলকি ,আপেল সবই স্থান পেয়েছে।

এই সব দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম মন্দিরের সিংহ দ্বার এর কাছে। মন্দির এর গেট এ এর সামনে অনেক পান্ডা আছে যারা পুজো দেওয়ার জন্য পীড়া পিড়ি করছিলো কিন্তু আমি এই সব এড়িয়ে চলে গেলাম মন্দির এর ভিতরে ভিতরে একটি দোকান থেকে পূজা সামগ্রী কিনে জয় বাবা ভোলানাথ বলে ওখানকার এক পান্ডার সাথে পুজো দেওয়ার জন্য মূল মন্দির এ প্রবেশ করলাম।

মন্দির এ পুজো দেওয়া ছাড়াও বিবাহ, অন্নপ্রাশন, পৈতে ইত্যাদি ক্রিয়া কর্ম ও হয়।

এটি আমাদের মধুপুর দেওঘর ট্রিপ এর তৃতীয় দিন এবং দেওঘর এর প্রথম দিন ছিল । এর পরের দিন গুলি তে আমরা যাবো নন্দন পাহাড়। নৌলখা টেম্পলে, অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম সৎসঙ্গ , বৈদ্যনাথ ধাম ইত্যাদি।

জসিডি থেকে বাসুকীনাথ ধাম

দেওঘর এ প্রথম দিন প্রথম

যেহেতু আমরা সকালে বাসুকীনাথ ধাম চলে গিয়েছিলাম তাই বিকেলে বাসুকীনাথ ধাম থেকে জসিডি ফিরলাম , এবং ক্লক থেকে লাগেজ নিয়ে হোটেল এ চেক ইন করলাম। সন্ধেবেলা হোটেলে এই কেটে গেলো।

দেওঘর এ দ্বিতীয় দিন

আমারপরের দিন সকালে আমরা জসিডি স্টেশন থেকে একটি অটো বুক করেছিলাম 600 টাকা ভাড়ায় এবং ঘুরেছিলাম

  • নব-দুর্গা মন্দির
  • ত্রিকুট পাহাড়নন্দন পাহাড়
  • নওলোকা মন্দির
  • অনুকুল ঠাকুর সৎসঙ্গ আশ্রম

শেষে অটো টি আমাদের হোটেলে পৌঁছে দেয়।

দেওঘর এ দ্বিতীয় দিন, আমরা একটি অটো বুক করে ত্রিকূট পাহাড়ের উদ্দেশে রওনা দিলাম পথে পড়লো নব দূর্গা মন্দির। আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশন হলো ত্রিকূট পাহাড়, এখনকার প্রাইম এট্রাকশন হলো রোপওয়ে রাইড ভাড়া ১৩০ টাকা একজনের।

তবে এখানে বাঁদর এর প্রচন্ড উৎপাত , হাতে কোনো ছোট জিনিস পত্র রাখবেন না প্রয়োজনে লাঠি রাখতে পারেন ভয় দেখানোর জন্য।

ত্রিকূট পাহাড় থেকে বেরিয়ে আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থল হলো তপোবন। এখানে আবার হনুমান এর উপদ্রব, সাবধানে থাকতে হবে। পাহাড়ের উপরে একটি শিব মন্দির আছে যেটি একটু কষ্ট করেই দেখতে হবে , তপোবন এ বিখ্যাত বালানন্দ ব্রহ্মাচারী মহারাজ তপস্যা করে সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

এর পর আমরা ভিসিট করলাম নন্দন পাহাড়। প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা। সুসজ্জিত এই পাহাড়ের মাথায় একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে, যা বাচ্চা এবং বড়োদের ভালোই লাগবে। এখানে আছে একটি ভূত ঘর এর ভিতরে কি আছে সেটি বললে সাসপেন্স নষ্ট হয়ে যাবে। একটি সুন্দর একোরিয়াম আছে , যার নাম মাছ ঘর।

আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল নৌলখা টেম্পেল। বেলুড় মঠ এর আদলে নলখা টেম্পেল তৈরির খরচ হয়েছিল আনুমানিক ন লক্ষ টাকা তাই এই টেম্পেল টির নাম নৌলখা টেম্পেল। এই মন্দির টি বালানন্দ ব্রহ্মাচারী মহারাজ এর উপদেশ এ কলকাতার পাথুরিয়া ঘাট এর অধিবাসী চারুশীলা দেবী মন্দির টি তৈরি করান।

আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশন ছিল অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গ আশ্রম। এই আশ্রম টি দেওঘর এর অন্যতম আকর্ষণ এখানে আশ্রমের দীক্ষিত শিষ্য দের থাকা খাবার ব্যবস্থাও আছে , এবং বাইরের লোকেদের এই সুবিধা টিকেট এর মাধ্যমে প্রদান করা হয়। প্রতিদিন বিকালে পূজা এবং নাম গান এর জন্য এখানে প্রচুর লোকের আগমন হয়। আশ্রম সকাল ৮ টা থেকে দুপুর 12 টা এবং বিকাল ৩ তে থেকে রাট ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পড়ুন :- মেটকাফ টাউন হল মিউজিয়াম কলকাতা

দেওঘর এ তৃতীয় দিন

  • তৃতীয় এবং শেষ দিন আমরা বৈদ্যনাথ ধাম ঘুরলাম যেটি দেওঘর এর মূল আকর্ষণ। সারা ভারতবর্ষে যে ১২ টি জ্যোতির্লিঙ্গ আছে , বৈদ্যনাথ ধাম হলো নবম জ্যোতির্লিঙ্গ। এ ছাড়াও মন্দির টি সতীর ৫১ পিঠের মধ্যে একটি।
  • বিকালে আমাদের শেষ গন্তব্য ছিল রামকৃষ্ণ মিশন। এছাড়াও আপনাদের জানিয়ে রাখি বৈদ্যনাথ ধাম নামেও একটি স্টেশন হয়েছে , যেখান থেকে খুব সহজেই বৈদ্যনাথ ধাম মন্দির বা দেওঘর প্রবেশ করা যায়। দেওঘর থেকে সবশেষে বলি বাড়ির জন্য প্যাঁরা আন্তে ভুলবেন না।

বিকাল এ আমরা জসিডি স্টেশন থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিলাম। মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ এর পঞ্চম দিন ছিল।

বাবা বৈদ্যনাথ ধাম শিব মন্দির দর্শন

জসিডি স্টেশন থেকে বৈদ্যনাথ ধাম প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত আর দেওঘর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে। দেওঘর স্টেশন এর বাইরে থেকে মন্দির এ যাবার অটো, টোটো সব পাওয়া যায়। অটো বা টোটো যেখানে নামায় সেখান থেকে মন্দির পৌঁছাতে হলে একটু হেঁটে যেতে হবে ।

বাবা বৈদ্যনাথ ধাম শিব মন্দির

মন্দির এর রাস্তার দুপাশে নানা ধরণে পূজার সামগ্রীর দোকান , আর দেওঘরের বিখ্যাত প্যাঁড়ার দোকান দেখতে পাবেন। বাবা মহাদেব কে পুজো দেওয়া এবং বাড়ির জন্য এখন থেকেই প্যাঁড়া কিনে নিতে পারেন। আর আমি মনে করি কোনো একটা দোকান থেকে না কিনে দু তিনটে দোকান থেকে মিলিয়ে মিশিয়ে কিনবেন, তাহলে প্যাঁড়ার স্বাদ এবং দাম সব এ আলাদা হবে।

১৫৯৬ সালে রাজা পূরনমল লক্ষী নারায়ন ৭২ ফুট উঁচু এই মন্দির টি তৈরি করেন। বৈদ্যনাথ ধাম হলো দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ এর মধ্যে নবম জ্যোতির্লিঙ্গ। বাবা বৈদ্যনাথ ধাম এর আর একটি মাহাত্ম হলো এটি ৫১ তম সতী পিঠের মধ্যে অন্যতম। কথিত আছে এখানে সতীর হৃদয় পড়েছিল।

বাবধাম এর পুরো মন্দির চত্বর জুড়ে ২২ টি মন্দির আছে। আর মূল মন্দির এর ঠিক সামনেই আছে মাতা পার্বতী মন্দির। বলা হয় যে মহাদেবের পুজো দেয়ার পর মাতা পার্বতী মন্দির এ পুজো দিতে হয় , তবেই সেই পূজা সম্পূর্ণ হয়। এখানে নানা ধরেন ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন, বিয়ে, উপনয়ন ইত্যাদি সম্পাদিত হয়।

বৈদ্যনাথ ধাম মন্দির – পূজা ও সময়

বাবা বৈদ্যনাথ ধাম সকাল ৫.৩০ থেকে দুপুর ৩.৩০ অবধি খোলা থাকে এবং পুজো দেওয়া যায়। তারপর আবার সন্ধ্যায় ৬ টায় মন্দির এর দরজা খোলে এবং রাত ৯ টা অবধি খোলা থাকে। তবে এই সময় পুজো দেওয়া যায় না,শুধু দর্শন করা যায়। এই সময় বাবার রাজবেশ হয়। তাই এই সময় মহাদেব এর পূজা কে শৃঙ্গার পূজা বলে।

বাবার মন্দিরে পূজা দেয়ার জন্য VIP কার্ড এর ব্যবস্থা রয়েছে । এই কার্ড এর মূল্য ২৫০.০০ টাকা। মন্দির চত্বরে অনেক পুরোহিত আছে যারা কার্ড করে পূজো দেয়ার ব্যবস্থা করে দেন । এছাড়াও যেকোনো পূজা সামগ্রীর দোকান থেকে কার্ড টি সংগ্রহ করতে পারেন। তবে পুরোহিতের দক্ষিনা আলাদা করে দিতে হবে । আপনি ইচ্ছা মতো ৫১, ১০১, ১৫১ অথবা তার বেশি টাকার পুজো দিতে পারেন। ভালো থাকবেন । আপনার যাত্রা শুভ হোক ।

নন্দন পাহাড় ঝাড়খন্ড

দেওঘর সাইডসিন এর একটি পপুলার ডেস্টিনেশন হলো নন্দন পাহাড় । দেওঘর সাইড সীন করার দিন আমরা তপোবন ভিসিট করার পর নন্দন পাহাড় ভিসিট করেছিলাম। এবং এর পরে আমরা ভিসিট করবো নৌলখা টেম্পলে , ত্রিকূট পাহাড় অনুকল ঠাকুর আশ্রম ইত্যাদি। দেওঘর মধুপুর নিয়ে আমার চ্যানেল এ একটি প্লেলিস্ট আছে , দেখতে পারেন।

নন্দন পাহাড় এর এন্ট্রি ফী হলো ১০ টাকা প্রতিজন। এখানে কার পার্কিং এর ব্যাবস্থাও আছে ,চার্জ ২০ টাকা।

বৈদ্যনাথ ধাম স্টেশন থেকে ৩ কিলোমিটার দুরু অবস্থিত নন্দন পাহাড়। এখানে প্রায় ৯৫ টি সিঁড়ি আছে পাহাড়ে ওঠার জন্য। নন্দন পাহাড় এর মাথায় একটি পার্ক তৈরি করা হয়েছে, বাচ্চা এবং বড়ো সবার জন্য।

পুরান এ আছে যে, মহাদেব এর সাক্ষাৎ লাভের জন্য রাবন কৈলাশ পর্বতে বলপূর্বক শিবধামে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন। দ্বারপাল নন্দী রাবনকে বাধা দেওয়ায় রাবন তাকে হাওয়ায় ছুড়ে ফেলে দেয়। নন্দী এই পাহাড়ে এসে পড়ে। তারপর থেকে এই পাহাড়ের নাম নন্দন পাহাড় হয়।

এই পাহাড়ের উপর শিব, পার্বতী , কার্তিক , গণেশ ছাড়াও আরো অন্যান দেবদেবীর মন্দির আছে। এবং অনেক ধরণের ফোয়ারা দিয়ে পার্ক টি সাজানো হয়েছে। এখানে বাচ্চাদের চড়ার জন্য দোলনা, স্লিপ, নাগরদোলা, নৌকা, টয় ট্রেন ইত্যদি আছে। শীতকালে পিকনিক করার ব্যাবস্থাও রয়েছে । পাহাড়ের উপর অবস্থিত জলাধার হতে দারোয়া নদীর সুস্বাদু পানীয় জল দেওঘর শহরে পরিবেশিত হয়।
নন্দন পাহাড় সকাল ৬ তা থেকে সন্ধ্যা ৭ তা অবধি খোলা থাকে। তবে বিকালের পর না যাওয়াই ভালো। নন্দন পাহাড়ের টয় ট্রেন টি পুরো পাহাড় টির একচক্কর ঘোরায়, ভালোই লাগে
পার্ক এর ভিতরে কোনো খাবার ব্যবস্থা নেই, তবে পাহাড়ের নিচে অনেক ফুড ষ্টল রয়েছে। নন্দন পাহাড়ে কিছু থিম হাউস আছে যেমন ভূত ঘর, মাছলি ঘর।, এগুলি তে ঢোকার জন্য প্রবেশ মূল্য দিতে হয়।

ত্রিকুট পাহাড় দেওঘর

ত্রিকুট পাহাড় হল মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ এর অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এই পর্বত টি দেওঘর শহর থেকে ২২ কিমি দূরে অবস্থিত । এখানে আপনি ট্রেকিং, রোপওয়ে ছাড়াও বন্যজীবন ও প্রকৃতি কে খুব কাছ থেকে উপভোগ করতে পারবেন। এটি একটি খুব জনপ্রিয় পিকনিক স্পট এবং তীর্থস্থান ও বটে । ত্রিকূট পাহাড়ের চূড়ায় ত্রিকাল মহাদেব মন্দির এবং স্বামী দয়ানন্দের আশ্রম অবস্থিত। এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৪৭০ ফুট এবং প্রায় ১৫০০ ফুট প্রশস্ত।

ত্রিকূট পর্বতে আছে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, ও মহেশ্বর নামে তিনটি পাহাড় । তাই এই পাহাড় এর নাম ত্রিকূট পাহাড় । এর পাশেই দুটি ছোট পাহাড় দেখা যায় – যাকে গণেশ এবং কার্তিক পাহাড় বলা হয়। ত্রিকূট পাহাড় থেকেই ময়ূরাক্ষী নদীর উৎপত্তি।

দেওঘরের ত্রিকূট পাহাড়ের রোপওয়েটি খুব বিখ্যাত এবং অ্যাডভেঞ্চারাস ও বটে। এটি ঝাড়খণ্ডের একমাত্র রোপওয়ে পরিষেবা। স্থানীয় লোকজন এটিকে “গগন খাতোলা” নামে ডাকে। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছতে রোপওয়ে তে টাইম লাগে ১৫ থেকে ২০ মিনিট । রোপওয়ে টির একটি কেবিন ৪ জন লোক বহন করতে পারে এবং প্রায় ২৫ টি কেবিন চলাচল করে। দেওঘরের একটি চমকপ্রদ ৩৬০-ডিগ্রি ভিউ, ট্রিকুট হিলের শীর্ষ থেকে পাওয়া যায়। স্থানীয় লোকেরা পিকনিক স্পট হিসাবে ত্রিকুট পাহাড়ে আসেন । শীতের মৌসুমে অনেকে এখানে সারা দিন এর জন্য পিকনিক করেন। ত্রিকুট পাহাড়ের শীর্ষ থেকে উপত্যকার দৃশ্য দেখতে অসাধারণ লাগে ।

ত্রিকুট পাহাড় দেওঘর

ত্রিকুট হিল রোপওয়ে এর সময়

ত্রিকুট হিল এর রোপওয়ে টি খোলার সময় হল – সকাল ৮ টা
ও বন্ধের সময়টি – বিকেল চারটা
এন্ট্রি ফি – জন প্রতি ব্যক্তি ১৩০ টাকা।

বিকেল চারটার পরে পাহাড়ে কোনও পর্যটক থাকলে তাদের নামিয়ে দেওয়া হবে।

ত্রিকুট পাহাড়এর পৌরাণিক কাহিনী

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ট্রিকুটা পাহাড়ের শীর্ষে যে যে স্থান গুলি পরিদর্শন করা সে গুলি হলো

  • হনুমান চটি (এখন থেকে সব পাহাড়গুলি দেখা যায়
  • সীতা প্রদীপ
  • রাবনের পুস্পক রথ নামার স্থান
  • নারায়ণ শীলা। ( এই শিলার নিচ দিয়ে গোলে গেলে নবগ্রহের দোষ কাটে )
  • রাবনের গুহা (৭০ ফুট অন্ধকার এই গুহায় রাবন ধ্যানে বসে ছিলেন )
  • বিষ্ণু পাহাড়ে ওঠার সময় দেখতে পাবেন সুইসাইড পয়েন্ট
  • মহেশ্বর পাহাড় বা বাবার বাগান
  • এখানে অনেক বেল গাছ আছে , শ্রাবণ মাসে , শিবের ভক্তরা এই গাছগুলি থেকে পাতা নিয়ে যায় মহাদেবের পায়ে দেবার জন্য , এই কারণেই এই জায়গাটিকে “বাবার বাগান” বলা হয়।
  • ব্রহ্মা পাহাড়। এখানে ঘন জঙ্গলের জন্য কেউ ওঠে না
  • গণেশ হিল
  • অনেক ছোট ছোট জলপ্রপাত আছে, সেগুলি বর্ষায় দেখা যায়।

পাহাড়ের সমস্ত জায়গাগুলি দেখার জন্য আপনাকে অবশ্যই গাইড নিতে হবে অন্যথায় আপনি পাহাড়ের পথ হারিয়ে ফেলতে পারেন পারেন।

আরও একটি বিষয় মনে রাখবেন, বানর থেকে সাবধান থাকুন এবং আপনার ব্যাগ, মোবাইল, ক্যামেরা ইত্যাদি সম্পর্কে সতর্ক থাকুন , তাদের ভয় দেখানোর জন্য আপনার হাতে ছোট ছোট লাঠি নিতে পারেন।

দেওঘর থেকে ত্রিকুট পাহাড় কিভাবে পৌঁছবেন

দেওঘর থেকে ত্রিকুট পাহাড় এর মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালোই । দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার।
দেওঘর থেকে আপনি ত্রিকুট হিলে পৌঁছানোর জন্য অটো, ক্যাব ইত্যাদি বুক করতে পারবেন। অন্যথায়, আপনি লোকাল বাসে করেও যেতে পারেন। ফিরে আসার সময়, আপনি সেখান থেকে অটো, বাস পাবেন।

দেওঘর ভ্রমণ ম্যাপ
দেওঘর ভ্রমণ ম্যাপ

তপোবন দেওঘর

তপোবন দেওঘরের সাইড সীন গুলির মধ্যে প্রধান আকর্ষণ। পাহাড় টি দেওঘর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এটি একটি ধর্মীয় স্থান এবং এই জায়গাটির সাথে বিভিন্ন পৌরাণিক গল্প জড়িয়ে আছে। পাহাড়ের বিভিন্ন উচ্চতায় বেশ কয়েকটি মন্দির এবং গুহা রয়েছে।

সিঁড়ি দিয়ে প্রায় আধ ঘন্টায় পাহাড়ের শীর্ষে পৌঁছানো যায়। সিঁড়ি দিয়ে পাহাড়ে ওঠার সময় আপনি বিভিন্ন মন্দির দেখতে পাবেন। আর দেখতে পাবেন অনেক হনুমান , পাহাড়ে ওঠার জন্য গাইড, পূজা সামগ্রী বিক্রির দোকানদার, হনুমান এর খাবার বিক্রেতা ইত্যাদি। পাহাড়ের শীর্ষে রয়েছে তপোনাথ মহাদেবের মন্দির। পাহাড়ের মাথা থেকে বহু দূর অবধি দেখা যায় , যা দেখতে খুবই ভালো লাগে।

পাহাড় থেকে নামার সময়, সিঁড়ি দিয়ে নামা যায় আবার চাইলে গাইড এর সাহায্য নিয়ে পাহাড় ভেঙে ও নামা যায় , আর সেটা বেশ রোমাঞ্চকর ও বটে। এই পাহাড়ে অনেক হনুমান রয়েছে। এখানে প্রশিক্ষিত হনুমানদের থেকে খুব সাবধানে থাকতে হবে , না হলে তারা যেকোনো সময় আপনাকে হাত থেকে সানগ্লাস, ক্যামেরা, মোবাইল ইত্যাদি কেড়ে নিতে পারে।

আমার সাথে আমার ৩ বছরের মেয়ে ছিল , তাই গাইড এর পীড়া পিড়ি সত্বেও পাহাড়ে হেঁটে ওঠার করিনি।
আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন আমাকে কমেন্ট জানাবেন।

তপোবন দেওঘর

তপোবনের পৌরাণিক কাহিনী

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে ঋষি বাল্মীকি এখানে এসেছিলেন। লোকে বলে রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় কিছুদিন এই তপবনে কাটিয়ে ছিলেন।পাহাড়ের পাদদেশে একটি জলাশয় আছে তার নাম সীতা কুন্ড। কথিত আছে সীতা বনবাস যাপন কালে সেখানে স্নান করতেন। এও বলেন যে রাবণ এখানে শিবের উপাসনা করার জন্য এসেছিলেন।

তখন দেবতারা হনুমানকে রাবনের তপস্যা ভঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাই হনুমান পাহাড়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং পাহাড়ের পাথরগুলি ফেটে যায়। বর্তমানে সেই পাথরের ফাটলের মাঝখানে একটি হনুমান মন্দির রয়েছে। এছাড়া ও এখানে শ্রী শ্রী বালানন্দ ব্রম্ভচারী সিদ্ধিলাভ করেন,তার মন্দির ও এখানে স্থাপন করা হয়েছে।
তপোবন থেকে আমরা যাবো নৌলখা টেম্পলে এবং সৎসঙ্গ আশ্রম এ।

নওলখা মন্দির

বৈদ্যনাথ ধাম থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে আর জসিডি স্টেশন থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নওলখা মন্দির।
এই মন্দির টি তৈরি করেন কোলকাতার পাথুরিয়া ঘাটের জোড়বাগানে বসবাস কারী চারুশিলা দেবী। কম বয়েসে বিধবা হয়ে যান চারুশিলা দেবী এবং তিনি স্বামী বালানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ এর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। স্বামী বালানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ এর পরামর্শ এই চারুশিলা দেবী এই মন্দির টি বানান।

এই টেম্পলে টি তৈরি করতে তখন কার দিনে আনুমানিক ৯ লক্ষ টাকা ব্যায় হয়েছিল। তাই এই টেম্পলে টির নাম হয় নৌলখা টেম্পলে। মন্দিরের উচ্চতা ১৪৬ ফুট। এই মন্দির টি অনেকটা কলকাতার বেলুড় মঠের মতো দেখতে । মন্দিরের ভিতরে নুরু গোপাল, ও রাধা-কৃষ্ণ মূর্তি প্রতিষ্ঠিত আছে । এবং স্বামী বালানন্দ ব্রহ্মচারী মহারাজ এর একটি খোদিত মূর্তিও আছে ।

মূল মন্দির এ ওঠার সময় সাদা মার্বেল পাথর দিয়ে চারুশীলা দেবীর একটি মূর্তি স্হাপন করা আছে। মন্দির চত্বর টি বেশ বড় এবং যখন ইচ্ছা মন্দির এ বসে থাকা যায়। দেওঘর ঘুরতে এলে নওলখা মন্দির একটি প্রধান আকর্ষণ। তবে মনে রাখবেন – মন্দিরের ভিতরে ফটোগ্রাফি করা নিষিদ্ধ।
নৌলখা মন্দির এ কিছু খান কাটানোর পর আমরা চললাম অনুকূল ঠাকুরের আশ্রমের এর দিকে।

নওলখা মন্দির দেওঘর

দেওঘর নৌলাক্ষা মন্দিরের সময় সূচি

খোলার সময়টি হল – সকাল ৭.৩০ টা থেকে ৭.৩০ টা পর্যন্ত

সমাপ্তির সময়টি হল – ১২ টা থেকে দুপুর ২ টা

দেওঘর অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম – সৎসঙ্গ

দেওঘরে অনুকূল ঠাকুরের আশ্রম বা সৎসঙ্গ একটি দর্শনীয় স্থান। এখানে প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী দেড় সমাগম হয়। প্রথমেই বলে রাখি এখানে ভিতরে ছবি তোলা নিষেধ। তাই আশ্রম এর ভিতরের চিত্র তুলে ধরতে পারলাম না। আশ্রম সকাল ৮ টা থেকে দুপুর ১২ টা এবং বিকাল তিনটে থেকে রাত ৮ টা অবধি খোলা থাকে।

আশ্রম এর মেন্ গেট দিয়ে ঢুকেই বাম দিকে গেলে দেখতে পাবেন , নাম কীর্তন এবং প্রার্থনা করার যায়গা। আর সোজা চলে গেলে দেখতে পাবেন একটি ছোট চিড়িয়া খানা সেখানে বর্তমান কিছু পাখি রয়েছে।

ভিতরের পরিবেশ খুব ভালো শান্ত এবং সুন্দর। অনুকূল ঠাকুর পাবনা থেকে আসার পর এখানেই প্রথম আশ্রম তৈরি করেন। এটিই সৎসং এর হেড কোয়াটার।

আশ্রম এর শিষ্য দের জন্য বিনামূল্যে থাকা ব্যবস্থা আছে। আর বাইরের তীর্থ জার্তীদের জন্য টিকিট এর মাধ্যমে এই সুবিধা প্রদান করা হয়।

দেওঘর ভ্রমণ ম্যাপ ১
দেওঘর ভ্রমণ ম্যাপ ১

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।