বকখালি ভ্রমণ গাইড | সমস্ত টুরিস্ট স্পট ও সমুদ্র সৈকত এর তথ্য
আমার প্রিয় উইকেন্ড ডেস্টিনেশন গুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বকখালি (Bakkhali) অন্যতম। যদিও এখানকার সমুদ্র দীঘার যদিও খুব উত্তাল নয় এবং সব সময় ঢেউ পাওয়া যায় না, জোয়ারের সময় ছাড়া। বিচ এর সাইড এ অনেক দোকান আছে ইচ্ছা হলে টুকি টাকি ঘর সাজানোর জিনিস কিনতে পারেন। ট্রেনের টিকিট বুকিং নিয়ে কোনো চিন্তা নেই, অনেক হোটেল আছে সব রকম বাজেট এর মধ্যে, এবং ভিড় ও তুলনামূলক ভাবে কম। তাই ছোট করে দু এক দিন এর জন্য একটু হওয়া বদল চাইলে বকখালি ভ্রমণ এর জুড়ি নেই।
বকখালি ভ্রমণ গাইড | সমস্ত টুরিস্ট স্পট ও সমুদ্র সৈকত এর তথ্য
Read in English:- Bakkhali Tour Guide and Sightseeing
বকখালি ভ্রমণ গাইড – Bakkhali Travel Guide
আমরা সকাল সকাল শিয়ালদা স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করি। কলকাতা শিয়ালদহ এর সাউথ সেকশন থেকে নামখানা গামী ট্রেন ধরতে হবে। আমরা সকাল ৫.১০ মিনিট এ ট্রেন উঠি । ৮ টা ১০ মিনিট নাগাদ আমরা নামখানা স্টেশন এ পৌঁছাই। বকখালি দক্ষিণ ২৪ পরগনার অন্তর্গত ও সুন্দরবন এর অন্তর্গত। । এই এক ই রুট এ গঙ্গাসাগর যাওয়া যায় তবে কাকদ্বীপ নামতে হবে।
বকখালি বাস এসপ্ল্যানেড
বকখালি বাসএ করেও যাওয়া যায়, ঘন্টায় ঘন্টায় প্রতিদিন এসপ্ল্যানেড থেকে নামখানার উদ্দেশে বাস ছাড়ে, এছাড়াও আরো একটা খুশির খবর আছে শনিবার এবং রবিবার A/C ভলভো বাস ডাইরেক্ট বকখালি যাচ্ছে ২৫০ টাকা ভাড়ায়।
নামখানা স্টেশন থেকে বেরিয়েই টোটো পাবেন বকখালীর যাওয়ার জন্য বা বকখালি বাস স্ট্যান্ড বা হাতানিয়া দোয়ানিয়া ফেরি ঘাট এর জন্য। আমরা একটি টোটো বুক করেছিলাম ডাইরেক্ট বকখালি যাওয়ার জন্য ৪০০ টাকা দিয়ে। নামখান স্টেশন থেকে বকখালি বাস স্ট্যান্ড এর টোটো ভাড়া ১৫ টাকা এবং বাস স্ট্যান্ড থেকে বকখালীর ভাড়া ২৫ টাকা।
হাবড়া থেকে বকখালি বাস
১লা আগস্ট ২০২১ ,পশ্চিমবঙ্গ পরিবহন (WBTS) নিগমের হাবড়া থেকে বকখালি E61 রুটে একটা বাস পরিষেবা চালু হয়েছে।
E61 রুট:- হাবড়া থেকে বকখালী ভায়া অশোকনগর কচুয়া মোড়, বারাসাত, এয়ারপোর্ট, উল্টোডাঙ্গা, রুবি, গড়িয়াহাট, রাসবিহারী, নিউ আলিপুর, তারাতলা, ঠাকুরপুকুর, জোকা, আমতলা, সিরাকোল, সরিষা, ডায়মন্ড, হটুগঞ্জ, কুল্পি, কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেসারগঞ্জ।
টাইমিং :-
হাবড়া থেকে:- দুপুর ২.১০, বারাসাত চাপাঁডালি থেকে:- দুপুর ৩.২০, বকখালি থেকে:- সকাল ৫.৪৫।
বকখালি নামখানা নতুন ব্রিজ
আর একটি সু সংবাদ, বর্তমানে নতুন নামখানা বকখালি ব্রিজ খুলে গেছে তাই বকখালি যাওয়া আরো সহজ হয়ে গেছে। সেই জন্য এখন আর নদী পার হওয়ার চিন্তা নেই এবং বকখালি থেকে ফেরার সময়, নামখানা পৌঁছনোর ও শিয়ালদহ র ট্রেন ধরার টাইম সহজেই ক্যালকুলেট করা যাচ্ছে। নামখান থেকে বকখালির ডিসটেন্স প্রায় ২৬ কিলোমিটার। টোটো তে সময় লাগে ৪৫ মিনিট তো ১ ঘন্টা। এখন কার রাস্তা খুব ভালো এবং গ্রাম্য রাস্তা পেরিয়ে যেতে বেশ ভালোই লাগে।
পড়ুন :- পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ গাইড
বকখালি হোটেল ভাড়া
বকখালি পৌঁছে আমরা লজ এ জিনিস পত্র রেখে এবং সামান্য কিছু ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম বিচ এর উদ্দেশে, সমুদ্রে দু তিন ঘন্টা স্নান করে একপেট খিদে নিয়ে হোটেল এ ফিরলাম, দুপুরে লাঞ্চ এবং বিশ্রাম। বকখালি তে প্রচুর হোটেল। কিন্তু বেশিরভাগই বাস স্ট্যান্ড এর কাছে। বকখালি হোটেল ভাড়া মোটামুটি ৫০০ টাকা থেকে শুরু।
বিকেল এ আমরা ভিসিট করলাম কুমির প্রকল্প চিড়িয়াখানা। এটি বকখালি বিচ এর কাছে ই অবস্থিত। সৌভাগ্য ক্রমে খুব সামনে একটি কুমির ও অনেক গুলি হরিণ দেখতে পেলেম ।
ভারতের বকখালি সমুদ্র সৈকত
এখানে ঘোরা ঘুরি করে আমরা সন্ধ্যায় গেলাম বকখালী সী বিচ এ , সেখানে তখন প্রচুর মানুষ এর ভিড়। আমি মাছ ভাজার দোকান দেখে সে দিকে দৌড় দিলাম। তারপর মাছ ভাজা , পাপড়ি চাট, ভেলপুরি , আইস ক্রিম সহযোগে সন্ধ্যা টা কিভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না। এবার অভ্যাস বসত কেনা কাটি তো করতেই হবে, তাই বিচ সাইড এর দোকান গুলি থেকে কিছু কেনাকাটি সেরে ফেললাম।
পরের দিন সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট সেরে আবার সমুদ্রের উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম বেশ কিছু টা সময় কাটিয়ে , ফিরে এলাম হোটেল এ , আজ আমাদের প্ল্যান ছিল বকখালি সাইড সীন করে আমরা বাড়ি ফিরবো। তাই প্যাকিঙ করে লাঞ্চ সেরে, চেক আউট করে বেড়িয়ে পড়লাম সাইড সীন এর জন্য , বকখালি তে প্রচুর টোটো যেকোনো একজন কে ধরলেই হলো ।
বকখালি সাইড সিন – হেনরি দ্বীপ
আমরা প্রথমে গেলাম হেনরি আইল্যান্ড, এখানে গভর্নমেন্ট এর আবাসন আছে, থাকার জন্য বুক করে যেতে হয়। আমার হেনরি আইল্যান্ড এর ভিডিও তে সব ডিটেলস আমি শেয়ার করেছি দেখতে পারেন । হেনরি আইল্যান্ড জায়গাটি আমার খুব ভালো লাগে, এটি বকখালি পর্যটন কেন্দ্র গুলির মধ্যে অন্যতম। বিষেশত এর পরিবেশ টা সত্যি খুব মনোরম।
এর পর আমরা গেলাম ফ্রেজারগঞ্জ ফিশিং হারবার দেখতে, এটি কে বেনফিশ ও বলে। এখানে সমুদ্র থেকে আনা মাছ তোলা এবং স্টোর করা হয় , আর এখন থেকে নানা জায়গায় মাছ ডিস্টিবিউট ও হয়। আর জম্বু দ্বীপ যেতে গেলে এখান থেকেই নৌকা ভাড়া করতে হয়। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি জম্বু দ্বীপ এ নামবার কোনো অপসন নেই, বোট আপনাকে পুরো দ্বীপ টি ঘুরিয়ে আবার ফেজারগঞ্জ ফিশিং হারবারেই নিয়ে আসবে।
পড়ুন :- মেটকাফ টাউন হল মিউজিয়াম কলকাতা
ফ্রেজারগঞ্জ ও বকখালি টুরিস্ট স্পট
এর পর আমরা গেলাম ফেজার গঞ্জ বিচ দেখতে , এটাও বেশ সুন্দর জায়গা , এখানে এলে দেখতে পাবেন উইন্ড টারবাইন যেগুলির মাধ্যমে অচিরাচরিত শক্তি উৎপন্ন হয়, আর আছে বিচ এর উপর একটি ভগ্ন বাড়ি , এখন কার মানুষ বলেন বাড়ি টি নাকি ফেজার সাহেবের বাংলো বাড়ির ধ্বংসস্তূপ যা ইংরেজ আমলে তৈরি হয়েছিল।
এরপর আমাদের নেক্সট ডেস্টিনেশন হলো কার্গিল বিচ। যদিও টোটো ড্রাইভার এর কথা মতো এই বিচ এ নামতে দেওয়া হয় না। তবে এখান থেকে জম্বু দ্বীপ এবং মৌসুনি আইল্যান্ড এর কিছু অংশ দেখা যায়। এখানে টোটো তে বসে কিছুক্ষণ সমুদ্রর হাওয়া খেয়ে আমাদের যাত্রা শেষ হলো। আমাদের টোটো ভাড়া করা হয়েছিল ৩০০ টাকা দিয়ে। উনি আমাদের সাইড সীন করিয়ে কানেক্টিংবাস এ তুলে দিয়েছিলেন, নামখানা আসার জন্য।
কারণ বকখালি থেকে কোনো টোটো ড্রাইভারই নামখানা আসতে চাইছিলো না। বাস স্ট্যান্ড এ নেমে টোটো ধরে সেই হাতানিয়া দোয়ানিয়া ব্রিজ পেরিয়ে, পৌঁছে যাই নামখানা স্টেশন এ।
এখানেই আমাদের যাত্রা শেষ হলো। ভালো থাকবেন। আপনার যাত্রা শুভ হোক।
খুব ভালো একটা বকখালির গাইড পেলাম। ধন্যবাদ রুমা দে ।
পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
খুব সুন্দর
ধন্যবাদ