জাতীয় শিশু দিবস । ভারত বাংলাদেশ ও অন্যান্য ২০২৪
শিশুরা বিশ্বের মূল্যবান সম্পদ এবং ভবিষ্যতের জন্য সর্বোত্তম আশা। প্রত্যেক শিশুর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক বিরাট সম্ভাবনা। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যত। আজকের শিশুরাই আগামীদিনে দেশের কর্ণধার হবে। শিশু দিবস (Children’s Day) পালনের মধ্যে দিয়ে আমরা সবাই শিশুদের প্রতি উচিত মনোভাব, ব্যবহার নিয়ে মিশতে পারি এবং তাদের বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারি সেই বিষয়ে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। ভারতে জাতীয় শিশু দিবস ১৪ নভেম্বর পালিত হয়।
প্রত্যেক বছর এই দিনটির মাধ্যমে শিশুদের অধিকার এবং শিক্ষা নিয়ে জাতির কাছে বার্তা পাঠানো হয় যাতে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, কন্যাভ্রূণ হত্যা, অশিক্ষা, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার ইত্যাদি কম হয়।
জাতীয় শিশু দিবস । ভারত বাংলাদেশ ও অনন্য
আন্তর্জাতিক শিশু দিবস
১৯২৫ সালে শিশু কল্যাণ বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলনের সময় জেনেভাতে প্রথম আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়েছিল।
১৯৪৯ সালের ৪ঠা নভেম্বর মস্কোর মহিলা আন্তর্জাতিক ডেমোক্র্যাটিক ফেডারেশন কর্তৃক শিশুদের সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫০ সাল থেকে পয়লা জুন বহু কমিউনিস্ট এবং উত্তর-পূর্ববর্তী কমিউনিস্ট দেশে শিশু দিবস হিসেবে পালিত হয়।পরে বিশ্ব শিশু দিবস ১৯৫৪ সার্বজনীন শিশু দিবস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং প্রতি বছর ২০ নভেম্বর পালিত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকাময় এবং বেদনাদায়ক স্মৃতি এই দিবসটির জন্ম দেয়। যুদ্ধের পর এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ-এ অনেক নিষ্পাপ শিশু মারা যায়। অনেক বড় বড় শহর ধ্বংসস্তূপ এ পরিণত হয় ফলে বহু শিশু অসহায় এবং পিতৃমাতৃহীন হয়ে পড়ে। বিশ্বযুদ্ধের পর শিশুরাই সবথেকে বেশি অবহেলিত, অত্যাচারিত হতে থাকে। অনেকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। এই কারণে জাতিসংঘ শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৫৯ সালে “শিশু অধিকার সনদ” প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিশু দিবস কেন পালিত হয় ?
শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য হল :
- শিশু ও কিশোরদের সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান করা।
- শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পথনির্দেশ করা।
- শিশুদের মৌলিক অধিকার সমন্ধে তাদের এবং সমস্ত নাগরিকদের সচেতন করা।
পড়ুন:- আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস | মে দিবস
ভারতের শিশু দিবস
স্বাধীনতার পর ভারতে জাতীয় শিশু দিবস ১৪ নভেম্বর পালন করা হয়। এই দিনটি চয়ন করা হয়েছিল “চাচা নেহেরু”-র মৃত্যু ১৯৬৪-এর পরে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু শিশুদের স্নেহ খুবই করতেন। তাই শিশুদের কাছে তিনি “চাচা নেহেরু” নামে সমাদৃত হয়েছিলেন। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেহেরু শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলার দিকে খুবই সচেতন ছিলেন। তিনি বলেছিলেন “আজকের শিশুরা আগামীদিনের ভারত বানাবে। আমরা যেভাবে তাদের গড়ে তুলব তা দেশের ভবিষ্যত নির্ধারন করবে”।
তার এই স্পষ্ট দৃষ্টি, শিশুদের প্রতি ভালোবাসা এবং তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়ার জন্য ভারতে শিশু দিবস পালিত হয়, নেহেরুর জন্মদিন ১৪ নভেম্বর-এর এই দিনটিতে। নেহেরুর মৃত্যুর আগে ভারতে জাতিসংঘের নির্বাচিত ২০ নভেম্বর দিনটি শিশু দিবস হিসাবে উদযাপন করা হত।
ভারতে শিশু দিবস-এ স্কুল এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুব মজার সাথে পালন করা হয়। শিশুদের জন্য দিনটিকে বিশেষ করে তোলার প্রচেষ্টা করা হয় বিভিন্ন সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। এইদিনে খেলনা, মিষ্টি, বিস্কুট, বই, লজেন্স এবং বিভিন্ন উপহার শিশুদের বিতরণ করা হয়। বিভিন্ন স্কুল-এ শিশুদের এই দিনটির গুরুত্ব বোঝানোর জন্য প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিশু দিবস সম্পর্কে রচনা লিখতে দেওয়া হয়।
বিগত বছরে কো-ভিড অতিমারীর কারণে শিশু দিবস সমবন্ধিত সমস্ত অনুষ্ঠান ভার্চুয়াল এবং ডিজিটাল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শিশুদের অধিকার এবং শিশুদের জীবনে কো-ভিড ১৯-এর প্রভাবের জন্য এই বছরের থিম ছিল “#গো ব্লু”। এই অভিযানের অধীনে রাষ্ট্রপতি ভবন এবং অন্যান্য প্রতীক স্মৃতিস্তম্ভগুলি নীল রঙে আলোকিত করা হয়েছিল। বিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের নিয়ে শিশুদের জন্য একটি ভার্চুয়াল কনসার্ট আয়োজিত করা হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের শিশু দিবস
শেখ মজিবুর রহমান ১৭ মার্চ ১৯২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ এবং সংস্কারক। তাঁর বিভিন্ন সংস্কারমূলক কাজকর্মের জন্য বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে “বঙ্গবন্ধু” অর্থাৎ বঙ্গের বন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিল। তিনি বাংলাদেশে “জাতির জনক” নামেও পরিচিত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন এবং পরবর্তীকালে ১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল থেকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী পদে ভূষিত ছিলেন। তাঁর জন্মদিনটি বাংলাদেশে শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়। এই বিশেষ দিনটিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক শিশু ও তাদের অবিভাবকের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেন। এই দিনটি বাংলাদেশে বিশেষভাবে পালিত হয়।
শিশুরা বিভিন্ন বর্ণের পোষাক পরে প্যারেড ও সমাবেশে অংশগ্রহণ করে। এই বিশেষ দিন জুড়ে বাংলাদেশের ইতিহাস উদযাপনের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি শিশুদের গুরুত্ব সমন্ধে দেশের নাগরিকদের সচেতন করা হয়। সরকারী ও বেসরকারি স্কুল ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই দিনটি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপিত করে।
আগের বছর কো-ভিড অতিমারীর কারণে স্কুল বন্ধ থাকলেও শিশু দিবস পালিত হয়েছিল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (শেখ মজিবুর রহমানের মেয়ে) ভিডিও কনফারেন্স-এর মাধ্যমে দেশের জনগণদের বক্তৃতা দেন। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কাজ সমবন্ধিত ২৫ টি বই শিশুদের প্রদান করেন।
বিগত বছরের বিশ্ব শিশু দিবস
কো-ভিড অতিমারীর কারণে শিশু অধিকার বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিশুদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তন, কো-ভিড এর প্রভাব পরিলক্ষিত করা –এই বিষয়গুলির সম্বন্ধে আলোচনা করা এবং সমাধান বের করাই ছিল বিগত বছরের শিশু দিবস এর মূল বিষয়। প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয় দেশের নাগরিকদের সচেতন করার জন্য যাতে প্রতিটি শিশু তাদের অধিকার, উপযুক্ত শিক্ষা ও পরিবেশ ঠিকমত পায়।
আগের বছর অতিমারীর জন্য সমস্ত সরকারী ও বেসরকারি বিদ্যালয় বন্ধ থাকার জন্য ভার্চুয়ালি বা অনলাইন এই দিনটিকে পালন করা হয়েছিল। এই বছর শিশু দিবস এর থিম ছিল “রিইমাজিন বেটার ফিউচার ফর এভরি চাইল্ড” অর্থাৎ প্রতিটি শিশুর উন্নত ভবিষ্যত পুনরায় কল্পনা করুন। এই থিমটির স্লোগান হল “মাস্কড বাট নট মিউটেড” অর্থাৎ “মুখোশযুক্ত তবে নিঃশব্দ নয়”। এই স্লোগানের মাধ্যমে এই বার্তা সকল বিশ্ববাসীদের কাছে পৌঁছানো হয়েছিল যে “জাতিভেদ, ঝগড়া বিবাদ না করে এসো একটা সুন্দর ও দূষণমুক্ত পৃথিবী ভবিষ্যতের প্রজন্মকে উপহার দিই” ।
কন্যা শিশু দিবস
আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয় ১১ ই অক্টোবর এবং ভারতীয় কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয় ২৪ শে জানুয়ারী। এই দিনটি কন্যা শিশুদের অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। ১১ই অক্টোবর আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। “নারী ও শিশু উন্নতসাধন মন্ত্রক” ২০০৮ সালে প্রথম এই দিনটি বিশেষভাবে পালন করার উদ্যোগ নেন। কন্যাদের প্রতি যৌন নিগ্রহ, পাচার, লিঙ্গ বৈষম্য ইত্যাদি বিষয় সকলের সামনে তুলে ধরা এবং এই বিষয়গুলির সচেতনতা তৈরি করার উদ্দেশ্যেই এই দিনটি পালন করা হয়।
কন্যা সন্তানদের অবস্থার উন্নতি করার জন্য ভারত সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যেমন “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও , সেভ দ্যা গার্ল চাইল্ড” ইত্যাদি। ভারত সরকার কন্যা শিশুদের নিখরচায় বা ভর্তুকি শিক্ষার মাধ্যমে লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাস করার নিরন্তন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অতিমারীর কারণে বিগত বছর কন্যা শিশু দিবস পালিত হয়েছিল অনলাইন এর মাধ্যমে। এই সালের থিম ছিল “মাই ভয়েস, আওয়ার ইকুয়াল ফিউচার” অর্থাৎ “আমার কন্ঠস্বর, আমাদের সমান ভবিষ্যৎ” । বিশ্বব্যাপী কন্যা সন্তানদের প্রতি মনোভাব পরিবর্তন, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
কিশোর দিবস
প্রতি বছর ২১ শে মার্চ জাতীয় কিশোর দিবস পালন করা হয়। ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়স অবধি সন্তানদের কিশোর/কিশোরী বলা হয়ে থাকে। এই সময় সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয় বলে তাদের বিশেষ করে যত্ন নেওয়া উচিত। এই দিনটি পালন করার উদ্দেশ্য হল নাগরিকদের বিশেষ করে অভিভাবকদের সচেতন করা তারা যেন তাদের সন্তানদের এই পরিবর্তন-এর সময় সঠিকভাবে দেখাশোনা করতে পারে। এই বয়েস থেকেই কিশোর/কিশোরী-দের লিঙ্গ বৈষম্য বিষয়ে সঠিক জ্ঞান প্রদান করলে ভবিষ্যতের নাগরিকরাও উন্নত মাসকিতার অধিকারী হতে পারবে।
পথ শিশু দিবস
এমন অনেক শিশু আছে যারা রাস্তায় বসবাস করে এবং বেঁচে থাকে। এদের প্রায়শই বড় রাস্তার ফুটপাতে, রেল স্টেশন-এ, বড় বড় শহরগুলির ব্রীজ-এর নিচে দেখতে পাওয়া যায়। এইসব হতভাগ্য শিশুরা পথ শিশু নামে পরিচিত। পথ শিশু বৃদ্ধি পাওয়ার প্রধান কারণ হল পারিবারিক দারিদ্র্য, হিংস্রতা, বেকারত্ব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অসম শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত দ্রুত নগরায়ণ, পারিবারিক বিছিন্নতা এবং শিক্ষার অভাব। ১২ই এপ্রিল দিনটি পথ শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়। ২০১১ সাল থেকে এই দিনটি প্রথম পালন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
এই দিনটি পালন করার মূল উদ্দেশ্য হল :
- পথ শিশুরদের সমান অধিকার প্রদান করা।
- পথ শিশুদের হিংস্রতা, যৌন হেনস্থা ও নির্যাতন থেকে রক্ষা করা এবং যদি তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে সঠিক আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পায়।
- অন্যান্য শিশুদের মত পথ শিশুরাও যাতে পড়াশোনা করতে পারে এবং রোগ হলে চিকিৎসা করাতে পারে।
- পথ শিশুদের প্রতিভাগুলিকে তুলে ধরা এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিকূলতাকে তারা যেন কাটিয়ে উঠতে পারে সেইদিকে নজর দেওয়া।
আগের বছর এই দিনটিতে এইসমস্ত শিশুদের খাবার, জামাকাপড় বিনামূল্যে বিতরণ করে পালন করা হয়েছে।
শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ
এই দিবসের কর্মসূচী এমনভাবে পালন করা উচিত যাতে দেশের সাধারণ মানুষ সমাজে শিশুদের স্থান ও ভূমিকা সম্বন্ধে সচেতন হন। কেবলমাত্র কাগজে কলমে লেখালেখি করে বাস্তবে সুফল পাওয়া অসম্ভব। শিশুদের সঠিক শিক্ষা প্রদান করলে তারা হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের আদর্শ নাগরিক। কুরুচিপূর্ণ পরিবেশ, অসৎ সঙ্গ এবং অনুপযুক্ত পরিবেশ একটি শিশুকে তথা ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে দিতে সক্ষম।
কোনো কোনো দেশে শিশুরা বেঁচে থাকার অধিকার পায় না। এর মূল কারণ দারিদ্র্য, অর্থনৈতিক সংকট, প্রকৃত শিক্ষার অভাব এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধি। শিশুমৃত্যুর পাশাপাশি এখন শিশুশ্রম, শিশু পাচার, যৌন হেনস্থা এবং কন্যাভ্রূণ হত্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। প্রত্যেক নাগরিকদের তাদের নিজ নিজ বাসস্থানের শিশুদের প্রতি সবরকম দায়িত্ব পালন করতে হবে ভবিষ্যতের দেশ গড়ার জন্য।
সমাজসেবী সংস্থার অবদান
বর্তমানে বিভিন্ন সমাজসেবী সংস্থা শিশুদের জন্য নিরন্তর পরিশ্রমের দ্বারা কাজ করে চলেছে। এদের মূল লক্ষ্য শিশুদের বেঁচে থাকা, রক্ষা করা এবং সামগ্রিক উন্নতি সাধন। শূন্য অর্থাৎ মাতৃগর্ভে সৃষ্টি থেকে ১৮ বছরের নিচে অবধি সমস্ত শিশুদের সুন্দর জীবন এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রদান করাটাই তাদের উদ্দেশ্য। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত “বাচপন বাঁচাও” সংস্থাটি যেসব শিশুরা পাচার ও শিশুশ্রমের শিকার হয়েছে তাদেরকে উদ্ধার করছে ।
সংস্থাটি সেইসব উদ্ধার করা শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ প্রদান এবং সমাজের মুলস্রোত-এ ফিরিয়ে আনার জন্য করার নিরন্তন পরিশ্রম করে চলেছে। এই সংস্থাটি গ্রামীণ এবং শহরের পরিবারের সাথে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে তারা এই বিষয়ে সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়।
কন্যাভ্রূণ হত্যা এবং কন্যা সন্তানদের শিক্ষার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে “সেভ দ্যা চিলড্রেন”-এর মত সংস্থাগুলি সরকারের “বেটি বাঁচাও, বেটি পাড়াও” প্রকল্পের সাথে কাজ করে চলেছে। ২০০৮ সালে ভারতে “বাল রক্ষা ভারত” হিসাবে নিবন্ধিত হয়েছিল এই সংস্থাটি এবং আজ অবধি তারা ১.১ কোটির বেশি শিশুদের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে।
প্রতিটি শিশু ফুলের কুঁড়ির মত সুন্দর। উপযুক্ত পরিবেশ এবং যত্ন পেলে যেমন একটি ফুলের কুঁড়ি তার অপরূপ সৌন্দর্যে বিকশিত হতে পারে ঠিক তেমনই একটি শিশু উন্নত, রুচিপূর্ণ পরিবেশ, যত্ন পেলে উন্নত ও আদর্শ নাগরিক হয়ে উঠতে পারে।
উপসংহার
বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এক দিন শিশু দিবস পালন করার পাশাপাশি আমাদের সকলকে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিটাদিন যেন একটিও শিশু অবহেলিত ও অত্যাচারিত না হয়। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ আরো বেশি করে নিতে হবে যাতে শিশুদের প্রতি সবরকমের নির্যাতন সমূলে বিনাশ হয়ে যায়। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে একটি বসবাসযোগ্য নির্মল সুন্দর পরিবেশ দেওয়ার দায়িত্ব এবং কর্তব্য আমাদেরই। আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে – “প্রাণপণে সরাব জঞ্জাল। এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি। নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার”। এর সাথেই সবাইকে জানাই –
শুভ শিশু দিবস !