দার্জিলিং বনাম গ্যাংটক | এখন কোনো বেস্ট ?
এই আর্টিকেলের মাধ্যমে , বাঙালির ভীষণ প্রিয়, দার্জিলিং ও গ্যাংটক (Darjeeling Tour vs Gangtok Tour)এই দুটি জায়গার, বিভিন্ন সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য আলোচনা করা হবে। সঙ্গে থাকছে আমার কিছু পার্সোনাল টিপস যেটা আপনাকে দার্জিলিং বা গ্যাংটক টুর , কম সময়ের মধ্যে কমপ্লিট করতে অনেক সাহায্য করবে।
এই দুটি জায়গাতে ই কোলকাতা থেকে ট্রেন, বাস বা নিজের গাড়িতে কিভাবে কম খরচে ও সহজে পৌঁছানো যেতে পারে

দার্জিলিং বনাম গ্যাংটক
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক কোথায় অবস্থিত?
দার্জিলিং, The Queen of Hills সমতল থেকে ২১৩৪ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ।
আর গ্যাংটক সিকিম এর রাজধানী সমতল থেকে ১৬৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর দূরত্ব
দার্জিলিং বা গ্যাংটক যেখানেই যান না কেন পশ্চিমবঙ্গের কোলকাতা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি অথবা শিলিগুড়ি স্টেশন এ আসতে হবে। সবচেয়ে কাছাকাছি এয়ারপোর্ট বাগডোগরা। স্টেশন থেকে দার্জিলিং এর দূরত্ব হচ্ছে ৭৩ কিলোমিটার মত ভায়া কার্শিয়াং রোড বা এনএইচ ১১০, গাড়িতে সময় লাগে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টার মত। সবচেয়ে কাছাকাছি এয়ারপোর্ট বাগডোগরা।
অন্য দিকে এনজিপি থেকে গ্যাংটক এর দূরত্ব হচ্ছে ১১৮ কিলোমিটার ভায়া এন এইচ ১০ এবং গাড়িতে সময় লাগে সাড়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার মতো।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক কিভাবে পৌঁছাবো ?
দার্জিলিং পৌঁছানোর জন্য শেয়ার কার পেয়ে যাবেন,এন যে পি থেকে দার্জেলিং শেয়ার কার এ ভাড়া ২৫০ টাকা পার হেড, আর শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসও পাওয়া যায় ১০৫ টাকা করে ভাড়া নেয়, আর যদি গাড়ি রিজার্ভ করে যেতে চান তখন ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজার টাকা নেয়।
গ্যাংটক এর জন্য শেয়ার কার এ ভাড়া ৭০০ টাকা পার হেড, আর শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক পৌঁছানর জন্য সিকিম ট্যুরিজম খুব ভালো এসি , নন এসি বাস পাওয়া যায় সেটা বুক করতে পারেন , এসি বাসে ৩৫০ টাকা করে ভাড়া নেয় পার হেড।
তবে বাসের বুকিং কিন্তু আগে থেকে করে নিতে হবে না হলে দিনের দিন গিয়ে বাসের বুকিং পাবেন না। বর্তমানে গো আই বিবো, রেড বাস , মেক মাই ট্রিপ এই পোর্টাল গুলি থেকে বাস টি বুক করা যাচ্ছে। আর গাড়ি রিসার্ভ করলে ৫০০০ থেকে ৬০০০ টাকা লাগবে। বাস, বাস স্ট্যান্ড অবধি যাবে আর গাড়ি দেওরালি কার স্ট্যান্ড অবধি যাবে, আর এখান থেকে আর একটি গাড়ি ধরতে হবে গ্যাংটক এর হোটেল এ পৌঁছানোর জন্য।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর সাইড সীন
দার্জিলিং যে সমস্ত লোকাল সাইড সীন গুলি আছে সেইগুলি ম্যাক্সিমাম ই খুব বেশি দূরে নয়। আর টুরিস্ট স্পট গুলি সহজেই দু-তিনদিনের মধ্যেই কভার করা হয়ে যায়। তাই তুলনা মূলক ভাবে গ্যাংটক এর থেকে দার্জিলিং সিডিসিইং এর খরচ অনেকটা কম l
অন্য দিকে গ্যাংটক এর টুরিস্ট স্পট গুলি একে অপরের থেকে বেশ কিছুটা দূরে তাই গাড়ি না বুক করে ঘোরা সম্ভব নয়, তাই এখানে গাড়ি ভাড়ার কস্টিংটা অনেকটা ই বেড়ে যায়।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর হোটেল
দার্জিলিং ও গ্যাংটক উভয় জায়গা তেই লাক্সারি হোটেলস, রিসোর্টস থেকে শুরু করে অজস্র বাজেট ফ্রেন্ডলি হোটেল, হোম স্টেই, হলিডে হোম পেয়ে যাবেন এছাড়াও খাওয়া দাওয়া শপিং ইত্যাদি সবকিছুর ই অপশন আছে ম্যাল এর চারপাশে।
তবে আমার মনে হয়েছে দার্জিলিঙ এর তুলনায় গ্যাংটক এর জিনিস পত্রের দাম ও খরচ একটু বেশি।এই সময় দার্জিলিং ম্যাল ও গ্যাংটক ম্যাল এর চারপাশে মিড্ বাজেট এর হোটেলের রেট মোটামুটি হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার মধ্যে চলছে ।
দার্জিলিং শৈল শহর টি বহু পুরনো একটি শহর, তার সঙ্গে সঙ্গে দার্জিলিংয়ের চা ও তার সুগন্ধ ও ফ্লেভার এর জন্য বিশ্ব বিখ্যাত। সুন্দর সবুজে ঘেরা পাহাড়, টয়ট্রেন, বিশাল বিশাল চা বাগান ও তার পাশাপাশি বহু মানুষের বসবাস, মার্কেট, গাড়ি ঘোড়ার সুবিধা ইত্যাদি সবই আছে দার্জিলিং এ।
এবার গ্যাংটকের কথা যদি বলি তাহলে গ্যাংটকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিন্তু এককথায় অনবদ্য। আর গ্যাংটকের মতো নিট এন্ড ক্লিন, ওয়েল মেন্টেন্স অর্গানাইজড এন্ড কমার্শিয়াল হিল স্টেশনে আমি খুব কম ই দেখেছি।
গ্যাংটকে টয়ট্রেন নেই তবে এখানকার নাথুলা পাস বিখ্যাত বরফে হুড়োহুড়ি করার জন্য।
গ্যাংটক ম্যাল ও দার্জিলিং ম্যাল
গ্যাংটক বা দার্জিলিং এই দুটি ম্যাল এই ইচ্ছামত কেনাকাটা, খাওয়া-দাওয়া, বসে গল্প করা আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি করে, দরকার হলে লাঞ্চ বা ডিনার ওখানেই সেরে হোটেলে ফিরে আসতে পারেন, দার্জিলিং এবং গ্যাংটক দুটোই কিন্তু খুব জমজমাট আর এই পুরো ম্যাল টাকে ঘিরে ই এই টাউন দুটি গড়ে উঠেছে।
আমার কিন্তু পার্সোনালি দার্জিলিং ম্যাল বেশি পছন্দএর । এখানে বসে পুরো একটা দিন কাটিয়ে ফেলা যায়। আর আকাশ পরিষ্কার থাকলে দার্জিলিং ম্যাল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘারও দারুন ভিউ ও পাওয়া যায়। দার্জিলিং ম্যাল এ বাচ্চারা চারপাশে ঘুরে বেড়াতে পারে তার সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়ার পিঠেও চাপতে পারে, দার্জিলিং ম্যাল থেকে একটু এগোলেই আপনারা মহাকাল টেম্পল, এন্ড্রুজ চার্চ এই সমস্ত জায়গাগুলো দেখে নিতে পারেন
যদি চান তাহলে জাকির হোসেন রোড এর দিক থেকেও আপনারা একটু ঘুরে আসতে পারেন এবং সেখানে খুব ভালো ভালো কুকিস, কেক ইত্যাদিও কিনতে পারেন।দার্জিলিং ম্যাল টা একদম সেন্টারে সেখান থেকে চারদিকে চারটে রাস্তা চলে যাচ্ছে এবং চারিদিকেই বিভিন্ন জিনিস আপনারা দেখেও নিতে পারবেন দোকানপত্র হোটেল সবকিছু ওই চারটে রাস্তার মধ্যে ই পেয়ে যাবেন।
আর গ্যাংটক ম্যাল টি অনেকটা মার্কেটপ্লেসের মত লাগে চারিদিকে প্রচুর বড় বড় দোকানপত্র আর মাঝখানে দুদিকে দুটি রাস্তা। আর গ্যাংটক ম্যাল এর কাছেই আছে গ্যাংটক রোপওয়ে সেটাও চড়ে নিতে পারেন ,
প্রসঙ্গত বলে রাখি দার্জিলিং এর লোকাল টুরিস্ট স্পট গুলি যেমন চিড়িয়াখানা, এবং ম্যাল আশেপাশের দোকান গুলি বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকে এবং গ্যাংটক mall এর আশেপাশের দোকান গুলি ও বৃহস্পতি বার বন্ধ তাই সেই ভাবেই প্ল্যান করুন।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর কোথায় বরফ পাবো ?
যদি বরফে হুড়োহুড়ি করার ইচ্ছা থাকে তাহলে গ্যাংটক বেস্ট।
যদি স্নো নিয়ে ইনজয় করতে হয় তাহলে গ্যাংটক থেকে নাথুলা পাশ,ছাঙ্গু লেক, নিউ বাবা মন্দির এই টুর টি করতে পারেন। নাথুলা পাস এ সারা বছরই বরফ পাবেন। গ্যাংটক থেকে নাথুলা পাস এর দূরত্ব হলো ৬০ কিলোমিটার মতো ।
আর দার্জিলিং থেকে যদি বরফ দেখতে যেতে হয় তাহলে কিন্তু সান্দাকফুর দিকে যেতে হবে নভেম্বর থেকে জানুয়ারী এই সময়, এবং দার্জিলিং থেকে সান্দাকফু প্রায় ৭৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক ভ্রমণ করার সেরা সময়
দার্জিলিং ও গ্যাংটক বেড়াতে যাওয়ার জন্য সেরা দুটি টাইম হচ্ছে, মার্চ থেকে মে পর্যন্ত অর্থাৎ বসন্তের শেষ ও গ্রীষ্মের শুরু এই সময়টি এবং অন্যটি হচ্ছে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে অর্থাৎ শরৎকালের সময়।
মার্চ থেকে মে য়ে এই সময়টিতে গেলে হালকা ঠান্ডা থাকে, ১২ থেকে ২৫ ডিগ্রিরএর মধ্যেই থাকে, এই সময় টি হলো দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর পিক সিজন।
জুন থেকে অগাস্ট পর্যন্ত দার্জেলিং এবং গ্যাংটক এ মনসুন বা রেইনি সেসন, এই সময় এই দুটি জায়গা একটু এড়িয়ে যাওয়ায় ভালো, কারণ পাহাড়ি জায়গায় ল্যান্ড স্লাইড হয় এ রোড ব্লক এর খুব সম্ভবনা থাকে। আর একটা কারণ হচ্ছে বর্ষার সময় পাহাড়ি রাস্তায় গাড়ি চালানো খুবই বিপদজনক। যখন তখন মেঘ এসে চারিদিকে ঢেকে ফেলে রাস্তা পরিষ্কারভাবে দেখা যায় না,
তবে বর্ষার সময় পাহাড়ি জর্নাগুলি যেন জেগে ওঠে আর দেখতেও অপূর্ব লাগে , এবং বৃষ্টির জল পেয়ে পাহাড়গুলি সবুজে ঢেকে যায় সেই সময় পাহাড়ি এলাকা গুলির অন্য রূপ দেখা যায়।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর প্রাকৃতিক দৃশ্য
গ্যাংটকের চারপাশে প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি মনোরম এবং এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি শহর যেটা না দেখলে ভাবাই যায় না। এই জন্যই সিকিম কে ক্লিন এন্ড গ্রিন স্টেট অফ ইন্ডিয়া বলা হয়।
অপর দিকে দার্জিলিং বেশ ঘিঞ্জি এবং চারপাশের রাস্তা আরো বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হলে ভালো হয় , আর দার্জিলিংয়ের রাস্তায় যখন ঘোরাঘুরি করি তখন পাহাড়ের গা বেয়ে আসা আবর্জনা এবং নোংরা জল দেখতে একদমই ভালো লাগে না।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর রোপওয়ে
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এই দুটি জায়গার ই রোপওয়ে রাইড টি দারুন এক্সসাইটিং, এটা অবশ্যই এনজয় করবেন খুব ভালো লাগবে।
দার্জিলিং এর রোপওয়ে রাইড টা তো মিস করবেনই না এখানে রোপওয়ে টি চা বাগানের উপর দিয়ে যায় এবং উপর থেকে খুব সুন্দর দেখতে লাগে , অন্যদিকে গ্যাংটকের যে রোপওয়ে টি আছে সেটি দেখতে অনেকটা বড় কেবিনের মত এবং রোপওয়ে থেকে পুরো গ্যাংটক শহরের দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায় সেটা দেখতেও কিন্তু অনবদ্য লাগে ।
দার্জিলিং এবং গ্যাংটক এর পারমিট
গ্যাংটকে লোকাল সাইট সিন করবার সময় যেইদিন আপনার নাথুলা পাশের দিকে যাবেন মানে যেখানে ইন্ডো চায়না বর্ডার আছে সেই দিকে যেতে হলে আপনাদেরকে কিন্তু তার আগে পারমিট করাতে হবে তারপরে আপনারা যেতে পারবেন। এবং পার্মিট করতে কিন্তু অবসই ভোটেরকার্ড লাগবে আধারকার্ড এ হবে না।
দার্জিলিঙে কিন্তু এইসব পারমিটের কোন ব্যাপার নেই দার্জিলিং এ আপনারা যেখানে ইচ্ছা সাইট সিন করতেই পারেন ।