গঙ্গাসাগর মেলা ভ্রমণ গাইড কোলকাতা থেকে
“সব তীর্থ একবার গঙ্গাসাগর বার বার ” ভাবছেন উল্টো বলছি , কিন্তু প্রথমবার কোলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর ( Ganganagar mela from Kolkata 2023) যাওয়ার পর আমার অভিজ্ঞতা টি এই রকমই। গঙ্গাসাগর যারা যাননি বা যারা যাবেন ভাবছেন তাদের উদ্দেশে বলছি , বেরিয়ে পড়ুন কোনো অসুবিধা হবে না। আমি ঠিক গঙ্গাসাগর মেলা আগেই গিয়েছিলাম তাই ভিড় একটু বেশি ছিল। তবে খুব আনন্দ পেয়েছি আর বার বার মনে হয়েছে “বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান “।
English post:- Ganganagar mela from Kolkata

গঙ্গাসাগর মেলা ভ্রমণ গাইড কোলকাতা থেকে
কোলকাতা থেকে গঙ্গাসাগর মেলা
আমি শিয়ালদহ থেকে ৫টা ১২ র নামখানা লোকাল ধরি। আর কাকদ্বীপ স্টেশন এ নামি ৭.৩০ মিনিট এ। স্টেশন থেকে বেরোলেই টোটো ,ভ্যান এর লাইন দেখতে পাবেন। ভাড়া প্রতিজন ২০ টাকা। আমরা একটা টোটো তে উঠে গেলাম। টোটো একদম ভেসেল এর ঘাট এর কাছে নামবে। ওখান থেকে ভেসেল এ প্রতিজন ৯ টাকা টিকিট কেটে ভেসেল এ উঠে পড়লাম। লট নম্বর ৮ থেকে নদীর ওপার কচুবেড়িয়া যেতে টাইম লাগে ৪৫ মিনিট।
যেতে যেতে দেখতে পাবেন আরো অনেক ঘাট আছে যেখান থেকে ভেসেল ছাড়ে , আর দেখতে পাবেন, নদীর মাঝে মাঝে বড়ো বড়ো পিলার, যার মাধ্যমে আসল ভূখণ্ড থেকে সাগরদ্বীপ এর সাথে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে, আর দেখতে পাবেন সিগাল পাখি।
তারপর কচুবেড়িয়া ঘাট এ নেমে আমরা ম্যাজিক গাড়ি করে গেলাম আসল গঙ্গাসাগর মেলা প্রাঙ্গনে। টোটো ভাড়া প্রতিজন ৫০ টাকা। সময় লাগবে ১ ঘন্টা এছাড়াও আপনি সব রকম এর গাড়ি পাবেন প্রাইভেট ,শেয়ার যেগুলির ভাড়া ১৫০০ থেকে ১৬০০ এর মধ্যে।
প্রথমেই দেখলাম কপিল মুনির আশ্রম, তারপর গেলাম সাগর এর কাছে , যেখানে মহাপুন্য স্নান হচ্ছে। তারপর চারি পাশে খাবারের পসরা দেখে খুব খিদে পেয়ে গেলো চলে গেলাম ওয়েস্ট বেঙ্গল গভর্নমেন্ট এর ফুড কোর্ট এ। খেলাম veg মিল ৫০ টাকা আর চিকেন মিল ১০০ টাকা। খাবার পর মেলা প্রঙ্গনটা এ দেখলাম। কিছু কেনাকাটি করলাম।
তার পর যেহেতু আমরা সেই দিনেই ফিরেছি তাই আবার ম্যাজিক গাড়ি ধরলাম । এবারে ম্যাজিক গাড়ি ভাড়া নিলো ৩০ টাকা প্রতিজন। তারপর আবার ভেসেল ধরে এই পাড়ে এলাম। এবং একই ভাবে টোটো ধরে স্টেশন এ এলাম এবং ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরলাম।
গঙ্গা সাগর মেলার ইতিহাস – কপিল মুনির আশ্রম
একদা বিষ্ণুদেবের কথায় ঋষি কর্দম মুনি বিবাহে রাজি হন , এবং শর্ত দেন , বিষ্ণুদেব কে তাঁর পুত্র হয়ে পৃথিবীতে আসতে হবে। ঋষি কর্দম মুনির ছেলেই হলেন কপিল মুনি। তাই কপিল মুনি কে বিষ্ণু দেবতা হিসাবে পূজিত হন।
অণ্যদিকে সাগর রাজা অশ্বমেধ এর যজ্ঞ করছিলেন, আর তার ঘোড়া টিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তখন সাগর রাজা তার ৬০ হাজার ছেলে কে ঘোড়া খুঁজে আনার দায়িত্ব দিলেন। শেষে তারা ঘোড়া টিকে খুঁজে পায় কপিল মুনির আশ্রমে।
আসল ঘটনাটি হলো ইন্দ্রদেব ঘোড়া টিকে চুরি করে এখানে রেখেছিলেন। সাগর রাজার ছেলে রা এই ঘটনা টি জানতো না তারা কপিল মুনি ক চোর ভেবে ভৎসনা করতে শুরু করেন। তখন কপিল মুনির অভিশাপে সাগর রাজার সব ছেলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
পরে সব সত্যি জানার পর কপিল মুনি বলেন পার্বতী যদি যদি হয়ে পৃথিবীতে আসে তবে সেই জল স্পর্শেই তার পুত্র রা মুক্তি পাবে।
শেষে মহাদেব এর কথায় দেবী পার্বতী পৃথিবীতে গঙ্গা নামেপ্রবাহিত হলেন। এবং সাগর রাজার ছেলেরা মুক্তি পেলো। আর যেই দিন দেবী পার্বতী পৃথিবীতে প্রবাহিত হলেন সেই দিন টি হলো মকর সংক্রন্তি।
পড়ুন :- মেটকাফ টাউন হল মিউজিয়াম কলকাতা

গঙ্গাসাগর কিভাবে যাব ?
শিয়ালদহ থেকে ট্রেন তো আছেই তা ছাড়াও হাওড়া থেকে ভেসেল ছাড়ে আগেথেকে বুকিং করতে হয়। এস্প্লানেড থেকে সরাসরি বাস যায় কাকদ্বীপ , নামখানা । নিজের গাড়ি করেও আস্তে পারেন।গাড়ি যদি পারাপার করার জন্য আলাদা ভেসেল আছে।
একদিনে যদি ঘুরে আস্তে চান তাহলে অবশই জোয়ার ভাঁটার টাইম জেনে নেবেন।কারণ ভাঁটার টাইম এ ভেসেল চলে না। আমি যখন গেছিলাম তখন দুপুর ২ টোর পর আবার রাত ৮ টায় ভেসেল ছাড়বে বলে ঘোষণা করছিলো।
আবার নামখানা থেকেও যেতে পারেন বেনুবন্ ঘাট পেরিয়ে। তবে ওখানে ভেসেল চলে না ছোট ছোট লঞ্চ চলে। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে হেলিকাপ্টার ছাড়ে গঙ্গাসাগর যাবার জন্যও প্রতি রবিবার করে। এর ভাড়া ১৫০০ টাকা।
গঙ্গাসাগর হোটেল ও থাকার জায়গা
গঙ্গাসাগরে খুব ভালো হোটেল পাবেন না। তবে অনেক আশ্রম আছে , সেখানে খুব কম খরচে থাকা যায়। ভারত সেবাশ্রম ,রামকৃষ্ণ মিশন ,কপিল মুনির আশ্রম,ইয়ুথ হোস্টেল এগুলি উল্লেখযোগ্য।
পড়ুন :- পুরুলিয়া অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ গাইড
সাগর দ্বীপ উল্লেখযোগ্য স্থান
সাইড সীন এর জন্য কিছু জায়গা আছে ঘুরে নিতে পারেন। যেমন অনেক পুরোনো মনসা মন্দির , নাগ বাবা মন্দির , লাইট হাউস , আয়লা বিধস্ত এলাকা , মোহনা। এই সাইড সীন করতে ৫০০ টাকার মতো টোটো ভাড়া নেবে। গঙ্গাসাগর ভ্রমণ গাইড এ এই জায়গা গুলি ১ দিনে ই অনায়াসে দেখে আশা যায়।

গঙ্গা সাগর সম্পর্কে কিছু তথ্য
- সন্ধ্যা বেলা ৭ টা থেকে আরতি শুরু হয়। এটি মিস করবেন না .
- এখানে এয়ারটেল ও ভোডাফোনের নেটওয়ার্ক মোটামুটি ভালো।
- সঙ্গে করে ওষুধ অবসই নেবেন। আর রাতের জন্য মশারি আর মশার ধুপ।


কলকাতায় নাগা সন্ন্যাসী
বাবু ঘাটে মেলা বসেছে প্রত্যেক বছর ই বসে গঙ্গাসাগর মেলা উপলক্ষে। আসুন আপনাদের একটু বেরিয়ে নিয়ে আসি ।এখানে যাত্রী রা আসেন দূর দূরান্ত থেকে এবং এখানে তাদের ক্লান্তি কিছু কমানোর জন্য রেস্ট নেন। সাধারণ মানুষ ছাড়াও প্রচুর সাধু , সন্ন্যাসী , নাগা সাধু। এখানে দু একদিন থেকে তারপর গঙ্গাসাগর এর দিকেযাত্রা করেন। এখন থেকে সরাসরি বাস এ করে গঙ্গাসাগর পৌঁছানো যায় সরকারি বাস এ করে তাও বিনামূল্যে বা (নামমাত্র মূল্যে )।
এখানে অনেক ক্যাম্প করা আছে থাকার জন্য। এছাড়াও আছে খাওয়া দাওয়ার ঢালাও ব্যবস্থা একদম বিনামূল্যে। সেখানে কি নেই খিচুড়ি, জিলিপি , দুধ, চা আরও কত কি। তার সঙ্গে আছে মনোরঞ্জন এর ব্যবস্থা। সেখানে চলছে নানা রকম পালা , রামায়ন এর পালা , হনুমান পালা ইত্যাদি। পুরো ইভেন্ট তাই চালনা করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং স্বেচ্ছা সেবী সংস্থাগুলি । মেডিক্যাল ক্যাম্প ও আছে।
ঠিক ইডেন গার্ডেন এর উল্টো দিকে গেলে ই দেখতে পাবেন সেখানে একটা মিনি গঙ্গাসাগর মেলাবসেছে। এখন অবশ্য তাদের ফেরার পালা।তা ফেরার সময় নাগা সন্ন্যাসী দের আশীর্বাদ পেলে মন্দ হয় না । কি বলেন ?
শুভ মকর সংক্রান্তি