মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ

কোলকাতা থেকে উইকএন্ড এ ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা দীঘা বা মন্দারমণি। মাত্র ৪ ঘন্টার মধ্যে খুব সহজেই মন্দারমণি সি বিচ (Mandarmani sea beach) পৌঁছানো যায়। মাছভাজা, কাঁকড়া খেতে খেতে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত সমুদ্র স্নান, দেখতে দেখতে ২ দিন কিভাবে কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না।

মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত ভ্রমণ
মন্দারমনি সমুদ্র সৈকত
Digha VS Mandarmani

মন্দারমণি কোথায়?

মন্দারমণি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সমুদ্র উপকূলের একটি বিশেষ পর্যটন কেন্দ্র। এটি বঙ্গোপসাগরের উত্তরপ্রান্তের পশ্চিমবঙ্গের সব থেকে বড় সমুদ্র উপকূলবর্তী জায়গা। মোহনায় হল এখানের প্রধান আকর্ষণ। মন্দারমনির সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় মন ভরিয়ে দেয়। সমুদ্র উপকূলে গঙ্গাসাগর বা বকখালি বিচের মতো নিরিবিলিতে ছুটি কাটানোর সব থেকে সুন্দর ভ্রমণ গন্তব্য হল মন্দারমণি।

এখানে রাস্তার পাশে রয়েছে কৃত্রিম ভাবে তৈরী বিশ্ব বাংলার গ্লোব যা পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। সমুদ্র সৈকতে যাবার রাস্তার দু পাশে বাজারও পাবেন। মাত্র ২০ বছরের মধ্যে এই সমুদ্র সৈকত হয়ে উঠেছে পর্যটকদের বিশেষ আকর্ষণের জায়গা। পর্যটকরা গভীর সমুদ্রে যাতে চলে না যায় তার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।

মন্দারমনি এবং দিঘার প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলি

মন্দারমণি সমুদ্র সৈকত: কলকাতা থেকে মন্দারমণি সি বিচের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। বিচটি দীঘা এবং শঙ্করপুর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ এই বিচকে মাতিয়ে রেখেছে। মন্দারমনিতে, মন্দারমনি বিচ ছাড়াও আরো অনেক ঘোরার জায়গা আছে। ডিসেম্বর – জানুয়ারী এবং মে- জুন মাস হল মন্দারমণিতে ছুটি কাটানোর আদর্শ সময়।

তাজপুর সমুদ্র সৈকত: মন্দারমণি ও দিঘার সমুদ্র সৈকতের পর যে সমুদ্র সৈকতের নাম আসে তা হল তাজপুর সমুদ্র সৈকত। দিঘা থেকে তাজপুরের দূরত্ব মাত্র ১৫ কিমির মত। দিঘা থেকে বালাসাই হয়ে তাজপুর আসতে ৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে। আর মন্দারমণি বিচ থেকে আসতে সময় লাগে ১ ঘটার মতো।

চাঁদপুর সমুদ্রতট: দিঘা বা মন্দারমণি বিচ থেকে সরাসরি চাঁদপুর আসা যায় না। নিজস্ব বা ভাড়ার গাড়িতেই আসতে হয়। বিস্তীর্ণ এবং নির্জন সমুদ্রতটে প্রাতঃ ভ্রমণ এক আলাদা অনুভূতি নিয়ে আসে। এই বিচ থেকে মাত্র ৩ কিমি দূরে আছে বুড়িবালাম নদী। বিচের চারপাশে লাল কাঁকড়ার দলকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। শান্ত নির্জন বিচ আপনার মন জুড়িয়ে দেবে।

জুনপুট সমুদ্র সৈকত: জুনপুট মন্দারমণি থেকে মাত্র ৪৫ মিনিটের রাস্তা। হাতে সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন জুনপুট। তবে জল খুব এ কম পাবেন।

বগুরান জলপাই: দীঘা থেকে ৪৫ কিমি আর মন্দারমণি থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে আছে বগুরান জলপাই। এটি নতুন হয়েছে।

লাল কাঁকড়া বিচ: মন্দারমণি বিচ থেকে মাত্র ৮ মিনিটের দূরত্বে পেয়ে যাবেন আর একটি বিচ। যার নাম লাল কাঁকড়া বিচ। লাল কাঁকড়া বিচ হল মন্দারমনির ব-দ্বীপ, যেখানে নদী বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।

কপালকুণ্ডলা মন্দির: মন্দারমণি থেকে ২৩ কিমির মধ্যে পাবেন কপালকুণ্ডলা মন্দির। এটি ছিল বিখ্যাত উপন্যাসিক বঙ্কিম চন্দ্র চ্যাটার্জীর লেখা কপালকুণ্ডলা উপন্যাসের সেই বিখ্যাত মন্দির।

দরিয়াপুর লাইট হাউস: মন্দারমণি থেকে ঘুরে আসতে পারেন দরিয়াপুর লাইট হাউস। যেতে সময় লাগে ১ঘন্টার মতো। মন্দারমণি বিচ থেকে নিজস্ব বা ভাড়ার গাড়িতে আসতে হবে চাউলখোলা মন্দারমণি রোড। সেখান থেকে NH 116B রোড হয়ে বাসন্তিয়া বেঁইচাল রসুলপুর রোড হয়ে দরিয়াপুর লাইট হাউস আসতে হয়। পথেই পেয়ে যাবেন কপালকুণ্ডলা মন্দির।

Mandarmani Hotels and Resorts

কলকাতা থেকে মন্দারমনির দূরত্ব

কলকাতা থেকে মন্দারমনির সড়ক পথের দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিমি, এবং সময় লাগে প্রায় ৫ ঘন্টা। কাঁথি থেকে চাউলখোলা হয়ে মন্দারমণি কাঁথি স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাসে চাউলখোলা। চাউলখোলা থেকে মাত্র ১২ কিমি রাস্তা। চাউলখোলা থেকে অটো ভাড়া করলেই পৌঁছে যাবেন মন্দারমণি। একজনের ভাড়া লাগে ৩০ টাকার মতো।

কলকাতা থেকে ট্রেনে মন্দারমণি

মন্দারমণির সব থেকে কাছের রেল স্টেশন হলো দিঘা বা কাঁথি। হাওড়া স্টেশন থেকে কয়েক ঘন্টা ছাড়া ছাড়া কাঁথি বা দিঘা যাবার ট্রেনগুলি পাওয়া যায়। কাঁথি বা রামনগর নেমে অটো ভাড়া করলেই পৌঁছে যাবেন দিঘা।

ট্রেন ভাড়া কত?

হাওড়া দিঘা স্পেশাল ট্রেনে বা তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস এ দীঘা যেতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো। এটি সব থেকে সস্তার ট্রেন রুট। এটিতে একজনের ভাড়া লাগে ১০৫ টাকা। ট্রেনটি সকাল ৬:৫০ এ হাওড়া থেকে ছাড়ে এবং সকাল ১০:৩০ এর মধ্যেই দিঘা পৌঁছে যায়।
ফারিয়া এক্সপ্রেসএ একজনের ভাড়া লাগে ১৪০ টাকা।
দিঘা সুপার এ সি এক্সপ তে একজনের ভাড়া লাগে ৫৪৫ টাকা।
এছাড়াও আছে কান্ডারি এক্সপ।

কলকাতা থেকে বাসে মন্দারমণি

WBTC বা যেকোনো প্রাইভেট বাসে মন্দারমণি যেতে হলে চাউলখোলা বা দিঘা হয়েই মন্দারমণি যাবার রাস্তাটি হবে, সব থেকে কম সময় সাপেক্ষ।
এস্প্লানেড, গড়িয়াহাট, বা হাওড়া থেকে আমরা সহজে বাসগুলি পেতে পারি। তারপর চাউলখোলা বা দিঘা থেকে যে কোনো অটো নিলেই পৌঁছে যাবেন মন্দারমনির সমুদ্র তীরে।

বাস ভাড়া কত?

রেড বাসএ কলকাতার এস্প্লানেড থেকে মন্দারমণি যাবার একজনের ভাড়া সাধারণত ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। ভলভো এ সি বাসে একজনের ভাড়া লাগে সব থেকে কম ২৯৫ থেকে ৪৫০ টাকার মধ্যে।
WBTC (CTC) তে একজনের ভাড়া লাগে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
প্রাইভেট বাস (নন এ সি) তে একজনের ভাড়া হলো ৩৫০ টাকা।

Mandarmani Sea Beach

নিজের গাড়িতে কলকাতা থেকে মন্দারমণি

বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে প্রথমে NH-১৬ ধরে কোলাঘাট। সেখান থেকে NH-১৬ হয়ে নন্দকুমার। তারপর দিঘা যাবার রোডেই পড়বে চাউলখোলা। চাউলখোলা বাস স্ট্যান্ডএ এসে মেইন্ রোড দিয়ে চললেই মন্দারমণি পৌঁছে যাবেন। আগে বিচ এর উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত কিন্তু এখন তা নিষিদ্ধ।
কি ভাবে তাজপুর যেতে পারি?

হাতে অতিরিক্ত সময় থাকলে খুব সহজেই মন্দারমণি থেকে তাজপুর ঘুরে আসা যায়। মন্দারমণি বিচ থেকে তাজপুর আসতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। চাউলখোলা মন্দারমনি রোড এবং NH116B ধরে আসলেই পৌঁছে যাবেন তাজপুর। মন্দারমণি বিচ থেকে যেকোনো ভাড়ার ট্যাক্সি বা অটো পেয়ে যাবেন তাজপুরের জন্য।

দীঘা থেকে কি ভাবে মন্দারমণি যেতে পারেন?

দিঘা থেকে কোলকাতা গামী যে কোনো বাসে উঠে পৌঁছে যান চাউলখোলা। এখান থেকে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন তাজপুর, শঙ্করপুর, মন্দারমণি।

খড়্গপুর থেকে মন্দারমণি?

খড়গপুর থেকে মন্দারমনির দূরত্ব ১৫৯ কিমি এবং সড়ক পথে আসতে সময় লাগে সাড়ে তিন ঘন্টার মতো। তিন ভাবে সড়ক পথে খড়গপুর থেকে মন্দারমণি আসতে পারেন ট্রেন, ট্যাক্সি, এবং নিজেস্ব গাড়ি।
ট্রেনে আসতে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা। প্রথমে খড়গপুর জং থেকে ট্রেনে কাঁথি আসতে হবে সময় লাগে ২ ঘন্টা। ট্রেনে একজনের ভাড়া লাগে ১১০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে। এরপর কাঁথি থেকে ট্যাক্সি বা অটো নিলেই পৌঁছে যাবেন মন্দারমণি।
এছাড়াও বিমান পথে এই দূরত্ব ৯০ কিমি। খড়গপুর থেকে মন্দারমণি আসার সব থেকে কাছাকাছি এয়ারপোর্টটি হলো নেতাজি সুভাষ। মানে কলকাতা থেকেই আপনাকে আসতে হবে।

রাঁচি থেকে ট্রেনে মন্দারমণিতে

ট্রেনে রাঁচি থেকে মন্দারমণি আসতে ১ দিন ২ ঘন্টার মতো সময় লাগে। রাঁচি জং থেকে হাওড়া জং থেকে আসতে হবে এস্প্লানেডে এবং সেখান থেকে চাউলখোলা যাবার বাস পাবেন। এরপর চাউলখোলা থেকে অটোতে পৌঁছে যাবেন মন্দারমণির সমুদ্রতটে। এটিই সব থেকে সস্তার রুট।

টাটানগর থেকে মন্দারমণি

টাটানগর জং থেকে হাওড়া ট্রেনে আসতে হবে হাওড়া জং। সেখান থেকে এস্প্লানেডে এসে একই ভাবে চাউলখোলা হয়ে মন্দারমণি যাওয়া যায়।

কোনটা ভালো দিঘা না মন্দারমণি?

যারা সমুদ্র সৈকতের নির্জনতা বেশি উপভোগ করেন তাদের জন্য সব থেকে ভালো জায়গা মন্দারমণি। সেই তুলনায় দিঘা বেশি জনবহুল।
কিন্তু দীঘাতে অনেক বেশি খাবার এবং ঘোরার জায়গা আছে। সেই তুলনায় মন্দারমণি একটু পিছিয়ে।
যারা সমুদ্র ভালোবাসেন অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন বাংলার জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত মন্দারমণি। খুব কম সময়ের জন্য ছুটি কাটানোর আদর্শ জায়গা হলো মন্দারমণি।

অবিবাহিত দম্পতিদের জন্য মন্দারমণি কতটা নিরাপদ

হোটেল ভাড়া করার আগে অবশ্যৈ দেখা উচিত সেটি কতটা নিরাপদ।
অবিবাহিত হলে সেটি আরো জরুরি হয়ে পরে। প্রমানযোগ্য পরিচয়পত্র সাথে থাকলে আপনি মন্দারমনির যে কোনো হোটেল বুক করতে পারেন।

মন্দারমণিতে সমুদ্রের কাছে কিছু ভালো রিসর্ট/ হোটেল

সানভিউ রিসর্ট: সোনামুই, মন্দারমণি,পশ্চিমবঙ্গ ৭২১৪৫৫ যোগাযোগ নো:০৯৮৩১৬ ৩২৫৮৯

গোল্ডেন বিচ রিসর্ট: মন্দারমণি বিচ রোড সোনামুই দাডানপাত্রবার , মন্দারমণি , পশ্চিমবঙ্গ ৭২১৪৫৫
যোগাযোগ নো:০৯১৬৩২ ২৫৯১৩

এই সমস্ত রিসর্টে গাড়ি পার্কিং এবং বাচ্চাদের জন্য প্লে গ্রাউন্ড, সুইমিং পুল ও পেয়ে যাবেন।

MandarMani tour from Kolkata

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।