অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Abanindranath Thakur biography in Bengali) ছিলেন একজন প্রকৃত ভারতীয় শিল্পী । তিনি শিশু সাহিত্যের প্রখ্যাত লেখক এবং ভারতীয় শিল্পে স্বদেশী মূল্যবোধের প্রথম প্রবক্তা। তিনিই সেই প্রথম শিল্পী যার হাত ধরে ভারতীয় চিত্রকলায় নবজাগরণ ঘটেছিল। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিল্প ভাবনা সকলের থেকে বেশ আলাদা ছিল, যা তার অগ্রগতির পথকে আরোও প্রশস্ত করেছিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনী

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর – জন্ম ও পরিবার

গুনেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং সৌদামিনী ঠাকুরের সন্তান অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ব্রিটিশ ভারতের কলকাতার জোড়াসাঁকোতে ১৮৭১ সালের ৭ই অগাস্ট। তাঁর ঠাকুরদা ছিলেন গিরীন্দ্রনাথ ঠাকুর, “প্রিন্স” দ্বারকানাথ ঠাকুরের দ্বিতীয় পুত্র। তিনি ছিলেন সম্পর্কে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নে এবং বিশিষ্ট ঠাকুর পরিবারের সদস্য।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দুই ভাই গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, সমরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও একটি বোন ছিল সুনয়নী দেবী। তাঁর ঠাকুরদা এবং তাঁর বড় ভাই গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরও শিল্পী ছিলেন। কাকা জ্যোতিরিন্দ্রনাথও পোর্ট্রেট আঁকতেন ।

একজন বিশিষ্ট শিল্পী গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট ভাই হওয়ায় অবনীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের প্রথম দিকে শিল্পের সাথে পরিচিত হন। যেহেতু তিনি বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের মধ্যে বড় হয়েছেন, শিল্প ও সাহিত্য সবসময়ই তাঁর শৈশবের একটি অংশ ছিল। অবনীন্দ্রনাথের ছদ্মনাম ছিল – রসুল আলী।

১৮৮৯ সালে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিয়ে হয় শ্রীমতি সুহাসিনী দেবীর সাথে। তাঁদের এক ছেলে অলোকেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দুই কন্যা সুরূপা ও উমা। তিনি কলকাতার সংস্কৃত কলেজে যখন পড়ছিলেন, তখন তিনি শিল্পের খুঁটিনাটি শিখতে শুরু করেছিলেন। ১৮৮৯ সালে তাঁর বিয়ের পর সংস্কৃত কলেজ ছেড়ে দেন, যেখানে তিনি গত নয় বছর অধ্যয়নরত ছিলেন এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে যোগদান করেন এবং দেড় বছর ইংরেজি অধ্যয়ন করেন।

১৯৫১ সালের ৫ই ডিসেম্বর কলকাতায় তাঁর মৃত্যু হয়, এখানেই তিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছিলেন।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগান বাড়ি

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাগান বাড়ি কোন্নগর বাগানবাড়ি নামেও পরিচিত। কোন্নগর বাগানবাড়ি হুগলি জেলার শ্রীরামপুর মহকুমার কোন্নগরে অবস্থিত। এটি ১৮৭০-এর দশকে গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর নির্মাণ করেছিলেন। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ও লেখক অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন গুণেন্দ্রনাথের পুত্র। অবনীন্দ্রনাথ পশ্চিমবঙ্গের কোন্নগর বাগানবাড়ির বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর ‘আপন কথা’ ও ‘ঘরোয়া’ দুটি বইয়ের লেখাতে।

গুণেন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বাগান-ঘর নির্মাণ, আসবাবপত্র এবং শিল্পকর্ম দিয়ে সাজাতে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছিলেন। এগুলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আনা হয়েছিল। এই শিল্পকর্মগুলির মধ্যে সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল একটি ঝর্ণা, যা পুরোপুরি স্ফটিক দিয়ে খোদাই করা।

গুণেন্দ্রনাথের অকাল মৃত্যুর পর, কোন্নগর বাগানবাড়িও ঠাকুর পরিবার থেকে অন্যের হাতে চলে যায়। যদিও বাড়িটি এখনও টিকে আছে কিন্তু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণিত ভাস্বরত্ব হারিয়ে গেছে।
ঠাকুর পরিবারের ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত এই স্থানটিকে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন ২০০৭ সালের ২৮শে মে ঐতিহ্যপূর্ণ স্থান হিসাবে ঘোষিত করেছে।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাগানবাড়ির মূল ভবন
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাগানবাড়ির মূল ভবন

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ির পথনির্দেশ

জি টি রোড ধরে গিয়ে ধাড়সা পেট্রোল পাম্প পেরোলেই শ্রীরামপুরের দিকে যাবার সময় কোন্নগর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ পার হয়ে আর একটু এগিয়ে গেলেই উল্টোদিকে একটা গলি ঢুকে যাচ্ছে। ওই গলির শেষেই গঙ্গার ধারে এই অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িটি পেয়ে যাবেন।

ঠিকানা – 2, মীরপাড়া লেন, পোস্ট – কোন্নগর।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িটি টাইমিং ও এন্ট্রি ফী

জনসাধারণের জন্য পার্ক তথা বাগানবাড়ি টি খোলার সময় হলো সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ২ টো পর্যন্ত আবার দুপুর ৩ টে থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।
এখনো পর্যন্ত কোনো এন্ট্রি ফী লাগে না।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়িটি তে কি কি দেখার জিনিস আছে

  1. গঙ্গা নদীর ধারে সুন্দর একটা বাগান বাড়ি তাই চার পাশের এবং পরিবেশ দৃশ্য খুব সুন্দর।
  2. বাগানবাড়িটি তে ঢুকেই ডানদিকে অফিসঘরে অনেক পুরনো দিনের ছবি এবং কিছু ঐতিহাসিক জিনিস রাখা আছে যাও অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে সম্পর্কযুক্ত।
  3. মূল ভবনের ভেতরে পুরনো দিনের অনেক ছবি আছে যেগুলো ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম।
  4. ছোট বাচ্চাদের জন্য দোলনা এবং স্লিপ এ চড়ার সরঞ্জাম রয়েছে।
  5. গঙ্গার ধারে বসে বায়ু সেবন করার জন্য বসার কয়েকটি বেঞ্চ করা আছে।
  6. বাগান বাড়ি সংলগ্ন গঙ্গার একটি সুন্দর ঘাট আছে। এছাড়াও সব মিলিয়ে কয়েক ঘণ্টা কাটানোর জন্য এই জায়গাটা একদম আদর্শ।

ভারতীয় শিল্পকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদানগুলি হল

ভারতীয় শিল্পকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বহু অবদান রয়েছে। তিনি ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট, বেঙ্গল স্কুল অফ আর্টের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাই তাঁকে ‘ইন্ডিয়ান সোসাইটি অফ ওরিয়েন্টাল আর্ট’-এর জনক বলা হয়। এছাড়া চিত্রকলা ও সাহিত্যেও তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট

বেঙ্গল স্কুল অফ পেইন্টিং এর উন্নয়নে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট -এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যা আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ভারতীয় শিল্পীদের উপর ইংরেজ প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করা। তিনি তাঁর কাজগুলিতে ভারতীয় উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। এমনকি ব্রিটিশ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি তাদের সংগঠনে তাঁর রচনাশৈলী গ্রহণ করেছিল এবং সেটি শেখানো ও প্রচার করার জন্যও রাজি হয়েছিল।

মুঘল এবং রাজপুত চিত্রকলার আধুনিকীকরণের তাঁর ধারণা অবশেষে আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার জন্ম দেয়, যা বেঙ্গল স্কুল অফ আর্টে শুরু হয়েছিল। তাই তাঁকে ‘আধুনিক ভারতীয় শিল্পের জনক’ হিসেবেও সমাদৃত করা হয়।

ভারতীয় চিত্রকলায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তিনি ১৮৯০ সালে বিখ্যাত কলকাতা স্কুল অফ আর্টে ভর্তি হন। সেখানে তিনি ইউরোপীয় শিল্পী, ওলিন্টো গিলার্ডি এবং চার্লস পামার দ্বারা প্রশিক্ষিত হন। তিনি গিলার্ডির থেকে পেস্টেল ব্যবহারের দক্ষতা এবং চার্লসের কাছ থেকে তৈলচিত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। ১৮৯৭ সালের কাছাকাছি সময়ে সরকারি স্কুল অফ আর্টের উপাধ্যক্ষের কাছ থেকে তিনি ইউরোপীয় চিত্রকলায় ব্যবহৃত কৌশল সহ আরো বিভিন্ন কৌশল শিখেছিলেন। তখনই তাঁর জলরঙের প্রতি বিশেষ আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।

অবনীন্দ্রনাথ তাঁর রচনায় চীনা এবং জাপানি ক্যালিগ্রাফিক ঐতিহ্যকেও নিজ স্টাইলে একত্রিত করতে শুরু করেছিলেন। তাঁর ছবির কিছু সংগ্রহ বহু দিন রাখা ছিল কলকাতার রবীন্দ্রভারতী সোসাইটিতে। বর্তমানে তাঁর আরও ছবি রয়েছে কলকাতার ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া মিউজিয়াম, দিল্লির ন্যাশনাল গ্যালারি, শান্তিনিকেতনের কলাভবন এবং এছাড়াও দেশ বিদেশের বহু ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সংগ্রহালয়ে।

তাঁর আধুনিক ভারতীয় শিল্প আরো অনেক চিত্রশিল্পীকে প্রভাবিত করেছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এবং বিশিষ্ট হল নন্দলাল বসু, অসিত কুমার হালদার, ক্ষিতীন্দ্রনাথ মজুমদার, মুকুল দে, মনীষী দে এবং যামিনী রায়।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা বিখ্যাত চিত্র ভারত মাতা

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯০৫ সালের আঁকা চিত্র ভারত মাতা। যেখানে একটি গেরুয়া কাপড় পরিহিত নারীকে দেখানো হয়েছে। তার চারটি হাতের প্রত্যেকটি হাতে পৃথকভাবে বই, ধানের গোছা, সাদা কাপড়ের টুকরা এবং একটি মালা আছে।

পেইন্টিংটি ঐতিহাসিক মূল্যবোধের কারণেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়, এটি ভারত মাতার ধারণার বিবরণে সাহায্য করেছিল। চিত্রটি ভারতীয় ঐতিহ্যকে প্রতিফলিত করে, যা তাঁর বেশিরভাগ রচনায় লক্ষ্য করা যায়।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জলরং এ আঁকা ভারত মাতার ছবি
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জলরং এ আঁকা ভারত মাতার ছবি

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর অল্প বয়সে আঁকা শুরু করলেও ১৮৯০ -এর দশকের শেষের দিকে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। তাঁর বেশিরভাগ কাজই হিন্দু দর্শন এবং অন্যান্য ভারতীয় বিষয়কে ঘিরে আবর্তিত হয়েছিল।

১৮৯০ সালের শুরুর দিকে সাধনা পত্রিকা, চিত্রাঙ্গদা এবং রবীন্দ্রনাথের অন্যান্য রচনায় তাঁর আঁকা প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯৩০ সালে, তিনি ‘আরাবিয়ান নাইটস’ শিরোনামে একটি সিরিজের পেইন্টিং করেছিলেন। আজও, পেইন্টিংয়ের এই সংগ্রহ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এছাড়াও মুঘল রীতিতে কৃষ্ণ লীলা সিরিজেরও বহু চিত্র অঙ্কন করেছিলেন তিনি।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা কয়েকটি বিখ্যাত ছবি হল অভিসারিকা, পাসিং অফ শাহজাহান, বুদ্ধ এবং সুজাতা, সামার- কালিদাসের রিতু সংঘর থেকে, মাই মাদার, গনেশ জননী, কৃষ্ণের জন্ম, মুনলাইট মিউজিক পার্টি, দ্য ফিস্ট অফ ল্যাম্পস, শাহজাহান ড্রিমিং অফ তাজ প্রভৃতি।

পড়ুনকলকাতা জাতীয় গ্রন্থাগার

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত বই ও প্রবন্ধসমূহ

কেবল চিত্রশিল্পী নয় অবনীন্দ্রনাথকে একজন দক্ষ লেখক হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে তাঁর লেখালেখির শুরু। তাঁর অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম ছিল শিশুদের জন্য। তাঁর কিছু বই যেমন ‘বুড়ো আংলা’, ‘ক্ষীরেরপুতুল’, ‘শকুন্তলা’ এবং ‘রাজকাহিনী’ বাংলা শিশুসাহিত্যের সেরা উদাহরণ। আবার বড়দের জন্য লিখেছিলেন ‘বাংলার ব্রত’, ‘কথিকা’, ‘আপন কথা’র মতো প্রবন্ধ। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘অবন ঠাকুর’ নামেই বেশি পরিচিত।

অন্যান্য বিশিষ্ট কাজগুলির মধ্যে রয়েছে ঘরোয়া, পথে বিপথে, জোড়াসাঁকোর ধারে, ভূতপাত্রী, নলাকা এবং নহুশ। অবনীন্দ্রনাথ শিল্পের তত্ত্ব এবং দর্শনের উপর প্রবন্ধও লিখেছেন যা শিল্পী এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছ থেকে প্রচুর সম্মান এবং প্রশংসা অর্জন করেছিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা বই বুড়ো আংলা
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা বই বুড়ো আংলা

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস – রাজকাহিনী

রাজ কাহিনী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বিখ্যাত ঐতিহাসিক উপন্যাস। এটি রাজাদের গল্পের একটি জনপ্রিয় ধারা যা ১৯০৫ সালে তিনি লিখেছিলেন। এতে রাজস্থানের বিভিন্ন রাজাদের সম্পর্কে নয়টি গল্প রয়েছে। এই বইটিকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্যতম সেরা ঐতিহাসিক বই হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বইটি ১৯৬৩ সালে প্রথম প্রকাশ দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর জীবনী
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা বই রাজকাহিনী

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা – আপন কথা

আপন কথা একটি জীবনীগ্রন্থ যা অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন। এই বইটি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শৈশব স্মৃতি নিয়ে লেখা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির তিনতলা বাড়ি স্মৃতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৪৬ সালে তারা পাবলিশিং এই বইটি প্রকাশ করেছিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নন্দনতত্ত্ব

ডা: সুধীর কুমার নন্দীর লেখা বই হল ‘আর্ট অ্যান্ড এস্থেটিকস অফ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর’। এই বইটির প্রকাশক হল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। বইটি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নান্দনিকতার উপর একটি বিশ্লেষণাত্মক বক্তৃতা উপস্থাপন করেছে, যা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত একটি থিসিসের অংশ ছিল। এই থিসিসটি নন্দনতত্ত্বের একজন ছাত্রের কাছ থেকে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি। সুধীর কুমার নন্দী ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্স স্টাডি সিমলা -তে সিনিয়র সহকর্মী হিসেবে যোগদান করার পর প্রায় কয়েক বছর ধরে এই বইটি লেখার জন্য গবেষণা করেছেন।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী

  • মানুষ হিসেব চায় না, চায় গল্প। হিসেবের দরকার আছে বৈকি, কিন্তু ঐ একটু মিলিয়ে নেবার জন্য, তার বেশি নয়। হিসেবের খাতায় গল্পের খাতায় এইখানেই তফাত। হিসেব থাকে না মনের ভিতরে, ফুটো দিয়ে বেরিয়ে যায়, থাকে গল্প। (ঘরোয়া)
  • ‘অতুল ঐশ্বর্য দিয়ে ভর্তি করা স্মৃতির এই যে গোপন গৃহ এর দ্বারে সেপাই সান্ত্রীর পাহারা নেই। কিন্তু মন্ত্র দিয়ে বন্ধ করা এর প্রবেশ পথ, ভিতর থেকে খোলে দুয়ার এ ঘরের নিজের মনের হুকুমে; বাইরে থেকে খোলে মনের মানুষ যদি যায় তবে।’
  • জগত শুধু মায়া কি শুধু কায়া নিয়ে চলছে না, এই দুইয়ের সমন্বয়ে চলছে।
  • শিল্প হচ্ছে শখ। যার সেই শখ ভিতর থেকে এল সেই পারে শিল্প সৃষ্ট করতে, ছবি আঁকতে, বাজনা বাজাতে, নাচতে, গাইতে, নাটক লিখতে -যাই বলো।
  • আয়নাতে যেমন নিজের নিজের চেহারা তেমনি মনের দর্পণেও আমরা প্রত্যেকে নিজের নিজের মনমতকে সুন্দরই দেখি। কারু কাছ থেকে ধার- করা আয়না এনে যে আমরা সুন্দরকে দেখতে পাবো তার উপায় নেই।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্তমান কালের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাসঙ্গিকতা

আজ অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর শিল্পে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় আদর্শকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। একজন শিক্ষক, ভাষ্যকার এবং লেখক হিসাবে তিনি দেশবাসীর কাছে তাদের অধিকার এবং দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় জর্জরিত অবস্থা, তা পুনরুদ্ধারের সেবায় সারা জীবন বিভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিলেন।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উল্লেখযোগ্য চিত্রকর্ম

  1. ওমর খৈয়াম (জাপানী রীতিতে আঁকা)
  2. শাহাজাদপুরের দৃশ্যাবলী
  3. আরব্যপোন্যাসের গল্প
  4. বসন্তের হিমালয়
  5. কবিকঙ্কন চন্ডী
  6. প্রত্যাবর্তন
  7. শেষযাত্রা
  8. সাজাহান
  9. কৃষ্ণলীলাবিষয়ক চিত্রাবলী
  10. বজ্রমুকুট
  11. ঋতুসংহার
  12. বুদ্ধ
  13. সুজাতা

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রকাশিত গ্রন্থ

  1. শকুন্তলা (১৮৯৫)
  2. ক্ষীরের পুতুল (১৮৯৬)
  3. রাজকাহিনী (১৯০৯)
  4. ভারত শিল্প (১৯০৯)
  5. ভূত পত্রীর দেশ (১৯১৫)
  6. নালক (১৯১৬)
  7. বাংলার ব্রত (১৯১৯)
  8. খাজাঞ্জির খাতা (১৯২১)
  9. প্রিয় দর্শিকা (১৯২১)
  10. চিত্রাক্ষর (১৯২৯)
  11. বসন্তের হিমালয়
  12. বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী (১৯২৯)
  13. বুড়ো আংলা (১৯৪১)
  14. জোড়াসাঁকোর ধারে (১৯৪৪)
  15. আপন কথা (১৯৪৬)
  16. সহজ চিত্র শিক্ষা (১৯৪৬)
  17. ভারত শিল্পের ষড়ঙ্গ (১৯৪৭)
  18. আলোর ফুলকি (১৯৪৭)
  19. ভারত শিল্পে মূর্তি (১৯৪৭)
  20. মাসি (১৯৫৪)
  21. একে তিন তিনে এক (১৯৫৪)
  22. শিল্পায়ন (১৯৫৫)
  23. মারুতির পুঁথি (১৯৫৬)
  24. রং বেরং (১৯৫৮)
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা ক্ষীরের পুতুল
অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা ক্ষীরের পুতুল

কে বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট প্রতিষ্ঠা করেন?

‘বেঙ্গল স্কুল অফ আর্ট’ প্রতিষ্ঠা করেন অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁকে অনুপ্রেরণা ও সক্রিয় সমর্থন করেছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ ইতিহাসবিদ্, শিক্ষক আর্ট প্রশাসক ও গ্রন্থকার আর্নেস্ট বিনফিল্ড হাভেল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর কি ভারত মাতার বিখ্যাত ছবি এঁকেছিলেন?

১৯০৫ সালে ভারতীয় চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা ভারত মাতা একটি বিখ্যাত ছবি। চিত্রটি ছিল ধারণার প্রথম সচিত্র চিত্র এবং বৃহত্তর ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় স্বদেশের আদর্শে আঁকা হয়েছিল।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পেইন্টিংয়ে ভারত মাতাকে কীভাবে চিত্রিত করা হয়েছিল?

ভারত মাতাকে একটি গেরুয়া রঙের পোশাক পরিহিত ঐশ্বরিক নারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। তার চারটি হাতের মধ্যে একটিতে বই, অন্যটিতে ধানের গোছা, আরেকটিতে সাদা কাপড়ের টুকরো এবং অন্য হাতে একটি জপমালা আছে। ছবিটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব বহন করে কারণ এটি ভারত মাতা, বা “মাদার ইন্ডিয়া” এর প্রাচীনতম দৃশ্যের মধ্যে একটি।

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবীন্দ্রনাথের কে ছিলেন?

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাগ্নে।

আপনার কাছ থেকে আরো ৫ সেকেন্ড চাইছি এই আর্টিকেল টি শেয়ার করার জন্য।

One Comment

  1. অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষা জীবন সংক্ষিপ্ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।