নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী বাংলা

তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব, ‘দিল্লি চলো’  এই সব বিখ্যাত উক্তি শুনলে যার কথা মনে পড়ে তিনি আর কেউ নন আমাদের প্রিয় দেশনায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। যার নাম বলতেই মানুষ বোঝে ভারতবর্ষের প্রতি ভালোবাসা, দৃঢ়তা, লড়াকু মনোভাব, প্রতিবাদ এবং অপরদিকে স্নেহ পরায়ণ ও দয়ালু মনোভাব।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জীবনী

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্ম ও পরিবার

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু উড়িষ্যার কটক শহরে ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে জানুয়ারি বিখ্যাত ‘বসু পরিবারে’  জন্মগ্রহণ করেন। এই বসু পরিবারের আদি নিবাস পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় কোদালিয়া শহরে।

পিতা জনকীনাথ বসু (২৮শে মে, ১৮৬০- ২ রা ডিসেম্বর, ১৯৩৪)   ছিলেন একজন ভারতীয় আইনজীবী। জনকীনাথ বসু আইনজীবী হিসাবে কর্মরত থাকাকালীন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য পান। সুভাষচন্দ্রের  মাতা প্রভাবতী দেবী (১৮৬৯- ১৯৪৩) ছিলেন ভারতীয় সমাজকর্মী ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯২৮ সালে মহিলা রাষ্ট্রীয় সংঘের প্রেসিডেন্ট হিসাবে নির্বাচিত হন।

মা বাবার এই স্বাধীনতা সংগ্রামী আদর্শই তাঁর দুই পুত্র সুভাষচন্দ্র বসু ও শরৎচন্দ্র বসু– এর মধ্যে সঞ্চালিত হয়েছিল। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তাঁর মাতা পিতার চোদ্দতম সন্তানের মধ্যে নবম সন্তান তথা ষষ্ঠতম পুত্র সন্তান।

সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইয়ের নাম হলো সুরেশ চন্দ্র বসু, সুধীর চন্দ্র বসু, ডঃ সুনীল চন্দ্র বসু, শরৎ চন্দ্র বসু (ইনি একজন ভারতীয় ব্যারিস্টার ও স্বাধীনতা কর্মী ছিলেন), শৈলেশ চন্দ্র বসু, সন্তোষ চন্দ্র বসু।  তাঁর বোনেদের নাম হলো তরুবালা বোস, মালিনা দত্ত, প্রতিভা মিত্র, কনকলতা মিত্র, প্রমীলা বালা মিত্র, সরল বালা দে।

ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র সুভাষ সমস্ত কাজ  বুদ্ধি দিয়েই করতেন, ছোট খাটো বিষয় নিয়েও তাঁর মনে কৌতূহলের অন্ত ছিল না। তবে ছেলেবেলা থেকেই প্রতিবাদের একটা মনোভাব তাঁর মধ্যে ছিল যা সুভাষ চন্দ্র বসুকে ‘দেশনায়ক’ বানিয়েছে।

Netaji Subhas Chandra Bose Statue
Netaji Subhas Chandra Bose Statue

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর শিক্ষা জীবন

১৯০২ সালে সুভাষ চন্দ্র বসু কটকে প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয়  স্কুলে ভর্তি হন এবং এই বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। এই বিদ্যালয়টি ছিল ইংরেজি মিডিয়াম এবং স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ইউরোপীয় এবং এংলো- ইন্ডিয়ান। বিদ্যালয়ে লাতিন, বাইবেল, ব্রিটিশ ভূগোল ও ব্রিটিশ ইতিহাস পড়ানো হতো। এই বিদ্যালয়ে ভারতীয় ভাষা শেখানোর কোনো রকম ব্যবস্থা ছিল না। এদিকে পিতা জানকীনাথ মনে করতেন তাঁর পুত্রদের বাংলা ভাষার সাথে ইংরেজি ভাষাও শেখা অত্যন্ত জরুরি। 

বিদ্যালয়ে ইংরেজি শিখলেও বাড়িতে মায়ের কাছে থেকে রামায়ন ও মহাভারতের কাহিনী শুনতেন এবং ভক্তিগীতি গাইতেন। মায়ের স্নেহশীল ও দয়ালু মনোভাবের গুনটা সুভাষচন্দ্র পেয়েছিলেন। কোনো মানুষ বিপদে পড়লে তাকে তিনি অবশ্যই সাহায্য করতেন।

১৯০৯ সালে ১২ বছর বয়সে সুভাষচন্দ্ৰ  কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট স্কুল-এ ভর্তি হন। এই স্কুলে বাংলা ও সংস্কৃত পড়ানো হতো। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও তিনি ভারতীয় সংস্কৃতিকে কখনোই ভোলেননি। ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ব বিদ্যালয় কর্তৃক ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন।

১৯১৩ সালে সুভাষ কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন দর্শন নিয়ে। তিনি ক্যান্ট, হেগেল ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দার্শনিকদের সম্পর্কে পড়াশোনা করেন।

১৯২০ সালে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করা সত্ত্বেও ইংল্যান্ডে ব্রিটিশদের অধীনে কাজ করতে চাননি। এরপর দেশে ফিরে আসেন।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ব্যাক্তিগত জীবন

১৯৩৪ সালে সুভাষ চন্দ্র বসুর সঙ্গে এমিলি শেঙ্কল-এর সঙ্গে পরিচয় ঘটে ভিয়েনাতে। এরপর ১৯৩৭ সালে তাঁরা বিবাহ সম্পন্ন করেন। তাদের একটি কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন ২৯ নভেম্বর ১৯৪২ সালে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনাতে, যার নাম অনিতা বসু পাফ। তিনি জার্মানির সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির রাজনীতিবিদ। 

Anita Bose Pfaff daughter of Netaji Subhas Chandra Bose
Anita Bose Pfaff daughter of Netaji Subhas Chandra Bose

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর  রাজনীতি

সুভাষচন্দ্র বসু সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করা সত্ত্বেও,  চাকরি প্রত্যাখ্যান করে তিনি আবার ইংল্যান্ড ছেড়ে ভারতে চলে আসেন এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে যোগদান করেন। 

১৯১৯ সালে অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকান্ড ও দমনমূলক রাওলাট আইন ভারতীয়দের বিক্ষুব্ধ করে তোলে। নেতাজি ‘স্বরাজ’ পত্রিকায় লিখতে শুরু করেন এবং কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। 

১৯২৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাস যখন কলকাতার মেয়র ছিলেন, সুভাষ চন্দ্র বসু তখন তাঁর অধীনে কাজ করতেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসই ছিলেন সুভাষের রাজনৈতিক গুরু।

সালটা ১৯২৫, স্বাধীনতা আন্দোলনের জাতীয়তাবাদীদের সাথে নেতাজিকেও ব্রিটিশ সরকার বন্দি করেন এবং মান্দালয় জেলে নিয়ে যান। সুভাষকে ২০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মোট ১১ বার তাঁকে জেলে যেতে হয়। 

১৯২৭ সালে জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জওহরলাল নেহেরুর অধীনে জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯২৮ সালে সুভাষ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক সভা আয়োজন করেন এবং তিনি কংগ্রেস সেচ্ছাসেবক বাহিনীর ‘জেনারেল অফিসার কম্যান্ডার’ হিসাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এরপর আবার সুভাষকে আইন অমান্য আন্দোলনের জন্য গ্রেফতার করে ব্রিটিশ সরকার।

১৯৩০ সালে তিনি কলকাতার মেয়র হন। এই বছরের মাঝামাঝি সময়ে তিনি ইউরোপ ভ্রমণে যান এবং মুসোলিনির সাথে দেখা করে কমিউনিজম ও ফ্যাসিবাদের খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি ‘The Indian struggle’ বইটি রচনা করেন, যাতে ১৯২০-১৯৩৪ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণিত আছে।

১৯৩৪  সালে লবণ সত্যাগ্রহ প্রত্যাহার হলে সুভাষ ও বীঠলভাই প্যাটেল ইউরোপে ইস্তাহার দেন এবং প্যাটেল তাঁর সম্পত্তির চার ভাগের তিন ভাগ সুভাষকে দেন কিন্তু তাঁর ভাই বল্লভভাই প্যাটেল পরে তা অস্বীকার করেন এবং সুভাষকে অনেক কটূক্তি করেন।

১৯৩৮ সালে হরিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর বামপন্থীদের সাহায্য নিয়ে ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরা কংগ্রেসে  সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন সুভাষ। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে শর্তহীন স্বরাজের পক্ষে পদক্ষেপ নিলে গান্ধীজির সাথে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং সভাপতি পদে ইস্তফা দেন। ১৯৩৯ সালে আবার কংগ্রেসের সভায় হাজির হন এবং গান্ধীজির পছন্দের পট্টভি সীতামাইয়াকে ২০৩ ভোটে পরাজিত করে ত্রিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সভাপতি হিসাবে পুনর্নির্বাচিত হন। কংগ্রেসের কাজকর্ম চলাকালীন গান্ধীজির নেতৃত্বে দলের বিভিন্ন কৌশলের কারণে সুভাষচন্দ্র বসু সেই পদ থেকেও ইস্তফা দেন।

 ১৯৩৯ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসে ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ তৈরি করেন দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে। এই দলের সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসু ও সহ সভাপতি সর্দার শার্দুল সিং এছাড়াও অন্যান্যরা ছিলেন বিহারের সহজানন্দ ও বোম্বাইয়ের নরিম্যান। মুথুরামালিঙ্গম থেভার ছিলেন সুভাষচন্দ্র বসুর একনিষ্ঠ সমর্থক এবং তিনি এই ফরওয়ার্ড ব্লক দলে যোগ দেন। এই বছরই ৬ সেপ্টেম্বর মাদুরাই গেলে তাঁকে অভ্যর্থনার উদ্দেশ্যে মুথুরামালিঙ্গম একটি বিশাল র‍্যালির আয়োজন করেন। 

মাদুরাই যাওয়ার পথে সুভাষ মুথুরামালিঙ্গম-এর আমন্ত্রণে মাদ্রাজ ভ্রমণ করেন এবং সেখানে তিন দিন অতিবাহিত করেন । এরপর  ইংল্যান্ডে তিনি ব্রিটিশ লেবার পার্টির বিভিন্ন নেতা ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ যেমন লর্ড আরউইন, জর্জ লান্সবারি, ক্লিমেন্ট এটলি, আর্থার গ্রিনউড, হারান্ড লাস্কি, জে বি এস হ্যালডেন, আইভর জেনিংস, গিলবার্ট মারে, জর্জ ডগলাস হাওয়ার্ড কোল প্রমূখ সঙ্গে ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মত বিনিময় করেন।

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল ছিলেন লর্ড লিনলিথগো। সেই সময় সুভাষ চন্দ্র বসু কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নতুন দল ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ গঠন  করেন। এই দলের মাধমে তিনি ব্রিটিশবিরোধী নীতির প্রচার করতে থাকেন। তাঁরই নেতৃত্বে রাজনীতির এক নতুন যুগের সূচনা হয়। এরপরই ব্রিটিশ সরকার স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে এবং সুভাষচন্দ্র সহ ফরওয়ার্ড ব্লকের শত শত কর্মীকে কারাগারে নিক্ষেপ করে। অন্যায়ের প্রতিবাদে সুভাষচন্দ্র বসু অনশন করলে ব্রিটিশ সরকার তাঁকে মুক্তিদান করে। 

এরপর ১৯৪১ সালের গৃহবন্দি করা হয় সুভাষচন্দ্র বসুকে। কিন্তু তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে ব্রিটিশদের নজর এড়িয়ে পালাবেন। অবশেষে তাঁর দলের একজন সদস্যকে নিয়ে তিনি আফগানিস্তান ও সোভিয়েত ইউনিয়ন হয়ে জার্মানি পালিয়ে যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে ‘ভারতীয় মুক্ত কেন্দ্র’ গড়ে তোলেন এবং ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য জার্মান নেতা হিটলারের সাহায্য নেন। কিন্তু সে ব্যাপারে হিটলারের সেরকম কোনো সাহায্য না পাওয়ায় তিনি জার্মানি ছেড়ে চলে যান জাপানে, হিদেকি তোজোর (দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ৪০ তম প্রধানমন্ত্রী) সাহায্যের আসায়।

সেইসময় প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসু জাপানে গড়ে তোলেন ‘ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী’। এরপর এই বাহিনীর দায়িত্ব ভার তুলে দেন নেতাজি সুভাষচন্দ্রের হাতে। নারী ও পুরুষ মিলিয়ে এই বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ৮৫০০০ মতো । এই বাহিনীর নাম বদল করে রাখা হয় ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ । এরপর সুভাষ ৫টি বিগ্রেড গঠন করেন। ১৯৪৩ সালে ৩১ শে ডিসেম্বর আন্দামানে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। তারপর আন্দামান থেকে ব্রহ্মদেশে যান এবং ভারত অভিযান শুরু করেন। ‘দিল্লি চলো’ স্লোগান দিয়ে ১৪ ই এপ্রিল মনিপুরে মৈরাং-এ পতাকা উত্তোলন করেন এবং কোহিমা শহর দখল করেন। অবশেষে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য ইম্ফল দখল করতে পারেনি। 

  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জাপান বিধ্বস্থ হওয়ায় জাপানের কাছ থেকে সাহায্য না পেয়ে ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে নেতাজির ইতিহাস নিয়ে মতামতের কিছু পার্থক্য দেখা যায়।

Subhash Chandra Bose
Subhash Chandra Bose

সুভাষচন্দ্র বোসের সমাজতান্ত্রিক চিন্তা 

সুভাষচন্দ্র বোসের সমাজতান্ত্রিক চিন্তা হচ্ছে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা ধারার এক প্রতিক্রিয়াশীল অংশ। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর মূলত দৃষ্টি ছিল সমাজতন্ত্রের দিকে। তাঁর প্রত্যাশা ছিল স্বাধীনতা লাভের পর দেশেকে সমাজতান্ত্রিক গণপ্রজাতন্ত্রী করে তোলা। তিনি বলেছেন যে, দেশের জাতি বর্ণ ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষ অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভোগ করবে। সুভাষের মতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলতে বোঝায়  সকলের শ্রমদামের সমান অধিকার এবং জীবন ধরণের জন্য উপযুক্ত শ্রমমূল্য প্রাপ্তির অধিকার।

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ভূমিকা

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ইতিহাসে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বহন করেন। সুভাষচন্দ্র- এর সাহসিকতা ও দেশপ্রেমের আদর্শ ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর এই দেশপ্রেমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে গান্ধীজি সুভাষকে ‘a patriot of the patriots’ বলেছেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ভূমিকা

) রাজনৈতিক জীবনের প্রথমার্ধ

 ছেলেবেলা থেকেই সুভাষচন্দ্র ছিলেন তীব্র ব্রিটিশবিরোধী। ১৯২০ সালে আই সি এস পরীক্ষায় চতুর্থ স্থান অধিকার করা সত্ত্বেও তিনি ইংরেজদের অধীনে কাজ করেননি বরং ইংল্যান্ড থেকে দেশে ফিরে ১৯২২ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নেতৃত্বে গয়া অধিবেশনে স্বরাজ দলে যোগ দেন। ১৯৩৮ সালে হরিপুরা অধিবেশনে কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার পর বামপন্থীদের সাহায্য নিয়ে ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরা কংগ্রেসে  সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন সুভাষচন্দ্র বসু। অবশেষে জাতির জনক গান্ধীজির সাথে বিরোধিতায় সুভাষচন্দ্র বসু সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ‘ফরওয়ার্ড ব্লক’ নামে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করেন।

২) সুভাষচন্দ্রের ভারত ত্যাগ

সুভাষচন্দ্র সব সময় ইংরেজ সরকারের নজরে ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুযোগে ইংরেজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে ভারতকে স্বাধীন করা। এই কথা জানা মাত্রই ইংরেজ সরকার (১৯৪০ সালে)  তাঁকে বন্দি করে। কিছুদিন পরে অসুস্থ থাকার কারণে সুভাষচন্দ্রকে নিজের বাড়িতেই পুলিশের কড়া নজরে রাখা হয়। কিন্তু সুভাষচন্দ্র সব কিছুকে উপেক্ষা করে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি, ১৯৪১ সালে গৃহত্যাগ করেন এবং কাবুলে পৌঁছান। ভারতকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে এই ভাবেই সুভাষচন্দ্র নিজের দেশ ত্যাগ করেন।

৩) জার্মানিতে সুভাষচন্দ্র বসু

কাবুল থেকে মস্কো হয়ে সুভাষচন্দ্র বার্লিনে যান এবং জার্মানির কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন ভারতকে স্বাধীন করার জন্য। বার্লিন বেতার থেকে তিনি ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য ভারতবাসীকে আহ্বান জানান এবং জার্মানির প্রবাসী ভারতীয়রা ‘নেতাজি’ নামে সম্মোধন করেন সুভাষচন্দ্রকে। 

৪) জাপানে সুভাষচন্দ্র

সুভাষচন্দ্র বসু দেখেন যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যে কোনো দেশ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা সম্ভব হবে তাই তিনি জাপানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৩ সালে সুভাষচন্দ্র জাপানে যান। সেই সময় বিপ্লবী রাসবিহারী বসু ও ক্যাপ্টেন মোহন সিং জাপান সরকারে হাতে বন্দি ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে সুভাষচন্দ্র সেনাবাহিনী গঠন করে এর দায়িত্ত্বভার গ্রহণ করেন এবং এই বাহিনীর নাম দেন আজাদ হিন্দ ফৌজ

৫) আজাদ হিন্দ ফৌজ

সুভাষচন্দ্রের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব এবং সংগঠনমূলক মনোভাব আজাদ হিন্দ ফৌজের সদস্যদের অনুপ্রেরনা প্রদান করে। এরপর সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন। তিনি ১৯৪৪ সালের জানুয়ারি মাসে আজাদ হিন্দ সরকার ও ফৌজের প্রধান কর্মকেন্দ্র রেঙ্গুনে স্থানান্তরিত করেন । এরপর এই বাহিনীকে বিভিন্ন বিগ্রেড-এ ভাগ করেন- গান্ধী বিগ্রেড, আজাদ বিগ্রেড, নেহেরু বিগ্রেড, সুভাষ বিগ্রেড ও ঝাঁসির রানী বিগ্রেড।  তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজে হিন্দু ও মুসলমান সৈনিকের সমন্বয়সাধনের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত দেখা যায়। তবে সশস্ত্র সংগ্রামে এই আজাদ হিন্দ বাহিনী নয় ভারতীয় নৌবাহিনীকেও ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সামিল করেন তিনি।

 সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে কোহিমাতে আজাদ হিন্দ ফৌজ স্বাধীন ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং দিল্লি চলো উক্তির মাধমে সমস্ত সৈনিক ও স্বাধীনতাকামী দেশবাসীর মনে আহ্বান জানিয়ে এক অভূতপূর্ব উত্তেজনা তৈরি করেন। 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে ইঙ্গ-মার্কিন বাহিনীর আক্রমণে জাপানের পরাজয় ঘটলে জাপানের তরফে সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়। তাই সুভাষচন্দ্র অস্ত্রত্যাগ করতে বাধ্য হন। অনেক মানুষের মতে, ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ১৮ আগস্ট নেতাজি এক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তবে ভারতবাসীর কাছে সেই ইতিহাস আজও অজানা।

নেতাজি ভবন
নেতাজি ভবন

ভারতীয় জাতীয় সেনাবাহিনী আজাদ হিন্দ ফৌজ

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান বেশ গুরুত্বপূর্ন।  সুভাষচন্দ্রের নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াই ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নকে এক আন্তর্জাতিক স্তরে নিয়ে যান।  আজাদী সেনাদের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও আত্মবলিদান যে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভারতবাসীর মনে দেশাত্মবোধ জাগিয়ে রেখেছে, সেই বিষয় কোনো সন্দেহ নেই।

মুক্তিসংগ্রামে সেনাবাহিনী ও আজাদ হিন্দ ফৌজ

আজাদ বাহিনী গঠন

ভারতীয় প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসু জাপানে থাকাকালীন ১৯৪২ সালে  ২৮ শে মার্চ জাপানের রাজধানী টোকিওতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রবাসী ভারতীয় যুদ্ধবন্দীদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন  “ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ” । ১৫ জুন ভারতীয়দের সংগঠিত করার লক্ষ্যে ব্যাংককে এক সম্মেলনের আয়োজন করেন এই “ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘ” এবং সংঘের সভাপতি হন রাসবিহারী বসু নিজেই।  ১৯৪২ সালে ১ লা সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে রাসবিহারী বসু ক্যাপ্টেন মোহন সিংহের সহায়তায় ২৫ হাজার ভারতীয় সেনা নিয়ে গঠন করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। পরে রাসবিহারী বসুর আমন্ত্রণে জাপানে যান সুভাষ, এবং ২৫ আগস্ট আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব ভার গ্রহণ করেন।

আজাদ হিন্দ ফৌজের আদর্শ

আজাদ বাহিনী সেনাদের আদর্শ ছিল ‘ঐক্য’, ‘আত্মবিশ্বাস’ ও ‘আত্মউৎসর্গ’।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর লক্ষ্য

আজাদ হিন্দ বাহিনীর মূল লক্ষ্য ছিল জাপানি সাহায্য নিয়ে ভারত অভিযান চালিয়ে দিল্লি দখল করে ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ ঘটানো এবং ভারতবর্ষ স্বাধীন করা। কিন্তু  একাধিক প্রতিকূল কারণে আজাদ হিন্দ সেনারা মনিপুরের মৈরাং-এ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে আর অগ্রসর হতে পারেনি। ইম্ফল দখলের লড়াইয়ে জেতার আগেই পিছু হটতে বাধ্য হয় তাঁরা। অবশেষে ১৯৪৫ সালে ১৫ আগস্ট জাপান আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়।

আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগঠন

 সুভাষচন্দ্র নেতৃত্ব পাওয়ার পর আজাদ হিন্দ বাহিনীর পুনর্গঠন করেন।  তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ৫০ হাজারে পৌঁছায়। সুভাষচন্দ্র এই বাহিনিকে ৫ টি বিগ্রেডে ভাগ করেন যথা- গান্ধী বিগ্রেড, আজাদ বিগ্রেড, নেহেরু বিগ্রেড, সুভাষ বিগ্রেড। লক্ষ্মী স্বামীনাথনের নেতৃত্বে ‘ঝাঁসির রানী’ নামে একটি নারী বাহিনী গঠন করেন।

আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা

১৯৪৩ সালে  ২১ শে অক্টোবর  সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুরে আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করেন। এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান সেনাপতি সুভাষচন্দ্র বসু। জাপান, জার্মানি, ইতালি সহ আরো ছয়টি রাষ্ট্র এই অস্থায়ী সরকারকে স্বীকৃতি দেয়। জাপান সরকার অধিকৃত আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই সরকারকে সমর্থন করেন। দ্বীপপুঞ্জ-এর নতুন নাম শহীদ ও স্বরাজ হয়। ১৯৪৩ সালে ৩১ শে ডিসেম্বর আন্দামানে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন ।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর অভিযান

সুভাষ চন্দ্র আন্দামান থেকে ব্রহ্মদেশে যান এবং ভারত অভিযান শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে ৪ই ফেব্রিয়ারী এই বাহিনী আরাকান দখল করে। ১৮ ই মার্চ ব্রহ্মদেশ অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি ‘দিল্লি চলো’ বলে ধ্বনি দিয়ে সেনাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক নতুন মোড়ে নিয়ে আসেন। ১৪ ই এপ্রিল মনিপুরে মৈরাং-এ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং কোহিমা দখল করেন। এরপর প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার কারণে ইম্ফল দখল করতে পারেনি।

আজাদ হিন্দ বাহিনীর আত্মসমর্পণ

দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের শেষ দিকে ইঙ্গ মার্কিন বাহিনীর আক্রমণে জাপান বিধ্বস্থ হলে জাপানের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার সম্ভবনা শেষ হয়ে যায়। ফলে এই বাহিনীকেও আত্মসমর্পন করতে হয়ে। এর থেকে নেতাজির ইতিহাস ও আমাদের কাছে আজও অজানা।

আপাত ব্যর্থ হলেও স্বাধীনতার ইতিহাসে আজাদ হিন্দ ফৌজের অবদান অবিস্মরণীয়। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসাবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তাঁর অন্তিম নির্দেশনামায় ঘোষণা করেছিলেন- “ পৃথিবীতে এমন কোনো শক্তি নেই, যা ভারতকে পদানত করে রাখতে পারে। ভারত স্বাধীন হবে এবং অনতিকালের মধ্যেই।“ 

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মৃত্যু রহস্য

 নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর মৃত্যুর ইতিহাস নিয়ে একটা বিতর্ক থেকেই যায়। ঐতিহাসিক লিওনার্ড এ গর্ডনের লিখিত তথ্য অনুযায়ী,  তাইপেইর তাইহোকু বিমানবন্দরে দুপুর ২টো ৩০ নাগাদ একটি বিমান দুর্ঘটনায় শরীরের প্রায় ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল সুভাষচন্দ্রর। থার্ড ডিগ্রী বার্ন ইঞ্জুরী নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই প্রায় ৯টা থেকে ১০ টার মধ্যে মৃত্যু হয় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর। 

সম্প্রতি শাহওয়াজ কমিশন এবং খোলসা কমিশনের রিপোর্টকেই মান্যতা দিয়ে মোদি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, ১৯৪৫ সালে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়। যদিও এই ঘোষণার বিরোধিতায় নেতাজি পরিবারের সদস্য ও ফরওয়ার্ড ব্লকের সদস্যরা নানান প্রশ্ন করেন।

অন্যদিকে বসু পরিবারের নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর প্রপৌত্র চন্দ্রকুমার রায়ও এই তথ্য মানতে চান না। তিনি বলেন জাপান সরকার মোট ৫ টি ফাইল পেয়েছিল তার মধ্যে ২টি ফাইল প্রকাশ করেছে তারা বাকি ৩ টি এখন ও সামনে আসেনি।

নেতাজি রহস্য নিয়ে ভারত সরকারের তিনটি কমিশন আছে। ১৯৫৬ সালে   শাহওয়াজ কমিশন,  ১৯৭০ সালে খোসলা কমিশন এবং ১৯৯৯ মুখার্জী কমিশন। এর মধ্যে শাহওয়াজ কমিশন এবং খোলসা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১৯৪৫ সালে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় নেতাজির। পরবর্তী কালে এই তথ্য খারিজ করে দেয়।

মুখার্জি কমিশনের বিচারপতি মনোজ মুখার্জির রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮ ডিসেম্বর ১৯৪৫ সালে কোনো বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি নেতাজির। তাইওয়ান সরকার মুখার্জি কমিশনকে একটি চিঠিতে জানান, ১৯৪৫ সালে ১৮ আগস্ট তো নয়ই তার আগে বা পরে কোনো বিমান দুর্ঘটনা ঘটেনি।

প্যারিসের ‘ইনস্টিটিউট দে হতে এতুদে ইকনমিকস এত কমার্শিয়েলস’-এর অধ্যাপক ঐতিহাসিক জে বি পি মোরে দাবি করেছেন, ১৯৪৫ সালে নেতাজি তাইহোকুর দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়নি বরং ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন। ছাড়াও ফরাসি গোয়েন্দা রিপোর্টেও এই তথ্য উঠে আসে ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বরেও তিনি জীবিত এবং ফরাসি গোয়েন্দা রিপোর্টে স্পষ্ঠ ভাবে বলা হয়েছে যে সুভাষ চন্দ্র ছিলেন ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগের জাপানি সংযোগকারী সংগঠন তথা হিকারি কিকানের সদস্য। 

এছাড়াও আরো একটি মত উঠে আসে এই ব্যাপারে ফয়জাবাদের ‘ভগবানজি’ গুমনামি বাবা ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। এই গুমনামি বাবার মৃত্যু হয় ১৯৮৫ সালের ১৬ ই সেপ্টেম্বর। মুখার্জি কমিশনের মতে, গুমনামি বাবার সাথে নেতাজির পরিবারের যোগাযোগ ছিল এবং গুমনামি বাবাকে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের মতোই দেখতে ছিল। তবে এই গুমনামি বাবা সকলের সামনে কখনোই আসেনি। এই ভাবেই নানান জনের নানান মতে নেতাজি মৃত্যু রহস্য আজও অজানা আমাদের কাছে।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের কিছু বাণী

এই দেশনায়কের কিছু বাণী হলো- 

  • “নিজের প্রতি সত্য হলে বিশ্বমানবের প্রতি কেউ অসত্য হতে পারে না।“
  • “মানুষ যতদিন বেপরোয়া, ততদিন সে প্রাণবন্ত।”
  • “নরম মাটিতে জন্মেছে বলেই বাঙালির এমন সরল প্রাণ।“
  • “ সব কিছু ক্ষণভঙ্গুর। শুধু একটা জিনিস ভাঙে না সে বস্তু ভাব বা আদর্শ।
  •  “A true soldier needs both military and spiritual training”
  • ‘Freedom is not given, it is taken.’
  • ‘No real change in history has ever been archived by discussions.’
  • “Give me blood and I will give you freedom”
  • “Remember that the greatest crime is to compromise with injustice and wrong.”
  • “It is our duty to pay for liberty with our own blood.”

দেশ স্বাধীনের লড়াইয়ে নেতাজির উক্তি তরুণ সমাজকে আরো জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। 

স্বাধীনতা নিয়ে বার্তা

শুধুমাত্র রক্ত দিয়েই স্বাধীনতা জেতা যায়। তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। 

এগিয়ে চলার বার্তা

মানুষ টাকাকড়ি, বাহ্যিক আড়ম্বর দিয়ে জয়লাভ বা স্বাধীনতা কেনা যায় না। আমাদের আত্মশক্তি থাকতে হবে, যা সাহসী পদক্ষেপ নিতে উৎসাহ দেবে।

আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে বার্তা

আমরা যখন দাঁড়াব, আজাদ হিন্দ ফৌজকে গ্রানাইটের দেওয়াল হয়ে দাঁড়াতে হবে। আমরা যখন মার্চ করব তখন আজাদ হিন্দ ফৌজকে স্টিমরোলার হতে হবে।

সংগ্রাম নিয়ে বার্তা

যদি জীবন সংগ্রাম, ঝুঁকি না থাকে, তাহলে জীবনে বাঁচাটা অনেকটা ফিকে হয়ে যায়

বাস্তব বোধ নিয়ে বার্তা

বাস্তব বোধ কঠিন। তখন জীবনকে সত্যতার পথে  এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সত্যকে গ্রহণ করতে হবে।

জীবনদর্শন নিয়ে বার্তা

সত্যের অন্বষণ না করা পর্যন্ত আমরা চুপ করে বসে থাকব না, বা থাকা উচিত নয়।

লড়াই নিয়ে বার্তা

ভারত ডাকছে। রক্ত ডাক দিয়েছে রক্তকে। উঠে দাঁড়াও আমাদের নষ্ট করার মতো সময় নেই। অস্ত্র তোলো!.. যদি ভগবান চান, তাহলে আমরা শহীদের মৃত্যু বরণ করব।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস কে নিয়ে তৈরি সিনেমা

১) সুভাষচন্দ্র (১৯৬৬)

পীযুষ বোসের পরিচালনায় এই সিনেমায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের জীবন, তার শৈশব, কলেজে দিন, ICS পাস, প্রাথমিক রাজনৈতিক প্রচারণা এবং পুলিশ গ্রেফতার বর্ণনা আছে।

২) নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু: দ্যা ফরগটেন হিরো (২০০৪)

এই সিনেমায় জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী ও সুভাষ চন্দ্র বসুর মধ্যে মতাঐক্য এবং জার্মানিতে তার পালিয়ে যাওয়ার অভিনয়ের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল। এই সিনেমায় পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। সিনেমায় নেতাজি চরিত্র অভিনয় করেন শচীন খেদেকর, যিশু সেনগুপ্ত( শিশির বোস চরিত্র), কুলভূষণ খারবান্দা( উত্তমচাঁদ মালহোত্রার চরিত্র), দিব্যা দত্ত( ইলা বোস চরিত্রে) । 

৩) Bose dead/ Alive (2017)

এটি একটি টিভি সিরিজ। এই সিরিজের নয়টি অংশ আছে এবং সিরিজটিতে নেতাজির মৃত্যু রহস্য নিয়ে। একতা কাপুরের পরিচালনায় সিরিজটিতে সুভাষের চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ কুমার রাও।

৪) গুমনামি (২০১৯)

সৃজিত মুখার্জীর পরিচালনায় এই সিনেমায় নেতাজির চরিত্রে অভিনয় করেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এই সিনেমায় নেতাজির মৃত্যু রহস্য সহ তাঁর আত্মগোপন করে থাকার যে ইতিহাস সেই কাহিনী এই সিনেমায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

৫) দ্য ফরগটেন  আর্মি (২০২০)

সুভাষ চন্দ্র বসুর জীবনের ওপর সর্বশেষ ওয়েব সিরিজ ২৪ জানুয়ারি ২০২০-এ OTT তে প্রকাশিত হয়। কবির খানের পরিচালনায় ছয় পর্বের ডকুমেন্টারি বোসের ভারতীয় ন্যাশনাল আর্মির সৈন্যদের অজানা তথ্য। 

netaji movies
Netaji movies

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের রচনাবলী

  • The Indian  Struggle.
  • An Indian Pilgrim.
  • Congress President: Speeches, Article and Letter Jan 1938 – May 1939
  • Alternative leadership
  • The call of the Motherland, writings and speeches, 1923- 1929
  • Letter to Emilie Schenkl 1934- 1942
  • Essential writings of Netaji
  • Indias of a nation. SUBHAS CHANDRA BOSE.
  • Indian Struggle 1920- 1942
  • Azad Hind: writings and Speeches 1941-43
  • In Burmese Prisons: Correspondence May 1923- July 1926
  • Selected speeches of Subhas Chandra Bose.

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম কি?

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মায়ের নাম প্রভাবতী দেবী (১৮৬৯- ১৯৪৩)।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছদ্মনাম কি ছিল

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ছদ্মনাম  ছিল সাধক সারদানন্দ ।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কোথায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন?

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেছিলেন উড়িষ্যার কটক শহরে।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাবার নাম কি?

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বাবার নাম জনকীনাথ বসু (২৮শে মে, ১৮৬০- ২ রা ডিসেম্বর, ১৯৩৪), তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় আইনজীবী।

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন কবে?

১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৩ শে জানুয়ারি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জন্মগ্রহণ করেন।

২০২২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু কততম জন্মদিন?

২০২২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর  ১২৬ তম জন্মদিন ।

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।