পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় পশুর নাম কি ?
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় পশুর (National animal of West Bengal) নাম হল বাঘরোল বা মেছো বিড়াল বা ফিশিং ক্যাট (Fishing Cat)।
পড়ুন:- বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর
পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় পশু মেছো বিড়াল
মেছো বিড়াল – পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় পশু
আমরা সাধারনত যে বিড়াল দেখি মেছো বিড়াল তার থেকে আলাদা, পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় প্রাণী হল ফিশিং ক্যাট, যা বনবিড়াল বা মেছো বিড়াল নামেও পরিচিত। মেছো বিড়াল সাধারণ বিড়ালের আকারের দ্বিগুণ হয়। বৈজ্ঞানিক নাম হল প্রিয়োনাইলিউরাস ভাইভারিনাস (Prionailurus viverrinus)। এদের বেশিরভাগ জলাভূমি, নদী, স্রোত, হ্রদ এবং ম্যানগ্রোভের আশেপাশে দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে ‘মাছবাঘা’ বা ‘বাঘরোল’ নামেও এরা পরিচিত। এই প্রাণীটি ভারতের বিপন্ন প্রজাতির মধ্যে একটি।
মেছো বিড়ালের ওজন ৫ থেকে ১৬ কেজি পর্যন্ত হয়। আকার ৬৫ থেকে ৮৬ সেমি এবং লেজের দৈর্ঘ্য ২৪ থেকে ৩৫ সেমি। কাঁধ প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। উভয় লিঙ্গের মেছো বিড়ালই দেখতে অনেকটা একই রকম, তবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষ মেছো বিড়াল আকারে কিছুটা বড়।
পড়ুন:- সমস্ত ভ্রমণ গন্তব্য গুলি
মেছো বিড়ালের আবাসস্থল এবং আহার
মেছো বিড়াল ঘন বনাঞ্চল এবং জলাভূমি অঞ্চল পছন্দ করে। এদের ছোট ঝোপঝাড়, জলোচ্ছ্বাস ও জলের নিকটে উদ্ভিজ্জ অঞ্চল, জলাভূমি, ম্যানগ্রোভ, নদী এবং স্রোতেও থাকতে দেখা যায়।
জলাভূমি হল ফিশিং ক্যাটের প্রিয় আবাসস্থল। ভারতে, মেছো বিড়াল মূলত সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর উপত্যকায় এবং পশ্চিম ঘাটে হিমালয়ের পাদদেশে পাওয়া যায়। হিমালয়ের বনাঞ্চলে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও মাছধরা বিড়ালের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।
মেছো বিড়ালের খাদ্য হল মাছ, পাখি, ব্যাঙ, পোকামাকড়, ছোট ইঁদুর, খোলকী, সরীসৃপ, শামুক এবং উভচর ইত্যাদি।
পড়ুন:- পশ্চিমবঙ্গের রাজধানীর নাম কি
প্রজনন এবং বিকাশ
ফিশিং ক্যাট এর প্রজননকাল হল জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে। এই সময় মহিলা মেছো বিড়াল পুরুষ বিড়ালকে ডাকের মাধ্যমে ইঙ্গিত দেয়। যৌন পরিপক্কতার বয়স ৯ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে হয়। গর্ভধারণের সময়কাল ৬৩ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। মহিলা বিড়াল ২ বা ৩টি বিড়ালছানার জন্ম দেয়। জন্মের পর বাচ্চাগুলির ওজন প্রায় ১৫০ গ্রাম হয়। তাদের চোখ ১৬ দিনের মধ্যে ফুটে যায়, এরপর এক মাস বয়সে তারা সক্রিয়ভাবে ঘোরাফেরা করতে সক্ষম হয়।
মেছো বিড়ালের জীবনকাল
মেছো বিড়াল প্রায় ৮ থেকে ৯ মাস বয়সে পূর্ণ বয়স্ক আকারে পৌঁছায়। তরুণরা ১২-১৮ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ স্বাধীন হয়। তারা প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত বাঁচতে পারে।
মেছো বিড়ালগুলি ভাল সাঁতারু এবং দীর্ঘ দূরত্বে সাঁতার কাটতে পারে, মাছ শিকার করার জন্য প্রায়ই তারা জলে নেমে থাকে। তাছাড়া তারা ভাল দৌঁড়বাজও, প্রতি ঘন্টা ৫৫ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌঁড়াতে পারে।
বাস্তুতন্ত্র এবং আচরণ
মেছো বিড়ালের দেহ দীর্ঘ খর্ব ও স্থূল, গায়ের রঙ ধূসর হয়। শরীরে কালো বা বাদামী বর্ণের রেখা আছে। এদের মুখটি ছোট চুল দ্বারা আবৃত, স্পষ্ট সমতল নাক ও মুখটি কানের সাথে সম্প্রসারিত থাকে। চোখের রঙ আইরিস সবুজ বর্ণসহ হলদে-বাদামি বর্ণের হয়। এদের লেজটি ছোট (দেহের দৈর্ঘ্যের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ), লেজের উপর কালো গোল দাগ আছে।
ফিশিং ক্যাট নিশাচর এবং নির্জন প্রকৃতির প্রাণী, এরা রাতের খাদ্যের সন্ধানে বের হয় ও দিনেরবেলা ঘন গাছপালার মধ্যে থাকে।
পড়ুন:-
মেছো বিড়াল কি বিপজ্জনক?
মেছো বিড়াল মানুষের পক্ষে বিপজ্জনক নয়। ঘরের বিড়ালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বড় হয়, তারা জনবসতির সীমানা এড়িয়ে চলে। এই বিড়ালের ধারালো দাঁত এবং নখ থাকায় তারা নিজেকে রক্ষা করতেও সক্ষম হয়।
মেছো বিড়াল / বাঘরোলই কেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পশু? রয়েল বেঙ্গল টাইগার কেন নয়?
কয়েক বছর আগে রাজ্য সরকার ফিশিং ক্যাটকে আনুষ্ঠানিকভাবে পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় প্রাণী হিসাবে ঘোষণা করেছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইইউসিএন) ইতিমধ্যে মেছো বিড়ালদের বিপন্ন প্রজাতির বিভাগের অধীনে তালিকাভুক্ত করেছে। ২০১৬ সাল থেকে এটি আইইউসিএন(IUCN) রেড তালিকায় ‘অসুরক্ষিত’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা আছে।
পড়ুন:- ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
পড়ুন:-
- বকখালি ভ্রমণ গাইড
- ৫ দিনের গিরিডি মধুপুর দেওঘর ভ্রমণ গাইড কলকাতা থেকে
- ৩ দিনের বোলপুর শান্তিনিকেতন ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থান এর গাইড
মাছধরা বিড়ালরা কি মানুষকে আক্রমণ করে?
এরা চিতাবাঘের মতো নয়, মেছো বিড়াল সাধারণত মানুষের উপর আক্রমণ করে না।
ফিশিং বিড়াল কী খায়?
মেছো বিড়াল প্রধানত মাছই খায়। তাছাড়াও তারা খোলাত্তয়ালা শামূক খাওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ছোট শিকার যেমন টিকটিকি এবং উভচর উভয়ই খেতে দেখা যায়।
মেছো বিড়াল বলতে কী বোঝায়?
একটি সাধারণ ঘরের বিড়ালের আকারের তুলনায় বড়ো হয়। ফিশিং ক্যাট বা মেছো বিড়াল সাঁতারু এবং নাম দ্বারা বোঝা যায় মাছের শিকারেপারদর্শী । এরা মাছ ধরার জন্য ‘ডুবুরি’ হিসাবেও পরিচিত।
বিড়ালকে বাঘের মাসি বলা হয় কেন ?
বিড়ালকে ‘বাঘের মাসি’ বলা হয় কারণ, বাঘ বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী। বাঘের সঙ্গে কেবল চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যই মেলে তা নয়, প্রায় ৯৫ শতাংশ শারীরিক ও জিনগত মিলও রয়েছে বিড়ালের সাথে।